শ্রীপুরে টেঁটা দিয়ে খুঁচিয়ে যুবককে নির্যাতনের অভিযোগ
Published: 7th, September 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরে পরকীয়া প্রেমের অভিযোগ তুলে ওবায়দুল্লাহ (৩২) নামে এক যুবককে টেঁটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীর ভাষ্য, নির্যাতনকারীরা তার কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পুরো টাকা না দেওয়ায় তার মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয় তারা।
আরো পড়ুন:
বান্দরবান পুলিশ লাইনে কর্মরত কনস্টেবলের মৃত্যু
বরগুনায় ঘর থেকে স্ত্রীর গলাকাটা ও স্বামীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভুক্তভোগী শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। গত শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের পাবুরিয়ারচালা গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
ভুক্তভোগী ওবায়দুল্লাহ একই গ্রামের মৃত শহিদুল্লাহর ছেলে এবং পেশায় মুদি দোকানী।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওবায়দুল্লাহ গ্যাস সিলিন্ডার আনতে পাশের বাজারে যাচ্ছিলেন। এ সময় অভিযুক্ত মো.
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ওবায়দুল্লাহ বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমি গ্যাস সিলিন্ডার আনতে পায়ে হেঁটে পাশের বাজারে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ অভিযুক্তরা এসে আমাকে ঝাপটে ধরে পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে তারা এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে এবং বলতে থাকে- তুই অমুক নারীর সঙ্গে পরকীয়া করছিস, সে আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “এরপর লোহার রড দিয়ে আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে আমার মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলে নির্যাতন চালায়। মাছ ধরার টেঁটা দিয়ে খুঁচিয়ে আমার দুই পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে তারা। এমনকি ধারালো ছুরিও ব্যবহার করে আমাকে গুরুতরভাবে জখম করা হয়।”
ওবায়দুল্লাহ বলেন, “একপর্যায়ে নির্যাতনকারীরা এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। স্বজনদের ফোন করলে আমার বৃদ্ধ মা ও ছেলে ঘটনাস্থলে আসে। তাদের সামনেই আমাকে আবারো টেঁটা দিয়ে আঘাত করা হয়। এরপর মাকে জিম্মি করে বাড়িতে নিয়ে যায় এবং টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। মা ১০ হাজার টাকা জোগাড় করে অভিযুক্ত শহিদ মিয়ার হাতে তুলে দেন। বাকি টাকার জন্য তারা আমার মোটরসাইকেল নিয়ে যায় এবং অলিখিত তিনটি জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। ওরা সবাই এলাকায় পরিচিত মাদক কারবারি।”
ভুক্তভোগীর মা ফরিদা বেগম বলেন, ‘‘আমার সামনেই ছেলেকে মুখ বেঁধে টেঁটা দিয়ে খুঁচিয়েছে। ওদের থামাতে পারিনি। শেষে টাকা ও মোটরসাইকেল নিয়ে ছেলেকে ফেলে যায়। শরীরে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আঘাত করা হয়নি।’’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রেজাউল করিমের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল বারিক বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। দ্রুত মোটরসাইকেল উদ্ধারের পাশাপাশি আইনগত সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/রফিক/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে গতকাল সোমবার বাসায় ফিরছিলেন নাজমা বেগম। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় থাকেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ ফোন করে জানান, তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন নাজমা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখান নাজমাকে। সে ভিডিওতে দেখতে পান, তাঁর ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
ছেলের খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ৮ দিন ধরে ভর্তি আবদুল্লাহ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার আবদুল্লাহর জ্ঞান ফেরে। এরপর নিজের ও বাবা-মায়ের নাম আর বাসার ঠিকানা জানায় সে।
চিকিৎসকেরা সেই সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে খোঁজ চাওয়া হয় বাবা-মায়ের। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখেন নাজমা বেগম। এরপর ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালে এসেই নার্সদের সহায়তায় যান নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহকে দেখেন।
আজ বিকেলে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় আবদুল্লাহর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। সকালেই চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন তিনি। জানালেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ ও আরেক ছেলের বয়স দুই। আবদুল্লাহ সুস্থ আছে জেনে স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ, এটিই প্রথমবার নয়, এর আগেও কয়েকবার ঘর থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় সে।
নাজমা বেগম বলেন, প্রায়ই আবদুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এদিক–সেদিক চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও ঢাকার আশপাশে এদিক-সেদিক চলে গিয়েছিল সে। ৬ সেপ্টেম্বর সে ভাত খাওয়া থেকে উঠে হঠাৎ চলে যায়। সে ফিরে আসবে এই আশায় থানায় যাননি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় এদিক–সেদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ঢাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে গেছেন বলে জানান নাজমা।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে জানান, বাসা থেকে বেরিয়ে সে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চট্টগ্রামে ট্রেন থামলে সে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন সুস্থ হয়ে উঠছে সে।
চিকিৎসকেরা জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয় তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তার মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে। হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
শুরু থেকে আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে চলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবে সেটি জোড়া দেওয়া হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আমরা আজ-কালের মধ্যে ডিসচার্জ করে দেব। শিশুকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’