মুসলিম জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এটি এমন একটি পথ, যা বান্দার হৃদয়ে শান্তি, আত্মায় প্রশান্তি এবং জীবনে সুখ নিয়ে আসে। প্রতিটি পদক্ষেপ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নেওয়া হয়, তবে তা দুনিয়া ও আখেরাতে অপার সাফল্যের দ্বার খুলে দেয়।

তবে এই পথে চলতে গিয়ে মানুষের সন্তুষ্টির সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টির দ্বন্দ্ব, নিজের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা এবং সমাজের চাপের মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন একটি জীবনব্যাপী সাধনা। শুধু বড় বড় আমলের মাধ্যমে নয়, বরং ছোট ছোট কাজে খাঁটি নিয়তের মাধ্যমেও তা অর্জন করা যায়।আল্লাহর সন্তুষ্টি বনাম মানুষের সন্তুষ্টি

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে একজন মুসলিমকে প্রায়ই মানুষের অসন্তুষ্টির সম্মুখীন হতে হয়। এটি এমন একটি পরীক্ষা, যেখানে বান্দাকে দুনিয়ার স্বার্থ ও আখেরাতের কল্যাণের মধ্যে একটি বেছে নিতে হয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, “দুনিয়ার জীবনের উপকরণ সামান্য, আর আখেরাত তাদের জন্য উত্তম যারা তাকওয়া অবলম্বন করে।” (সুরা নিসা, আয়াত: ৭৭)

রাসুল (সা.

) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মানুষের অসন্তুষ্টির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশ করে, আল্লাহ তাকে মানুষের বোঝা থেকে মুক্তি দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অসন্তুষ্টির মাধ্যমে মানুষের সন্তুষ্টি তালাশ করে, আল্লাহ তাকে মানুষের ওপর ছেড়ে দেবেন” (তিরমিজি, হাদিস: ২৪১৪)।

আর মানুষের সন্তুষ্টি অস্থায়ী এবং পরিবর্তনশীল, কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি চিরস্থায়ী ও সর্বোত্তম।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চ্যালেঞ্জ

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পরিবারের মধ্যে এমন চাপ দেখা দিতে পারে যেখানে একজন ব্যক্তি মানুষের সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর অসন্তুষ্টির পথ বেছে নেয়।

এই ধরনের পরিস্থিতি একজন মুসলিমকে আল্লাহর আনুগত্য ও পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজতে বাধ্য করে। কোরআনে বলা হয়েছে, “ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা কখনোই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মের অনুসরণ করবে। বল, নিশ্চয়ই আল্লাহর পথই সঠিক পথ” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১২০)

নেক আমল করার সময় আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত, আমরা কি এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করছি, নাকি মানুষের প্রশংসা ও সম্মানের জন্য?

দুনিয়ার জীবনের উপকরণ সামান্য, আর আখেরাত তাদের জন্য উত্তম যারা তাকওয়া অবলম্বন করে।সুরা নিসা, আয়াত: ৭৭

রাসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন তিন ধরনের মানুষের আমল বাতিল বলে গণ্য হবে: যে শহীদ লড়াই করেছে যাতে তাকে সাহসী বলা হয়, যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন ও শিক্ষা দিয়েছে যাতে তাকে আলেম বলা হয়, এবং যে ব্যক্তি দান করেছে যাতে তাকে দানশীল বলা হয়। এই সব কাজের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের প্রশংসা, তাই তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৯০৫)

আরও পড়ুনযে ৬ ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না২৮ জুন ২০২৫আল্লাহর সন্তুষ্টি: সর্বোচ্চ নেয়ামত

জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ জান্নাতবাসীদের বলবেন, “তোমরা কি সন্তুষ্ট?” তারা বলবে, “কেন সন্তুষ্ট হব না, যখন আপনি আমাদের এমন কিছু দিয়েছে যা অন্য কোনো সৃষ্টিকে দেননি?”

