জাতীয় পতাকার দণ্ডে জুতা উত্তোলন, যুবক আটক
Published: 11th, October 2025 GMT
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে জাতীয় পতাকার দণ্ডে জুতা উত্তোলনের অভিযোগে মিরাজ (১৮) নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যার পরে তাকে আটক করা হয়।
মিরাজ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ মিরাজকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
একই ওড়নায় ঝুলছিল স্বামী-স্ত্রীর লাশ
স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের পতাকার দণ্ডে জুতা উপরে তোলার ৩২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় এক যুবক জাতীয় পতাকার দণ্ডে জুতা উত্তোলন করছেন। তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আরো তিন-চারজন যুবক।
এ বিষয়ে জানতে সর্বানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের মোবাইলে ব্যবহৃত নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘‘আটক মিরাজের ভাষ্য, তিনি পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে ভিডিওটি করেছিলেন। তবে, কেন এমন কাজ করেছিলেন জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’
ঢাকা/মাসুম/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গাইবান্ধায় জনবল সংকটে অ্যানথ্রাক্সের টিকাদান ব্যাহত
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৮ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) থেকে নতুন করে কেউ উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসেনি।
অ্যানথ্রাক্স হলো, ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামের স্পোর গঠনকারী ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট একটি সংক্রমণ। প্রাণি থেকে এ রোগ মানুষে ছড়ায়। যে প্রাণিরা জাবর কাটে, যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া—এরা অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত পশু থেকে ও দূষিত পশুজাতপণ্য থেকে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। অ্যানথ্রাক্স সাধারণত প্রাণি থেকে প্রাণিতে বা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।
আরো পড়ুন:
শরীয়তপুরে ৪ লাখ শিশু টাইফয়েড টিকা পাবে: সিভিল সার্জন
ফরিদপুরে ৫ লাখ ২৮ হাজার শিশু পাবে টাইফয়েডের টিকা
সুন্দরগঞ্জে মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ বৃদ্ধির পাশাপাশি গবাদি পশুর মৃত্যু যখন বাড়ছে, ঠিক তখন গবাদি পশুর টিকাদানে ধীরগতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪ হাজার গবাদি পশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে। চাহিদা তিন লাখ থাকলেও বরাদ্দ এসেছে মাত্র ২৮ হাজার ৯০০। পশুর মালিক ও খামারিরা এ কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় গরু, ছাগল, ভেড়াসহ গবাদি পশু রয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৬০৮টি। এর মধ্যে গরু ১ লাখ ৩৭ হাজার। ছাগল ও ভেড়া আছে ১ লাখ ৬০ হাজার। গবাদি পশুর তুলনায় টিকা দেওয়া হয়েছে খুবই কম। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় ১৩টি গবাদি পশু মারা গেছে। যদিও কৃষক, খামারি ও স্থানীয়দের ভাষ্য, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গত এক মাসে প্রায় শতাধিক গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) রোগের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে বেলকা ইউনিয়নে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর এই ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে মাহাবুর রহমানের একটি রোগাক্রান্ত গরু জবাইয়ের পরই মূলত একযোগ ১১ জন অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হন। এরপর রোগাক্রান্ত ছাগল জবাই করে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলায়। এরপর মূলত নড়েচড়ে বসে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
দক্ষিণ বেলকা গ্রামের খামারি জামিল রহমান বলেন, ‘‘গত মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আমাদের এলাকায় পশুর টিকা দেওয়া হয়। টিকার সরবরাহ কম বলে অনেকের পশু বাদ পড়েছে। আমার নিজের ছোট-বড় ৫টি গরুকে টিকা দিতে খরচ হয়েছে ১০০ টাকা। যদিও প্রতিটি ভ্যাক্সিনের দাম ৮০ পয়সা করে হলে আমার ব্যয় হওয়ার কথা ৪ টাকা।’’
একই ইউনিয়নের খাজা বেপারী বলেন, ‘‘হাট থেকে কেনা ৪টি গরুর মধ্যে একটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয় গরুর চিকিৎসককে ১২০ টাকা দিয়ে টিকা দিয়েছি। পরে শুনেছি, এ সব টিকা ৮০ পয়সায় দিচ্ছে সরকার।’’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দে বলেন, ‘‘মাত্র পাঁচজন দিয়ে টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চলায় তা ব্যাঘাত ঘটছে। পার্শ্ববর্তী সাদুল্লাপুর উপজেলা থেকে দুইজন মাঠ কর্মীকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের সমন্বয়ে প্রতিটি ইউনিয়নে ক্যাম্পেইন করে টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে টিকার সংকট থাকলেও বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ২ লাখ ৫০ হাজার টিকা পাওয়া গেছে।’’
টিকা প্রদানে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘৮০ পয়সার বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। বাজারে খুচরা পয়সা না থাকার অজুহাতে অনেকে টিকার দাম ১০/২০ টাকা বেশি নিয়েছে। যেটা অন্যায়।’’
বিপ্লব কুমার দে আরো বলেন, ‘‘অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জন্য গত বুধবার (৮ অক্টোবর) উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের আমজাদ হোসেন নামে এক স্বেচ্ছাসেবীকে কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’’ বর্তমানে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও তিনি জানান।
গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডা. মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ‘‘অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা রোগের সংক্রমণ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। মারা যাওয়া গরু মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। আক্রান্ত গরু জবাই না করে চিকিৎসা দিতে হবে। ব্যাকটেরিয়া চলে গেলে সংক্রমণ কমে যাবে। সুতরাং আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’’
গাইবান্ধা আঞ্চলিক প্রাণী রোগ অনুসন্ধান ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘মৃত পশুর নমুনা পরীক্ষা করে দুটি গরুর শরীরে অ্যানথ্রাক্স জীবাণু পাওয়া গেছে। অসুস্থ পশু যাতে কেউ জবাই না করে, সেই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’’
ঢাকা/মাসুম/বকুল