নানা বাধার কারণে রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব হয়নি: আসিফ মাহমুদ
Published: 2nd, August 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারকে নানাভাবে বাধা দেওয়ায় রাষ্ট্রের যে কাঙ্ক্ষিত আমূল পরিবর্তন, সেটি সম্ভব হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে এক সেমিনারে আসিফ মাহমুদ এ মন্তব্য করেন।
‘রিবিল্ডিং দ্য নেশন: বাংলাদেশ ২.
চতুর্থ প্যানেল আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির খতিয়ান’। এতে অংশ নেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীরা অভ্যুত্থানের পরে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ভঙ্গ করতে চায়নি উল্লেখ করে এর কারণ হিসেবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এর আগে সামরিক শাসনের অভিজ্ঞতা আমাদের জাতির রয়েছে। সবচেয়ে বেশি রয়েছে পাকিস্তান আমলের সামরিক শাসনের অভিজ্ঞতা। সবচেয়ে রিসেন্ট (সাম্প্রতিক সময়ের) রয়েছে এক-এগারোর অভিজ্ঞতা।’ তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘সরাসরি সেই এক-এগারোর মতো কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পারলেও নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে একধরনের বোঝাপড়ার মাধ্যমে এই সরকারকে একটা অথরিটারিয়ান বা ওই ধরনের কর্তৃত্ব দেওয়ার সরকার হিসেবে গড়ে উঠতে বাধা দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা সফল হয়েছে।’
এর একটা বড় কারণ গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন বলে উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এর ফলে যেটা হয়েছে, আমরা যে ধরনের ড্রাস্টিক্যাল চেঞ্জ (আমূল পরিবর্তন) চেয়েছিলাম, সেটা বাস্তবে সম্ভব হয়নি।’
সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি সফল গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমাদের একটা ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি সে সময়কার বাস্তবতায়। তবে সুসংবাদ হচ্ছে, ৫ আগস্ট, আজ থেকে তিন দিন পর আমরা সেই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করার মতো একটা জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি। সেই ঘোষণাপত্রকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার একটা ঐকমত্যে রাজনৈতিক দল, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আমরা আসতে পেরেছি। এটা একটা সুসংবাদ।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। সেটাও মোটামুটি চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে আছে। তিনি বলেন, ‘পদ্ধতিগত কিছু বিষয় নিয়ে মতানৈক্য আছে, সেগুলোতে যদি রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে, তাহলে আশা করি ৮ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ, যেটা আমরা বলছি জুলাই চার্টার, সেটার বিষয়ে একটা চূড়ান্ত ঘোষণা, চূড়ান্ত একটা বোঝাপড়ায় আসা সম্ভব হবে।’
আসিফ মাহমুদ বলেন, এই সনদ বাস্তবায়নে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল গণভোটের কথা বলছে, কেউ কেউ গণপরিষদের কথা বলছে, সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন করার কথা বলছে। কেউ কেউ বলছে নির্বাচিত সরকারের ওপর বা তাদের সদিচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা। সে বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে সরকারের এই উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
গণ-অভ্যুত্থানের পরে মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্ম যারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। যার ফলে আমরা যেকোনো রাজনৈতিক দল বা যেই ক্ষমতায় আছে তার উইল থাক বা না থাক, তাকে প্রভাবিত করার মতো রাজনৈতিক সচেতন জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে।’
সেমিনারে চতুর্থ প্যানেল আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক মো. তারিকুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ। প্যানেল আলোচনা পরিচালনা করেন প্ল্যাটফর্মটির সাধারণ সম্পাদক হাসান ইমাম।
এর আগে সকালে তিনটি প্যানেল আলোচনা হয়েছে। প্রথম প্যানেল আলোচনার বিষয় ছিল ‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি: সংকট ও সম্ভাবনা।’ তাতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। দুপুরে দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনার বিষয় ছিল ‘ইন্টেরিম, গণকবরে কারা?’ এতে জুলাই শহীদের পরিবারের সদস্য, কবি, সাংবাদিক, অধিকারকর্মীরা। তৃতীয় প্যানেল আলোচনার বিষয় ছিল ‘সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন: কোন পথে বাংলাদেশ?’ এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন। সর্বশেষ প্যানেল আলোচনার বিষয় ছিল ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী সাংস্কৃতিক রাজনীতি’।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র জন ত ক উপদ ষ ট ঐকমত য উল ল খ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিয়ে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এবি পার্টির চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মজিবুর রহমান বলেছেন, ‘সংবিধান পরিবর্তন, সংস্কার, সংশোধন, নতুন করে লেখা বা বাতিলের চূড়ান্ত ক্ষমতা জনগণের। আমরা ঐক্যবদ্ধ মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরি করেছি, হয়তো কয়েকটি বিষয়ে কারও কারও “নোট অব ডিসেন্ট” (দ্বিমত) আছে। কিন্তু চূড়ান্ত কোনটা হবে, তা নির্ধারণের মূল ক্ষমতা জনগণের।’
কমিশনের আজকের প্রস্তাবে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদকে রেফারেন্স আকারে উল্লেখ করায় কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও নেতা জুলাই ঘোষণাপত্রের বৈধতা নিয়ে মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে এবি পার্টির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে যাঁরা আজ প্রশ্ন তুলছেন, কাল তাঁরা সংসদে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবেন এবং এই সনদকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কী?
এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হক বলেন, সংবিধানে এটা নেই, ওটা নেই বলে সংবিধান সংস্কার করা যাবে না—এই ধারণা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাপরিপন্থী। রাজনৈতিক দলগুলো যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান থেকে নমনীয় না হয়, তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পুরো প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়বে।
আশঙ্কা প্রকাশ করে এবি পার্টির এই নেতা বলেন, এমন পরিস্থিতি জাতিকে এক গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেবে। সুতরাং জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি; অন্যথায় গণভোট ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
আরও পড়ুনবর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ৪ ঘণ্টা আগে