সুনামগঞ্জের ধোপাজান (চলতি) নদে স্থায়ীভাবে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে চারটি মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা ১৭ ব্যক্তিকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।

আজ বুধবার বেলার আইনজীবী জাকিয়া সুলতানা এ চিঠি দেন। চিঠিতে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ধোপাজান নদ থেকে বালু, পাথর ও বালুমিশ্রিত পাথর উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী আইনজীবী শাহ শাহেদা আক্তার চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত মাসে ‘লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ধোপাজান নদ থেকে এক কোটি ২১ লাখ ঘনফুট বালু (বিটি বালু) উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ওই প্রতিষ্ঠান সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চলমান কাজে ওই বালু ব্যবহার করবে বলে জানানো হয়। এটি জানাজানি হওয়ার পর সুনামগঞ্জে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোকজন নদে বালু লুটের আশঙ্কা করছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত ২৬ আগস্ট ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি পোস্ট দিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়।

বেলার পক্ষ থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার; জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের (সওজ) প্রধান প্রকৌশলী, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক, সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা অংশীদারকে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ওপর দিয়ে প্রবাহিত ধোপাজান (চলতি) নদ থেকে বালু, পাথর ও বালুমিশ্রিত পাথর উত্তোলন বন্ধ এবং নদের প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংরক্ষণ ও নদ এলাকায় বসবাসরত মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় বেলা ২০১৩ সালে একটি জনস্বার্থমূলক মামলা (নং-৭৪৩১/২০১৩) করে। মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে ওই বছরের ২২ জুলাই হাইকোর্ট ধোপাজান নদ থেকে বালু, পাথর ও বালুমিশ্রিত পাথর উত্তোলন কেন আইনবহির্ভূত ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না এবং কেন নদটি সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে বিবাদীদের রুল জারি করেন। একই সঙ্গে আদালত আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নদের ক্ষতিসাধনের জন্য ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ও আদায় করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা-ও জানতে চান। নদ থেকে ড্রেজার ও এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেন।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আইনি নিষেধাজ্ঞা ও নদ থেকে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন থেকে ধোপাজান নদের দুই তীর থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন অব্যাহত আছে। নদের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রতারগাঁও, সোনাপুর, আদাং অংশে পাড় কেটে বালু-পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে বেড়িবাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং বাঁধটি সরু দেয়ালের আকার ধারণ করেছে। এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে ভারী বৃষ্টিতে যেকোনো সময় বাঁধটি ভেঙে যেতে পারে। নদের তীরবর্তী ২০-২৫টি গ্রামের বসতবাড়ি, ফসলি জমি নষ্ট ও বিদ্যালয় বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জ সদর অংশের কাইয়ারগাঁও গ্রামের অর্ধেক নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

চিঠিতে বলা হয়, নদের প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও ভাঙনের ঝুঁকি আমলে না নিয়ে আইন ও আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে সম্প্রতি ধোপাজান নদ থেকে বালু উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ‘সাউথ এশিয়ান সাব–রিজিওনাল কো-অপারেশন (সাসেক) প্রকল্পের’ আওতায় ঢাকা-সিলেট করিডর সড়ক উন্নয়নকাজের জন্য নদ থেকে বালু উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে নদের অক্ষয়নগর, রামপুর, রতারগাঁও মৌজা থেকে ১ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার ১২৯ ঘনফুট মাটি ও বালু উত্তোলনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিংকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ অনুমতি দেওয়ায় নদকে আরও অস্তিত্ব সংকটে ফেলে ধ্বংসাত্মক কাজকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

বেলার পক্ষ থেকে দেওয়া চিঠিতে ধোপাজান নদ ও নদতীরবর্তী জনবসতির সংকটাপন্ন অবস্থা বিবেচনায় এই বালু উত্তোলনের অনুমোদন বাতিলের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশ প্রতিপালন সাপেক্ষ এই নদ থেকে বালু, পাথর এবং বালুমিশ্রিত পাথর উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ করে নদ ও নদের তীরে থাকা জনগণের সম্পদ রক্ষার অনুরোধ জানানো হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ধ প জ ন নদ থ ক স ন মগঞ জ র অন র ধ ব যবস থ পর ব শ বন ধ র

এছাড়াও পড়ুন:

দৌলতদিয়ায় ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে পন্টুনের কবজা, যানবাহন পারাপার ব্যাহত

তীব্র স্রোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ৩ নম্বর পন্টুনের কবজা। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ঘাটটি। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

বর্তমানে দৌলতদিয়ায় শুধু ৪ নম্বর ঘাট চালু আছে। এতে যানবাহন পারাপারে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে এবং সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজটের।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় ও ঘাট-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে পদ্মায় তীব্র স্রোত দেখা দেয়। সন্ধ্যার পর এর তীব্রতা আরও বাড়ে। রাত ১১টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা রো রো ফেরি শাহ পরান দৌলতদিয়ায় পৌঁছে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারায় ফেরিটি প্রচণ্ড বেগে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুনে ধাক্কা দিলে কবজা ভেঙে যায়। এর পর থেকে ঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এর আগে ২৩ আগস্ট থেকে তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটও বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে চারটি ঘাটের মধ্যে কেবল ৪ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী পরিবহন এবং জরুরি কিছু পণ্যবাহী গাড়ি পার করা হচ্ছে। তবে সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে।

দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্টে (৩ নম্বর ঘাট) দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটিসির নিরাপত্তা পরিদর্শক ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া বলেন, গতকাল রাতে ফেরি শাহ পরান ঘাটে ভেড়ার সময় প্রচণ্ড ধাক্কায় পন্টুনের কবজা ভেঙে যায়। তখন থেকে ঘাটটি বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কয়েক দিন ধরে সড়ক অবরোধ করা হচ্ছে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থেকে অনেক গাড়ি দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এ কারণেও দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় গাড়ির চাপ পড়ছে। আজ মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়া প্রান্তে প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা গাড়ির লাইন তৈরি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির লাইন আরও লম্বা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় চালকসহ যাত্রীদের বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সৌহার্দ্য পরিবহনের ঘাট তত্ত্বাবধায়ক মনির হোসেন বলেন, ‘শুধু একটি ঘাট চালু থাকায় যানবাহন স্বাভাবিকভাবে পার হতে পারছে না। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ঢাকামুখী গাড়ি আটকে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে। আমাদের চারটি যাত্রীবাহী বাস চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে আছে। বাসগুলো ফেরিতে উঠতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লাগছে।’

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে অনেক বেশি সময় লাগছে। গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন শুধু ৪ নম্বর ঘাট চালু রয়েছে। যাত্রীবাহী বাস ও কিছু জরুরি গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে। সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি আপাতত পার করা যাচ্ছে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভাঙ্গায় আন্দোলন: দৌলতদিয়ায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি
  • দৌলতদিয়ায় ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে পন্টুনের কবজা, যানবাহন পারাপার ব্যাহত