ইতিবাচক অগ্রগতি, পর্যালোচনা প্রয়োজন
Published: 15th, October 2025 GMT
ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও বাহিনীর রাজনৈতিক ব্যবহারই গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ভিন্নমত দমন, নির্যাতনসহ বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে বড় কারণ, সেটা কেউই অস্বীকার করবে না। এ বাস্তবতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আইন করেই জবাবদিহির বাইরে রাখা কিংবা দায়মুক্তি দেওয়ার সংস্কৃতি চালু করা হয়েছিল। ফলে মানবাধিকারের ধারণাটি সর্বজনীন না হয়ে সেটা হয়ে উঠেছিল ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছার অধীন। এ রকম বাস্তবতায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যে নখদন্তহীন সংস্থা হবে, সেটাই স্বাভাবিক।
বিগত সরকারের আমলে বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেভাবে সীমা ছাড়িয়েছিল, তাতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়েছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এতটা বিস্তৃত ও বহুমুখী ছিল যে দেশের অধিকার সংগঠনের সঙ্গে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বড় উদ্বেগের বিষয় ছিল বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও এর সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে। অথচ বিদ্যমান আইনে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের সুযোগ ছিল না।
অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশের যে খসড়া প্রণয়ন করেছে, সেখানে সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের যে কারও বিরুদ্ধে তদন্ত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে নাগরিকের অধিকার রক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলেই আমরা মনে করি। বিদ্যমান আইনে মানবাধিকার কমিশন কোনো আদেশ দিতে পারত না, সংস্থাটি সরকারের কাছে কেবল সুপারিশ দিতে পারত। ফলে দেড় দশকের বেশি সময় আগে যাত্রা শুরু করা সংস্থাটির কোনো দক্ষতা কিংবা কার্যকারিতা গড়ে উঠতে পারেনি। খসড়ায় কমিশনকে মানবাধিকার প্রসঙ্গে যুক্তিসংগত আদেশ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এটিও উল্লেখ করার মতো একটি অগ্রগতি। কমিশনে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো হয়েছে, সেটাও প্রশংসনীয়।
আমরা মনে করি, খসড়া অধ্যাদেশটি যথেষ্ট ইতিবাচক হয়েছে, কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে আরও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। খসড়ায় বিদ্যমান আইনের মতোই কমিশনের সরল বিশ্বাসে করা কাজের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না বলে বিধান রাখা হয়েছে। এ ধরনের বিধান অনেক ক্ষেত্রেই জবাবদিহিহীনতা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিধানের যে অপপ্রয়োগ হয়, তারও অসংখ্য নজির আছে।
এটা সত্যি যে আইন যতই শক্তিশালী কিংবা ভালো হোক না কেন, তার প্রয়োগ কতটা হচ্ছে, তার ওপরই এর ফলাফল নির্ভর করে। মানবাধিকার ধারণাটি সর্বজনীন। সুতরাং এর প্রয়োগও রাজনৈতিক প্রভাব ও পক্ষপাতমুক্ত হতে হবে। ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রভাবশালী যারাই মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত, তাদের ওপর নখদন্ত বসানোর ক্ষমতা অবশ্যই এই প্রতিষ্ঠানের থাকতে হবে।
গত সরকারের আমলে বিস্তৃত পরিসরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা, তার প্রেক্ষাপটে ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের দপ্তর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বর্তমান সরকার আমলেও মব সহিংসতা, বিনা বিচারে আটক, মাজারে হামলার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশীয় সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। ১১ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও নতুন কমিশন গঠন না করা দুঃখজনকই। কমিশনের আইন সংশোধন জরুরি, কিন্তু তাই বলে সংস্থাটি কেন অকার্যকর অবস্থায় থাকবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক অগ্রগতি। এতে আত্মতৃপ্তির অবকাশ নেই। কেননা মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নতি করতে গেলে আমাদের আরও বহুদূর পথ পাড়ি দিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজ, প্রতিশ্রুতির কী প্রয়োজন, আমরা তো সুনীলের কবিতায়ই শিখেছি
রশিদ খান। নাহ্, আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খান নন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং আর অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের কথা শুনে মনে পড়ে গেল শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী রশিদ খানের কয়েকটি কথা। প্রয়াত ওস্তাদ রশিদ খান কথাগুলো এই প্রতিবেদককেই একবার বলেছিলেন বৈঠকি ঢঙে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।
শচীন টেন্ডুলকারের পাঁড় ভক্ত রশিদ খান শৈশবে ক্রিকেটার হওয়ারই স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর মামা নিসার হুসেইন খান তাঁকে সে পথে হাঁটতে দেননি। একপ্রকার জোর করেই নিজেদের গড়া সংগীতরাজ্যে ঢুকিয়ে দেন রশিদ খানকে। শাস্ত্রীয় সংগীতের বড় সংগীতকার হয়েও রশিদ খান ক্রিকেটকে অন্তর থেকে মুছে ফেলতে পারেননি; বরং তিনি ক্রিকেট আর সংগীতকে দেখেছেন একই রূপে!
যে সাক্ষাৎকারের কথা বলা হলো, সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘ক্রিকেটটা সংগীতের মতোই। একেকটা কাভার ড্রাইভ, পুল, হুক—এগুলো তো সংগীতের বিভিন্ন ধারার মতোই রেশমি পরশ নিয়ে এগিয়ে চলে।’ সংগীত আর ক্রিকেটকে এক বিন্দুতে মেলানোর আলোচনায় তিনি আরেকটি বেশ মজার উদাহরণ টেনেছিলেন, ‘দেখুন, এটা অনেকটা গানের মতোই। একটি গানের তিনটি ভাগ যদি আপনি করেন, কী আছে সেখানে? আভোগ, অন্তরা, স্থায়ী।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকাল ধবলধোলাই হয় বাংলাদেশ