যবিপ্রবিতে ছাত্র সংসদ চায় ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী
Published: 14th, October 2025 GMT
স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ে এবং লেজুরবৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে ছাত্র সংসদ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) আজো ছাত্র সংসদ গঠিত হয়নি। দিন দিন ছাত্র সংসদ গঠন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার (১২ অক্টোবর) শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে একটি অনলাইন জরিপের আয়োজন করা হয়। জরিপে অংশ নেন মোট ৫১৫ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ছাত্র সংসদ গঠনের পক্ষে, ৩৮ শতাংশ বিপক্ষে এবং ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
আরো পড়ুন:
যবিপ্রবিতে এআইএস স্পোর্টস কার্নিভাল শুরু
টিএইচই র্যাঙ্কিং: দেশসেরা ড্যাফোডিল, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে যবিপ্রবি
ছাত্র সংসদ চাওয়া যবিপ্রবি শিক্ষার্থী উসামাহ বলেন, “বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একসময় ছিল মুক্তচিন্তা ও নেতৃত্ব বিকাশের কেন্দ্র। কিন্তু গত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের প্রভাব ও অপরাজনীতির কারণে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশ, নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় প্রকৃত নেতৃত্ব উঠে আসছে না, গণতান্ত্রিক চর্চা হারিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারবে, প্রশাসনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ভাঙবে এবং সিদ্ধান্ত হবে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক। তাই ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্রসংসদ এখন অপরিহার্য।
মো.
ছাত্র সংসদ গঠনের পক্ষে মত দিয়ে আরেক শিক্ষার্থী মো. সুমন আলী বলেন, “জুলাই আন্দোলনের নয় দফার সপ্তম দফায় ছিল দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ও ছাত্র সংসদ চালুর দাবি। ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নেতৃত্বের বিকাশ ও অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণের চর্চা হয়। এটি নারী ও প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং ক্যাম্পাসে পাওয়ার পলিটিক্স ও অপসংস্কৃতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।”
তিনি আরো বলেন, “ছাত্র সংসদ না থাকলে দলীয় রাজনীতি, হল দখল ও টেন্ডারবাজির মতো সমস্যা ফিরে আসবে, যা শিক্ষার্থীদের রক্তঝরা আন্দোলনের আত্মত্যাগের প্রতি অবিচার। তাই অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন জরুরি।”
ছাত্র সংসদ না চাওয়া তাহসিন আরাফাত নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “যবিপ্রবিতে এখনই ছাত্র সংসদের প্রয়োজন নেই। কারণ এর তথাকথিত ‘নিড’গুলো মধ্যস্থতা, র্যাগিং বিরোধী ভূমিকা, খরচ বা নিয়োগ তদারকি—সবই ইতোমধ্যে বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামো যেমন প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্র-পরামর্শকরা করে থাকেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা দেখায়, ছাত্র সংসদ প্রায়ই বিভেদ ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ায়, সমাধান নয়।”
তিনি বলেন, “খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ ছাড়াও আইন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা যথেষ্ট কার্যকর। তাই যবিপ্রবিতে ছাত্র সংসদ চালু করা মানে বিদ্যমান আইনি কাঠামোকেই অকার্যকর বলা। বরং প্রথমে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ, আর্থিক অডিট প্রকাশ, পরিবর্তনশীল কমিটি গঠন, আইন বাস্তবায়ন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উন্মুক্ত যোগাযোগ নিশ্চিত করা উচিত। এসব প্রয়োগের পরও যদি প্রয়োজন হয়, তখন ছাত্র সংসদ নিয়ে ভাবা যেতে পারে।”
ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্র সংসদ বিষয়ক একটি কমিটি করেছে যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মাদাগাস্কারে রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিল সেনাবাহিনী
জেন-জিদের বিক্ষোভের মুখে মাদাগাস্কার ছেড়ে পালিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। আজ মঙ্গলবার দেশটির সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা এ কথা জানান। মাদাগাস্কারের জাতীয় রেডিওতে কর্নেল মাইকেল র্যান্ড্রিয়ানিরিনা বলেন, ‘আমরাই ক্ষমতা গ্রহণ করেছি।’
জেন-জিদের বিক্ষোভে সেনাবাহিনীর যে অংশ সমর্থন দিয়েছিল, তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কর্নেল মাইকেল র্যান্ড্রিয়ানিরিনা। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দেশটির সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাতিল করছে। তবে সংসদের নিম্নকক্ষ বা জাতীয় পরিষদ বহাল থাকবে। এর আগে অবশ্য ডিক্রি জারি করে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা।
ফ্রান্সের সম্প্রচারমাধ্যম রেডিও আরএফআই গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে দাবি করে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে এক গোপন চুক্তি করেছেন রাজোয়েলিনা। ফরাসি সামরিক বিমানে করে তাঁকে দেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জেন-জি প্রজন্মের ব্যাপক বিক্ষোভ ও সেনাবাহিনীর একাংশের বিদ্রোহের মুখে দেশ ছাড়লেও পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন রোজোয়েলিনা।
এদিকে রাজোয়েলিনা বলেছেন, নিজের জীবনের হুমকির কারণে তিনি একটি নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। মাদাগাস্কারের একজন বিরোধী দলের কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর একটি সূত্র এবং এক বিদেশি কূটনীতিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রাজোয়েলিনা রোববার ফরাসি সামরিক বিমানে দেশ ছেড়ে গেছেন।
দেশটিতে ২৫ সেপ্টেম্বর পানি ও বিদ্যুৎ–সংকটের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা দ্রুত রূপ নেয় দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, মৌলিক সেবার অভাবসহ বৃহত্তর অসন্তোষের এক গণ–অভ্যুত্থানে। এই বিক্ষোভকে নেপাল, মরক্কোসহ অন্যান্য দেশে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বিক্ষোভের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আজও রাজধানী আন্তানানারিভোর ১৩ মে স্কয়ারে হাজারো বিক্ষোভকারী নেচে–গেয়ে স্লোগান দিতে দিতে রাজোয়েলিনার বিরুদ্ধে মিছিল করেন। দ্বৈত নাগরিকত্ব ও সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের সমর্থন পাওয়ায় মাদাগাস্কারকে ‘ফরাসি দালাল’ বলে আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভকারীরা নানা ব্যানারও প্রদর্শন করেন। অনেক বিক্ষোভকারী হাতে ছিল মাদাগাস্কারের জাতীয় পতাকা ছিল। একপর্যায়ে কর্নেল মাইকেল র্যান্ড্রিয়ানিরিনা মঞ্চে উঠে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনারা কি সামরিক হস্তক্ষেপ মেনে নিতে প্রস্তুত?’ এরপরই জনতা উল্লাসধ্বনিতে ফেটে পড়ে।
আরও পড়ুনমাদাগাস্কারে বিক্ষোভের মুখে গোপনে দেশ ছেড়েছেন প্রেসিডেন্ট২১ ঘণ্টা আগেতরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে গত শনিবার সমর্থন দেয় ক্যাপস্যাট নামের একটি বিদ্রোহী সেনা ইউনিট। পরদিন এই ইউনিটের পক্ষ থেকে মাদাগাস্কারের পুরো সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পর থেকে প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা মূলত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
মাদাগাস্কারের জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। এর তিন-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর ১৯৬০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মাথাপিছু জিডিপি ৪৫ শতাংশ কমে গেছে।
আরও পড়ুনমাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্টের দেশত্যাগের আগে–পরে যা হলো৩ ঘণ্টা আগে