আল্লাহ বলবেন, “আমি কি তোমাদের এর চেয়েও উত্তম কিছু দেব না?” তারা বলবে, “হে আমাদের রব, এর চেয়ে উত্তম আর কী হতে পারে?” আল্লাহ বলবেন, “আমি তোমাদের ওপর আমার সন্তুষ্টি প্রকাশ করব, এরপর আমি কখনো তোমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হব না।” (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৭৩৭৪)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি হলো জান্নাতের সবচেয়ে মূল্যবান পুরস্কার।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উপায়

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বেশ কিছু উপায় রয়েছে, যা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করা যায়:

১. খাঁটি নিয়ত

প্রতিটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা অপরিহার্য। খাঁটি নিয়ত হৃদয়কে শক্তিশালী করে এবং আল্লাহর কাছ থেকে সাফল্য ও সন্তুষ্টি আকর্ষণ করে।

২. আল্লাহর আদেশে দ্রুত সাড়া দেওয়া

আল্লাহর আদেশ পালনে কোনো অলসতা বা বিলম্ব করা উচিত নয়। মুসা (আ.) বলেছিলেন, “হে আমার রব, আমি তাড়াতাড়ি তোমার দিকে এসেছি যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও।” (সুরা তাহা, আয়াত: ৮৪)

৩. নিজেকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করা

আল্লাহ বলেন, “মানুষের মধ্যে এমন কেউ আছে যে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় নিজেকে বিক্রি করে দেয়, আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ২০৭)

নিজেকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করা মানে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর আনুগত্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এর ফলে বান্দার জীবন সুখ ও শান্তিতে ভরে ওঠে। (মুহাম্মাদ রশিদ রিদা, তাফসিরে মানার, ২/১৭৭, দারুল ফিকর, কায়রো, ২০১০)

৪. নেতিবাচক গুণাবলি পরিহার

ইসা ইবনে মারিয়াম (আ.)-কে ইয়াহিয়া ইবনে যাকারিয়া (আ.) জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “কীভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় এবং তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে দূরে থাকা যায়?” ইসা (আ.) বললেন, “রাগ করো না।” তিনি আরও বললেন, রাগের উৎস হলো অহংকার, আত্মম্ভরিতা ও বড়াই। (ইবনে ওয়াহহাব, আল-জামি, পৃ. ৯৮, দারুল কুতুব, দামেস্ক, ২০১৭)

আরও পড়ুনবরকতের শত্রু অহংকার২২ জুন ২০২৫

৫. সাধারণ নেয়ামতের শুকরিয়া

রাসুল (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন যখন সে খাবার খায় এবং তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, অথবা এক ঢোক পানি পান করে এবং তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭৩৪)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ছোট ছোট নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করাও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যম।

৬. অল্পে সন্তুষ্ট থাকা

মালিক ইবনে দিনার ও মুহাম্মাদ ইবনে ওয়াসি জীবনযাত্রা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। মালিক বললেন, “একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো তার জন্য যথেষ্ট আয় থাকা।” মুহাম্মাদ বললেন, “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে দুপুরের খাবার পায় কিন্তু রাতের খাবার পায় না, অথবা রাতের খাবার পায় কিন্তু দুপুরের খাবার পায় না, তবুও সে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে।” (ইবনে আবিদ দুনিয়া, আর-রিদা আন আল্লাহ বিকাদায়িহি, পৃ. ৫৫, দারুল বাশাইর, মদিনা, ২০১৯)

এটি দারিদ্র্যের প্রশংসা নয়, বরং অল্পে সন্তুষ্ট থাকার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আহ্বান।

৭. হালাল উপার্জন করা

একটি হাদিসে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি হালাল উপার্জনের জন্য ক্লান্ত হয়ে রাত্রি যাপন করে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন।” (ইবনে আবিদ দুনিয়া, ইসলাহুল মাল, পৃ. ৭৮, দারুল কুতুব, কায়রো, ২০১৮)

