ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে আরো ৬৮ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই খাদ্য সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন।

রবিবার (৩ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

শনিবার (২ আগস্ট) ভোর থেকে শুরু হওয়া হামলায় কমপক্ষে ৬৮ জন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে জানায় সংবাদমাধ্যমটি। নিহতদের মধ্যে ৩৮ জন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত স্থানে ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে প্রাণ হারান। বিতর্কিত এই সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি: কানাডার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুুঁশিয়ারি

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

জিএইচএফ তাদের কার্যক্রম শুরু করে মে মাসের শেষ দিকে। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত জাতিসংঘ-নেতৃত্বাধীন মানবিক সহায়তা ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়।

এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই জিএইচএফ-এর সহায়তা কেন্দ্রে খাদ্য সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটছে। গত সপ্তাহে ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছিল, মানবিক সহায়তার প্রবাহ অব্যাহত রাখতে তারা প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় হামলায় 'কৌশলগত বিরতি' দেবে।

এই বিরতির ঘোষণার পর ২৭ জুলাই থেকে তা কার্যকর হয়। তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, শুধু বুধবার ও বৃহস্পতিবারেই খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১০৫ জন ফিলিস্তিনি।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ নিতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, একই সময়ে অপুষ্টি ও অনাহারে আরো ১৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৯৩ জন শিশু।

গাজার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সহায়তা নেওয়ার সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তিতে থাকা মার্কিন কন্ট্রাক্টরদের গুলিতে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে সাম্প্রতিক সময়ে জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, স্পেন, জার্মানি ও ফ্রান্স বিমান থেকে ত্রাণ সরবরাহ করছে। তবে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএসহ বিভিন্ন মানবিক সংগঠন বলছে, আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ অপ্রতুল এবং স্থলপথে সহায়তার প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার মাত্র ৩৬টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে, অথচ মানবিক প্রয়োজনে প্রতিদিন অন্তত ৬০০টি ট্রাক প্রয়োজন।

একইদিনে খান ইউনিসে ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদর দপ্তরে ইসরায়েলি হামলায় একজন কর্মী নিহত এবং আরো তিনজন আহত হয়েছেন। সংস্থাটির পক্ষ থেকে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, হামলায় ভবনের প্রথম তলায় আগুন ধরে যায়।

গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খোদারি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক ত্রাণ সরবরাহ পরিস্থিতি পরিবর্তন আনতে পারেনি। বাজারে খাবার প্রায় নেই, যা সামান্য পাওয়া যায় তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বাধ্য হয়ে বহু মানুষ জীবন ঝুঁকিতে ফেলে খাদ্য সংগ্রহ করছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ম নব ক স ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক

গাজায় দুর্ভিক্ষের অংকটা সহজ। ফিলিস্তিনিরা তাদের এলাকা ছেড়ে যেতে পারছে না, যুদ্ধের ফলে কৃষিকাজ বন্ধ হয়ে গেছে এবং ইসরায়েল মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। তাই তাদের জনসংখ্যার প্রায় প্রতিটি ক্যালোরি বিদেশ থেকে আনতে হবে।

ইসরায়েল জানে কত খাবার প্রয়োজন। তারা কয়েক দশক ধরে গাজায় ক্ষুধা নির্ণয় করে আসছে, প্রাথমিকভাবে দুর্ভিক্ষ এড়িয়ে চাপ সৃষ্টি করার জন্য খাবারের চালান গণনা করছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্টের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ২০০৬ সালে বলেছিলেন, “ধারণাটি হল ফিলিস্তিনিদের খাদ্যতালিকাকে রাখা, কিন্তু তাদের ক্ষুধায় মারা যাওয়া নয়।” 

দুই বছর পর ইসরায়েলি আদালত সরকাররি পরিকল্পনার সেই ভয়াবহ  বিবরণী প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল।

ইসরায়েলি সংস্থা কোগাট, যারা এখনো গাজায় সাহায্য পাঠায়, তারা হিসাব করে জানিয়েছিল, প্রতিদিন গড়ে এক জন ফিলিস্তিনির সর্বনিম্ন ২ হাজার ২৭৯ ক্যালোরির প্রয়োজন, যা ১ দশমিক ৮৩৬ কেজি খাবারের মাধ্যমে সরবরাহ করা যেতে পারে।

বর্তমানে গাজায় মানবিক সংস্থাগুলো এরচেয়েও কম ন্যূনতম রেশনের দাবি জানাচ্ছে। দারা প্রতি মাসে ২১ লাখ মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে ৬২ হাজার মেট্রিক টন শুকনো এবং টিনজাত খাবার, অথবা প্রতিদিন প্রতি ব্যক্তির জন্য প্রায় ১ কেজি খাবার চাচ্ছে।

কোগাটের রেকর্ড অনুসারে, মার্চ থেকে জুনের মধ্যে ইসরায়েল কেবল ৫৬ হাজাজর টন খাদ্য ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে দিয়েছে, যা সেই সময়ের জন্য গাজার ন্যূনতম চাহিদার এক-চতুর্থাংশেরও কম।

জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা চলতি সপ্তাহে জানিয়েছেন, গাজায় এখন ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির’ দুর্ভিক্ষ দেখা দিচ্ছে। ‘সরবরাহের প্রবেশের উপর কঠোর বিধিনিষেধ’ থাকা সত্ত্বেও, খাদ্য সরবরাহ ‘প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম’ পর্যায়ে রয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইসরায়েলের সরকার জানে গাজার জনগণের বেঁচে থাকার জন্য কতটা খাবার প্রয়োজন এবং কতটা খাবার ওই অঞ্চলে যায়।অতীতে অনাহার এড়াতে কতটা খাবার প্রয়োজন তা গণনা করার জন্য এই তথ্য তারা ব্যবহার করত। গাজার প্রয়োজনীয় ক্যালোরি এবং মার্চ মাস থেকে যে খাবার প্রবেশ করেছে তার মধ্যে বিশাল ব্যবধান স্পষ্ট করে দেয় যে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আজ ভিন্ন হিসাব করছেন। তারা এই মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের জন্য অন্য কারো উপর দায় চাপাতে পারে না এবং তাদের মিত্ররাও তা করতে পারে না।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরস্ত্রীকরণে সম্মতির খবর নাকচ: হামাস বলল, দখলদারির মোকাবিলা জাতীয় ও আইনি অধিকার
  • ফ্লাইট এক্সপার্ট বন্ধ, মালিক ও কর্মকর্তার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
  • ক্ষুধায় গাজার শিশুর মৃত্যু আর ইসরায়েলি টিভির রান্নার অনুষ্ঠান
  • ত্রাণ সংগ্রহকারী ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে সাইলেন্সারযুক্ত অস্ত্র ব্যবহার করছে ইসরায়েল
  • হ‌বিগ‌ঞ্জের শাহজীবাজার কেন্দ্রে আগুন, ১৫ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
  • যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ আসবে
  • গাজায় ত্রাণ নেওয়ার কয়েক মিনিট পর হত্যা করা হয় ক্ষুধার্ত শিশুটিকে: সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা
  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক