রাকসুতে ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের হাড্ডহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস
Published: 14th, October 2025 GMT
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাস্তবতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আগামী ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন।
সর্বশেষ ১৯৯০ সালের নির্বাচনে প্যানেল হিসেবে ছাত্রদলের একক আধিপত্য দেখা গেলেও এবারের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এককভাবে কাউকে এগিয়ে রাখার সুযোগ থাকছে কম। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝেও দেখা গেছে উৎসবের আমেজ।
আরো পড়ুন:
রাকসু নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন আজ
রাকসু: ছাত্রশিবিরের পরিচিতি সভার খাবার ফেরত দিল নির্বাচন কমিশন
এবারের রাকসু ভোটে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে অন্তত ১১টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসাবে লড়ছেন প্রার্থীদের আরেকটি অংশ। নির্বাচনে এবার অনেকটা ভিন্ন পরিস্থিতি। কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না, শীর্ষ তিন পদে কে জয়ী হবেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে রাকসুর শীর্ষ তিন পদসহ অধিকাংশ পদেই হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ।
তবে সবার নজর ভিপি ও জিএস পদের দিকে। সহ সভাপতি (ভিপি) পদে ছাত্রশিবির মনোনীত মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ও ছাত্রদল সমর্থিত শেখ নূর উদ্দীন আবীরের মধ্যে মূল লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাম সর্মথিত প্যানেলের ফুয়াদ রাতুল, ছাত্র অধিকারের মেহেদী মারুফও আছেন আলোচনায়।
আর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রশিবির মনোনীত ফাহিম রেজার সঙ্গে মূল লড়াই হতে পারে সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দীন আম্মারের। তবে ছাত্রদলের নাফিউল ইসলাম জীবনও আলোচনায় রয়েছেন। সেক্ষেত্রে এ পদে লড়াই হতে পারে ত্রিমুখী।
এজিএস পদে ছাত্রদলের জাহীন বিশ্বাস এষার সঙ্গে শিবিরের সালমান সাব্বির তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতার আভাসও পাওয়া যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সরেজমিন ক্যাম্পাস ঘুরে রাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রাবি শিক্ষার্থী নাসিমুল মুহিত ইফাত বলেন, “দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাকসু নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যেই পুরো ক্যাম্পাস সরগরম হয়ে উঠেছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তুলনায় রাজনৈতিক ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীরাই বর্তমানে এগিয়ে আছেন। শিবির সমর্থিত প্যানেল এবং ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল—উভয়েরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রিজার্ভ ভোট রয়েছে। আমার মতে, তারাই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন।”
রাবি শিক্ষার্তী ফারিহা ইসলাম মিম মনে করেন, ভোট হচ্ছে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। এত বছর পর সেই অধিকার ফিরে পাওয়া আনন্দের। যদিও মূল আলোচনা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরকে ঘিরে, কিন্তু অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের গুরুত্ব দিচ্ছেন। যারা ছাত্রকল্যাণে সত্যিকার অর্থে কাজ করতে চান, তাদের জয়ী হওয়া উচিত। ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন, জিএস পদে ত্রিমুখী লড়াই হলেও ছাত্রদলের জীবন একটা বড় চমক দিতে পারেন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী পাপিয়া আক্তার বলেন বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে নতুনত্ব আছে। তারা রাজনীতির বাইরে থেকে এসে শিক্ষার্থীদের বাস্তব সমস্যা নিয়ে কথা বলছেন। আমার মনে হয়, এবার অনেকে দলীয় রাজনীতির চেয়ে বিকল্প নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেবে, তাই স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই চমক দেখাতে পারে।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, “ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল এবার বেশ গোছানোভাবে প্রচার চালিয়েছে। প্রচারে তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। আমার মনে হয়, তারা এবারো ভালো ফল করতে পারে, বিশেষ করে ভিপি ও এজিএস পদে।”
তানভীর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “রাজনৈতিক প্যানেলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও এবার দারুণ সক্রিয়। অনেক শিক্ষার্থীই মনে করছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলীয় প্রভাবের বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের বাস্তব সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করতে পারে। তাই তাদের প্রতিও একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে।”
মেহজাবিন সুলতানা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “শিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট বেশ সংগঠিতভাবে প্রচার চালিয়েছে। প্রচারে মেয়েদের হলগুলোতেও তাদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। প্রচারে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাদের সমস্যার কথা শুনছেন। তাই অনেকেই ভোটে তাদের এগিয়ে রাখছেন।”
রাবি শিক্ষার্থী শামীম আহমেদ বলেন, “রাকসু নির্বাচন ক্যাম্পাসে নতুন উদ্দীপনা এনেছে। এটা সত্য যে, ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে মূল লড়াই হবে। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে দুই দলের কোনো সক্রিয়তা ছিল না। আমার মতে, যারা দীর্ঘ বিরতির পর ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি কার্যকর প্রতিশ্রুতি দেবে, তারাই শেষ হাসি হাসবে।”
রাকসু নির্বাচনে ২৩টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ভিপি পদে ১৮, জিএস পদে ১৩ এবং এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৬ জন। ছাত্রদল ও শিবির সমর্থিতসহ মোট ১১টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের পাঁচটি পদে ৫৮ জন প্রার্থী এবং হল সংসদ নির্বাচনের ১৫টি পদের বিপরীতে ১৭টি হলে মোট ৫৯৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এবার রাকসুতে নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। নির্বাচনের ফলাফল ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার সর্বোচ্চ ১৫ ঘণ্টার মধ্যেই প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন রাবি উপাচার্য ও পদাধিকার বলে রাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড.
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স বতন ত র প র র থ ছ ত রদল র সমর থ ত র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ঢামেক মর্গে ১৬ মরদেহ, ছবি হাতে স্বজনদের আহাজারি
রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে আগুনের ঘটনায় নিহত ১৬ জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে আনা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় মরদেহগুলো মর্গে পৌঁছায়। এ সময় মর্গের সামনে ছবি হাতে স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়।
মর্গের সামনে বড় বোন মাহিরার (১৪) মরদেহের খোঁজে আহাজারি করছেন মাহিয়া। এক মাস হয় তার বোন পোশাক কারখানাটিতে কাজ শুরু করেছে। অগ্নিকাণ্ডের খবর শোনার পর থেকে সে বোনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ মেলেনি, তার মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুনচতুর্থ তলার জানালার গ্রিল ভেঙে লাফিয়ে বাঁচেন নাজমুল৩ মিনিট আগেমারজিয়া ও জয় মিয়ার মরদেহ খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাঁদের স্বজনেরা। অগ্নিকাণ্ডের সময় স্বামী-স্ত্রী দুজনই একসঙ্গে ছিলেন। মারজিয়ার বাবা মো. সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় মেয়ে মারজিয়া তাঁকে ফোন করে জানায় কারখানায় আগুন লেগেছে; তারা বের হতে পারছে না।
পোশাক কারখানাটির হিসাব বিভাগে কাজ করতেন খালিদ হাসান (৩০)। এক মাস হয় চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। থাকতেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। খালিদের মরদেহ খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাঁর স্ত্রীর বড় বোন সালমা আক্তার। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সন্ধান মেলেনি।
আরও পড়ুনবিস্ফোরণের পর ছড়িয়ে পড়ে ‘বিষাক্ত গ্যাস’, কারখানার ছাদের দরজা ছিল তালাবন্ধ১ ঘণ্টা আগেআজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে একটি পোশাক কারখানা ও একটি রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগে। প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, কারখানার পাশে থাকা রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে বিষাক্ত সাদা ধোঁয়া বা টক্সিক গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে, যা ছিল প্রাণঘাতী।
ঘটনাস্থল থেকে ১৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। মরদেহগুলো পোশাক কারখানার ভবনের দোতলা ও তিনতলার বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। মরদেহগুলোর অবস্থা এমন যে সেগুলো ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুনদুই সপ্তাহ আগে কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন নার্গিস, ছবি হাতে মায়ের আর্তনাদ৩ ঘণ্টা আগে