৮. পিতামাতার সন্তুষ্টি

রাসুল (সা.) বলেছেন, “আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতামাতার সন্তুষ্টির মধ্যে রয়েছে, আর আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে পিতামাতার অসন্তুষ্টির মধ্যে।” (বায়হাকি, শু’আবুল ঈমান, হাদিস: ৭৪৬৭)

পিতামাতার দোয়া ও সন্তুষ্টি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৯. তকদিরের প্রতি সন্তুষ্টি

তকদির বা আল্লাহর ভাগ্যলিপির প্রতি সন্তুষ্ট থাকা দুনিয়ার শান্তি ও সুখের একটি বড় কারণ। কোরআনে খিজির (আ.)-এর ঘটনার উদাহরণে দেখা যায়, আল্লাহ একটি শিশুকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে তার পিতামাতা তার অবাধ্যতা ও কুফরের কষ্ট থেকে রক্ষা পান। (সুরা কাহফ, আয়াত: ৮০-৮১)

ধন্য সেই ব্যক্তি, যে দুপুরের খাবার পায় কিন্তু রাতের খাবার পায় না, অথবা রাতের খাবার পায় কিন্তু দুপুরের খাবার পায় না, তবুও সে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে।ইবনে আবিদ দুনিয়া (রহ.)আল্লাহর সন্তুষ্টির আলামত 

মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “হে আমার রব, আপনার বান্দার প্রতি আপনার সন্তুষ্টির লক্ষণ কী?” আল্লাহ বললেন, “আমি তাকে আমার আনুগত্যের জন্য প্রস্তুত করি এবং তাকে আমার অবাধ্যতা থেকে দূরে রাখি।” (হিলিয়াতুল আওলিয়া, ৪/৪১, দারুল কুতুব, বৈরুত, ২০১৬)

এছাড়া আল্লাহর ওপর ভরসা, তাঁর ওপর নির্ভরতা, ইখলাস এবং জ্ঞানের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা বান্দার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষণ। (শাযারাতুয যাহাব, পৃ. ১২০, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ২০১৫)

আল্লাহর সন্তুষ্টির ফলাফল

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ফলে বান্দা অসংখ্য বরকত ও কল্যাণ লাভ করে। আব্দুল্লাহ ইবনে উবায়দ ইবনে উমায়র বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির মধ্যে থাকে, আল্লাহ তার সন্তুষ্টি আরও বাড়িয়ে দেন।” (আহমদ ইবনে হাম্বল, আয-যুহদ, পৃ. ৮৫, দারুল বাশাইর, মদিনা, ২০২০)

আল্লাহ বলেন, “যখন আমি পালিত হই, আমি সন্তুষ্ট হই। আর যখন আমি সন্তুষ্ট হই, আমি বরকত দান করি। আর আমার বরকতের কোনো সীমা নেই।” (হিলিয়াতুল আওলিয়া, ৪/৪১, দারুল কুতুব, বৈরুত, ২০১৬)

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন একটি জীবনব্যাপী সাধনা। এটি শুধুমাত্র বড় আমলের মাধ্যমে নয়, বরং ছোট ছোট কাজে খাঁটি নিয়ত, আল্লাহর আদেশ পালন, নেয়ামতের শুকরিয়া ও তাঁর ভাগ্যলিপির প্রতি সন্তুষ্টির মাধ্যমেও অর্জন করা যায়। এই পথে চলার মাধ্যমে বান্দা দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি, সুখ ও সাফল্য লাভ করে।

আরও পড়ুনইসলামে ‘নেয়ামত’ অর্থ কী০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন ষ র সন ত ষ ট র অসন ত ষ ট র সন ত ষ ট র ম সন ত ষ ট থ ক র সন ত ষ ট র র আল ল হ আল ল হ ত আল ল হ ব র শ কর য় য় আল ল হ জ বন র র জন য বল ছ ন র জ বন আম দ র য় মত র ন য় মত র জন র বলল ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যালার্ম বন্ধ করে শাহেদ ঘুমিয়ে পড়ে

একদিন বেলা ১১টার দিকে কেউ একজন শাহেদের ঘরের দরজায় টোকা দেয়। দরজা খুলে সে দেখে বাড়িওয়ালার ছোট ভাই, সঙ্গে দুজন পুলিশ। খালি গায়ে, হাফপ্যান্ট পরে ঘুমচোখে পুলিশসহ তিন-চারজন মানুষ দেখে শাহেদ কিছুটা অবাক হয়। ঝটপট একটি টি-শার্ট নিয়ে গায়ে দেয়।

আগত তিন ব্যক্তিকে বসার জন্য নিজের অগোছালো ঘরে না ডেকে পাশে খোলা ছাদে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় শাহেদ। পুরোনো ধাঁচের রেলিংঘেরা সুন্দর ছাদটিতে যেতে না-যেতেই এক পুলিশ জিজ্ঞেস করে, বাসায় কি নেংটা হয়ে থাকেন? কালক্ষেপণ না করে আরেক পুলিশ বলে, আজকাল রাস্তাঘাটে মেয়েরা যেভাবে বের হয়! আমার তো মনে হয়, বাসায় সবাই জন্মদিনের পোশাকেই থাকে! (হে হে হে)

হতভম্ব শাহেদ কিছু বলার আগেই পুলিশ বলে, প্যান্ট পরেন। থানায় যেতে হবে।

শাহেদ দু-এক কথা বলতে চেষ্টা করে...একপর্যায়ে পুলিশ চড়া সুরে বলে, কোনো কথা নাই, এখনই আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। চলেন!

বাড়িওয়ালার ছোট ভাই বলে, ভাই যান। এত তক্কের কী আছে! কারণ আছে বলেই তো পুলিশ ডাকতাছে। যান, থানা গিয়ে ফয়সালা করেন।

প্যাকেটে ওই দম্পতির কিছু অন্তরঙ্গ রঙিন ছবির প্রিন্ট ছিল। আর ছিল কিছু ছায়াচিত্র—যার কোনোটিতে ছায়ামূর্তির হাঁটার ভঙ্গি, কোনোটিতে জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে, বসে বা বিছানায় শুয়ে থাকার আকৃতি। সঙ্গে একটি ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস দেওয়া ছিল।

আজিমপুরের গোর-ই-শহিদ মাজার থেকে একটু ভেতরের এই পাঁচতলার ছাদের চিলেকোঠা থেকে নামতে নামতে শাহেদের কয়েক দিন আগের একটি খবরের কথা মনে পড়ে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই খবরটি ছিল এমন: সকালে অফিসে যাওয়ার পথে বনানীতে এক দম্পতির গাড়ির গতি রোধ করে দুই যুবক একটি প্যাকেট ছুড়ে দিয়ে মুহূর্তে ছিটকে পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় তারা প্রথমে কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। গাড়ি স্লো করে। তবে দ্রুত স্নায়ুচাপ সামলে নিয়ে ছেলেটি গাড়ি না থামিয়ে চালাতে থাকে। মেয়েটি প্রাথমিক দ্বিধার পর বরকে মাস্ক পরতে বলে, নিজেও মাস্ক পরে টিস্যু পেঁচিয়ে ধরে প্যাকেটটি খোলে। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে ওঠে, ‘What the f—?! Stop the f—ing car!’

প্যাকেটে ওই দম্পতির কিছু অন্তরঙ্গ রঙিন ছবির প্রিন্ট ছিল। আর ছিল কিছু ছায়াচিত্র—যার কোনোটিতে ছায়ামূর্তির হাঁটার ভঙ্গি, কোনোটিতে জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে, বসে বা বিছানায় শুয়ে থাকার আকৃতি। সঙ্গে একটি ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস দেওয়া ছিল। সেটিতে ঢুকতেই তারা একই ধরনের আরও অনেকগুলো সিলুয়েট দেখতে পেল। কয়েকটি ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপও ছিল, যাতে একক ও দ্বৈত ছায়ামূর্তির নানা ভঙ্গির নড়াচড়া দেখা গেছে। আসবাবের অবয়ব ও সাজিয়ে রাখার ধরনের সঙ্গে নিজেদের শোবারঘরের সাদৃশ্য দেখে তারা দুজনে চোখে শর্ষে ফুল দেখতে শুরু করে।

ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কোয়ান্টাম সেন্সরের অগ্রগতি হলে আবদ্ধ ঘরের অভ্যন্তরের বা মাটির গভীরের সুড়ঙ্গের স্পষ্ট ছবিও বাইরে থেকে অনায়াসে ধারণ করা যাবে।

কয়েক দিন আগে ফেসবুকে একজন লিখেছে, টেলিগ্রামে বিভিন্নজনের কাছে লিংকের সঙ্গে একটি এসএমএস এসেছে। বলা হয়েছে: ‘এই লিংকে আপনার ছবি দেখা গেছে।’ কিন্তু বেশির ভাগই লিংকে ঢুকতে পারেননি। যাঁরা ঢুকতে পেরেছেন, তাঁদের মোবাইল হ্যাকড হয়েছে, কিংবা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

ছাগলনাইয়া, খুরুশকুল, সালথাসহ দেশের আরও অনেক জায়গা থেকে একই ধরনের খবর শোনা গেছে। অনেকের ফেসবুক, মোবাইল, টেলিগ্রাম, ই-মেইল বা লিংকডইনেও এ ধরনের লিংক এসেছে। বেশির ভাগ লিংকে ঢোকা যায়নি। যাঁরা ঢুকতে পেরেছেন, তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, লিংকে যেসব ছায়ামূর্তি বা ভৌতিক ছবি ও ভিডিও তাঁরা দেখেছেন, সেগুলো তাঁদের নিজেদের ঘরের মতো মনে হয়েছে।

দরজা-জানালা আবদ্ধ বা পর্দা ঝোলানো ঘরের ভেতরের এসব ইমেজ ও ভিডিও কী উপায়ে ধারণ করা হচ্ছে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে—তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন। এসব ছায়ামূর্তি কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি, নাকি আসল?

এসব প্রশ্ন নিয়ে শাহেদ অনেক ভেবেছে। খোঁজখবর নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দরজা-জানালা বন্ধ অন্ধকার ঘরের এসব তাপচিত্র বা রে-মূর্তি ভুয়া হতে হবে—এমন কোনো কথা নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কোয়ান্টাম সেন্সরের অগ্রগতি হলে আবদ্ধ ঘরের অভ্যন্তরের বা মাটির গভীরের সুড়ঙ্গের স্পষ্ট ছবিও বাইরে থেকে অনায়াসে ধারণ করা যাবে। তখন এসব ‘অতিব্যক্তিগত’ পরিসরের ভিডিও আরও সহজলভ্য হবে হয়তো।

এসব সাতপাঁচের ঘোরে মোবাইলের অ্যালার্মে শাহেদের ঘুম ভাঙে। সে হাত বাড়িয়ে অ্যালার্ম বন্ধ করে পাশ ফিরে আবার অঘোর ঘুমে তলিয়ে যায়...

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৭ ঘণ্টার মধ্যেই রাকসুর ফল প্রকাশ: প্রধান নির্বাচন কমিশনার
  • দেশে প্রথম পুনর্ব্যবহারযোগ্য ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড এনেছে মেঘনা ব্যাংক
  • গুগল ম্যাপে দেখানো পথে হাঁটতে গিয়ে পড়লেন খালে
  • অ্যানথ্রাক্স ঝুঁকি: ঝালকাঠিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই চলছে পশু জব
  • ‘৯৫ শতাংশ পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান’
  • শ্রীনগরে চার যুবকের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণের ভিডিও ভাইরাল
  • আলীকদম সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে মিয়ানমারের নাগরিক নিহত
  • হবিগঞ্জে জামায়াত নেতা মহিবুর হত্যা মামলায় একজনের আমৃত্যু ও ১৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
  • অ্যালার্ম বন্ধ করে শাহেদ ঘুমিয়ে পড়ে