অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, গণমাধ্যম কার্যালয়গুলোতে মব তৈরি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের এক বছরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ মূল্যায়ন তুলে ধরেছে টিআইবি। আজ সোমবার সকালে ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে টিআইবি বলছে, সাংবাদিক, লেখক ও মানবাধিকারকর্মীদের ওপর হামলা ও হয়রানির ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে ৪৯৬ জন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২৬৬ জনকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান–সংক্রান্ত হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। তিনজন সাংবাদিক দায়িত্ব পালনকালে হামলায় নিহত হয়েছেন (আগস্ট ২০২৪ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত)।

টিআইবি বলছে, এ পর্যন্ত ২৪ জনের বেশি গণমাধ্যমকর্মীকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে; ৮টি সংবাদপত্রের সম্পাদক এবং ১১টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের বার্তা প্রধানকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং অন্তত ১৫০ জন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গণমাধ্যম কার্যালয়গুলোতে মব তৈরি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও টিআইবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। টিআইবি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি।

টিআইবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নিয়ে সরকারের বিতর্কিত কার্যক্রম তিন দফায় ১৬৭ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে তথ্য কমিশন কার্যকর করা এবং তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের উদাসীনতার বিষয়টিও তুলে ধরেছে টিআইবি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র ট আইব

এছাড়াও পড়ুন:

জাবিতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়নের দাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও অভ্যন্তরীণ মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন।

দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’ কার্যকর থাকলেও জাবি তা অনুসরণ না করে নিজস্ব নীতিমালায় বেতন-নিয়োগ পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা বৈষম্যমূলক দাবি করে সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হল এবং অভ্যন্তরীণ তিনটিসহ মোট ১৩টি মসজিদ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সাতটি হল মসজিদে একজন মুয়াজ্জিন নিয়োগ দিয়ে তাকে ইমামতি, মুয়াজ্জিন, জুমার নামাজ পড়ানো ও মসজিদ পরিষ্কার করাসহ সব কাজ করানো হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

জাবিতে নির্মাণ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’

২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ‘মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’ অনুযায়ী গেজেটে ইমামদের বেতন নবম গ্রেড  থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ গ্রেড, পেশ ইমাম পদে ষষ্ঠ গ্রেড থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ গ্রেড এবং সিনিয়র পেশ ইমাম পদে পঞ্চম গ্রেড থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ষষ্ঠ গ্রেড কার্যকর আছে।

অন্যদিকে, মুয়াজ্জিনদের জন্য ১১তম গ্রেডের বেতন স্কেল নির্ধারিত রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৬ গ্রেডে তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। আবার নতুন তিনটা হলে ১৮ গ্রেডে দেওয়া হচ্ছে বেতন, যা গেজেটের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। 

সংশ্লিষ্টদের দাবি, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এসেও এমন বৈষম্য কখনোই প্রত্যাশিত ছিল না। সরকারি গেজেটের নির্দেশনা মেনে মুয়াজ্জিনদের বেতন স্কেল যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হলে ধর্মীয় কাজের প্রতি মানুষের আস্থা কমতে পারে এবং মুয়াজ্জিনদের কর্মপ্রেরণাও হ্রাস পাবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররক হোসেন হল মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ আবু সাইদ বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন থেকেই এ বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছি। এ পর্যন্ত ছয়বার আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু প্রত্যেকবারই আমাদের নানা অজুহাত দেখিয়ে এ বিষয়টি বিলম্বিত করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “ঢাবি, বুয়েট, চবি, শাবিপ্রবি, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন কাঠামো ২০০৬ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরই এটি নিয়ে উদাসীনতা প্রদর্শন করে আসছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম ড. মাহমুদুল ইসলাম ইউসুফ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্থগিত স্থবিরতা বিদ্যমান ছিল। এক ইমামের পদে একজন সহকারী ইমামকে নিয়োগ দিয়ে তাকে দিয়েই ইমামতি, মুয়াজ্জিন ও মসজিদ পরিষ্কার করাসহ সব কাজ করানো হচ্ছিল। আমরা চাচ্ছি, আমাদের জন্য ২০০৬ সালের গেজেট অনুসারে নিয়োগ এবং বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে দেওয়া হলে আমাদের সঙ্গে হওয়া বৈষম্য দূর হবে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “মুয়াজ্জিনদের বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আমরা সচেতন। বিষয়টি আমরা পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করব এবং সরকারি গেজেট অনুযায়ী বেতন কাঠামো পুনর্বিবেচনার চেষ্টা করব। তবে এবারের সিন্ডিকেট সভার এজেন্ডায় এটি অন্তর্ভুক্ত হয়নি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদগুলোতে ইমাম নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইমাম নিয়োগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে জনবল নিয়োগের জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি।” 

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিপি ‘কিংস পার্টি’, তাদের দুজন সরকারে: টিআইবির নির্বাহী পরিচালক
  • আইনের সংস্কার দূরে থাকুক, এ পর্যন্ত তথ্য ও মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়নি: ইফতেখারুজ্জামান
  • অনবদ্য গানে অমর কিশোর কুমার
  • জাবিতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়নের দাবি
  • চবি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশায় ছাত্র সংসদ