মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত রুই-কাতলা ধরা পড়ছে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 4th, August 2025 GMT
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘‘নিয়মিত অভিযানে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত রুই-কাতলাগুলো ধরা পড়ছে না। ওই পুঁটি আর ট্যাংরা, এইগুলো ধরা পড়ছে।’’
সোমবার (৪ আগস্ট) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘সাধারণত বৈঠকে আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করি। ‘আইনশৃঙ্খলা’ শুনতে দুইটি ওয়ার্ড মনে হলেও এর ব্যাপ্তি অনেক বড়। এজন্য এমন কোনো কিছু নেই, যা আলোচনার ভেতরে আসে না। মোটামুটি দেশের সব কিছুর ব্যাপারে আলোচনা হয়, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। ভবিষ্যতে কি ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে এই ব্যাপারেও আলোচনা হয়।’’
আরো পড়ুন:
৫ আগস্ট নিয়ে শঙ্কা না থাকলেও সতর্ক সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
‘সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৬৫ উপজেলায় স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শুরু হবে’
তিনি বলেন, ‘‘বিশেষ করে আমরা মাদকের ওপরে বেশি জোর দেই। যেহেতু মাদক আমাদের দেশে একটা বড় ধরনের সমস্যা। এটার জন্য আমরা সবসময় বেশি জোর দেই।’’
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘‘গত বছরের ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার চলে যাওয়ার পরে, মানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ওই সময় যে রকম ছিল, আজকে ৪ আগস্টে এইটা কি উন্নতি হয়েছে? কি হয়নি? এটা আপনারা আমাদের থেকে আরো ভালো বলতে পারবেন। আমরা যে সময় এই দায়িত্ব নেই, সেই সময় আমাদের পুলিশ বাহিনীর পরিস্থিতি কি ছিল? অন্যান্য বাহিনীর অবস্থাটা কি ছিল এবং দেশের অবস্থাটা কি ছিল? ওর থেকে কি উন্নতি হয়েছে কি হয়নি এটা আপনারা বলেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন আপনারা বলছেন যে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়েছে কি হয়নি, এরপর? ওইরকম একটা উন্নতি হয় তো আমরা করতে পারিনি। আর আমি একটা কথা সবসময় বলি, আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৪ বছর। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে খুব ভালো, এই ৫৪ বছরে আমাদের কোনো মিডিয়ায় বা কোনো কিছুতে বা সাধারণ পারসেপশন আছে কোথাও? যে আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো।’’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘ওই (উন্নত দেশের) স্ট্যান্ডার্ডে আমরা কোনো সময় যেতে পারিনি। আমরা দোয়া করব, আমরা না পারি ভবিষ্যতে যারা আসবেন তারা যেন পারে। আমরা স্ট্যান্ডার্ড দিতে পারি। তবে আমরা আমাদের লেভেলে থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি যতটা উন্নতি করা যায়।’’
নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন যে সময় হবে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন ভালো থাকে এ জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর আগেও, আমরা বলেছি যে আমরা কিন্তু ট্রেনিং করাচ্ছি এবং সরকারও ফোর্সের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য স্যাংশন দিয়ে দিয়েছে।’’
রাজনৈতিক কোনো দলকে পুলিশ বেশি প্রোটেকশন দিচ্ছে, কোনো দলকে কম এমন অভিযোগ উঠছে। সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমরা সবাইকে সমান প্রোটেকশন দিচ্ছি। এই জন্য যে বেশি ভালনারেবল তার একটু বেশি প্রোটেকশন দেওয়া হয়। যে একটু কম ভালনারেবল তাদের একটু কম প্রোটেকশন দেয়। যেমন- আপনারা আল্লায় দিলে কেউ ভালনারেবল না, আপনার কোনো প্রোটেকশন দরকার হয় না।’’
ভালনারেবল সিদ্ধান্তটা কীভাবে হয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘এটা তো বিভিন্ন এজেন্সি আছে, প্লাস আপনারও বলেন এই এলাকাটা ভালনারেবল। আপনাদের থেকে এই ইনফরমেশন পায়।’’
এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাজীব
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট প র ট কশন দ পর স থ ত আম দ র আগস ট আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।