বার্নিনাল ট্যালেন্টসে জায়গা পেলেন বাংলাদেশের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা মাকসুদ হোসাইন। বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বার্নিনাল ট্যালেন্টস। এখানে বিশ্বের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী, চিত্রগ্রাহক ও কলাকুশলী যাঁরা নিজস্ব ক্ষেত্রে ভালো করছেন, তাঁদের তুলে ধরা হয়।

বার্নিনাল ট্যালেন্টসে বিশ্বের ১২৩টি দেশের ২০১ জন তরুণ অংশগ্রহণ করবেন। ৩ হাজার ৮৩৬টি আবেদনের মধ্য থেকে তাঁদের বেছে নেওয়া হয়েছে। ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এই তরুণেরা বার্লিন উৎসব চলার সময় সব সিনেমা দেখার সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে ছয় দিনের কর্মশালায় নানা বিষয়ে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে জানার সুযোগ পাবেন, তৈরি হবে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক।

তরুণদের মধ্যে এ বছর বাংলাদেশ থেকে একমাত্র মাকসুদ জায়গা পেয়েছেন। তিনি বিজ্ঞাপনচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন দীর্ঘদিন। পাশাপাশি চিত্রনাট্যকার হিসেবেও তাঁর পরিচিতি আছে। মাকসুদের প্রথম সিনেমা সাবা। গত বছর এটি কানাডার টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ডিসকভারি প্রোগ্রামে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়। পরে বুসান, রেড সিসহ একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে প্রশংসিত হয়।

বার্নিনাল ট্যালেন্টসে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার খবরে মাকসুদ বলেন, ‘এটা আমার জন্য অনেক বড় সম্মানের। কারণ, এখানে আবেদন করলেই হয় না। নির্মাতা হিসেবে সিনেমা নিয়ে কী ধরনের কাজ করেছি, সেটাও বিবেচনায় রাখে। যাচাই-বাছাই করে জায়গা দেয়। এখানে সিনেমাসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে যেমন জানার সুযোগ হবে, তেমনি বিশ্বের নানা দেশের তরুণ মেধাবীদের সঙ্গে সিনেমা নিয়ে কথা বলার সুযোগ হবে। তৈরি হবে বড় নেটওয়ার্ক। এই অভিজ্ঞতাকে পরবর্তী প্রজেক্টে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দেয় আয়োজনটি।’

মাকসুদ জানান, ২৪ জানুয়ারি গোথেনবার্গ চলচ্চিত্র উৎসবে সাবার ইউরোপিয়ান প্রিমিয়ার। সেখান থেকে বার্লিন উৎসবে অংশ নেবেন তিনি। ১৩ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে বার্লিন উৎসব।

বর্তমানে পরবর্তী সিনেমা ‘বেবিমুন’-এর চিত্রনাট্য নিয়ে ব্যস্ত মাকসুদ হোসাইন। এ বছরের শেষের দিকে সিনেমাটির শুটিং করতে চান। বার্নিনাল ট্যালেন্টসে বাংলাদেশ থেকে এর আগে জায়গা পেয়েছিলেন নার্গিস আক্তার, কামার আহমাদ সাইমন, রুবাইয়াত হোসেন, নুহাশ হুমায়ূন, রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত, চিত্রগ্রাহক বরকত হোসেন পলাশ, চলচ্চিত্র সমালোচক সাদিয়া খালিদ রীতি প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বকুলতলায় বৃষ্টির সুর

নীল-সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে নানা বয়সী মানুষ এসে জড়ো হতে থাকেন। যেন শহরের হৃদয়ে নেমে আসে গ্রামবাংলার ঘ্রাণ। মেঘলা আকাশের নিচে কণ্ঠে সুর, পায়ে তাল, কল্পনায় বর্ষার রূপই দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল রোববার এভাবে উদযাপন হলো ‘বর্ষা উৎসব ১৪৩২’।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আষাঢ়ের প্রথম দিনে রাগ, রস ও রং মিলে তৈরি হলো এক বর্ষামুখর ক্যানভাস। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন নবীন সংগীতশিল্পী সোহানী মজুমদার। সেতারের কোমল তারে বেজে ওঠে রাগ ‘আহীর ভৈরব’। রাগভিত্তিক এ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মিলে যায় প্রাচ্যের সংগীত ঐতিহ্য ও বর্ষার আধ্যাত্মিকতা। সেই মুহূর্তে বকুলতলায় যেন ভেসে বেড়ায় বৃষ্টির সুর আর আকাশের নরম আলো।
‘বর্ষাকথন’ পর্বে বর্ষার ভাবনা, পরিবেশ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।
ঘোষণা পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট এবং সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা।
ঘোষণাপত্র পাঠে জানানো হয়, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আজ ঋতুচক্রে দেখা দিচ্ছে অসামঞ্জস্য। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা রুষ্ট, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে মানুষের সীমাহীন ভোগবাদী আচরণ, প্রকৃতির ওপর অনবরত অনাচার। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত– প্রকৃতি আজ সংকটে।
এ প্রসঙ্গে মানজার চৌধুরী সুইট সমকালকে বলেন, এ উৎসব শহুরে জীবনে আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে পালন করে আসছি। উৎসবের শিকড় নিহিত রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গল’-এ। আমরা তারই উত্তরসূরি হয়ে আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। এতে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং তার সংকটও তুলে ধরা হয়। আমরা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক 
গড়ুক, তার বিপন্নতাকে বুঝুক এবং তা রক্ষায় সক্রিয় হোক।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ ধরনের উৎসবই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ। শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার মধ্যে নিহিত আমাদের সংস্কৃতি ও চেতনার পুনর্জাগরণ।
বর্ষা মানে নতুন জন্মের বারতা। সেই বারতা ছড়িয়ে দিতে উৎসবে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হয় বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা। এই চারাগুলো শুধু বৃক্ষ নয়, বরং হয়ে উঠেছে সবুজ ভবিষ্যতের আশ্বাস।
উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা।
রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন অণিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন ও ফেরদৌসী কাকলি। লোকসংগীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায় ও এস এম মেজবাহ। আধুনিক গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন রত্না সরকার।
দলীয় সংগীতে অংশ নেয় সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও আসান উল্লাহ তমাল। শিল্পবৃত্ত শিশু-কিশোর দল পরিবেশন করে আবৃত্তি ও নৃত্য কোলাজ।
নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেমুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অব আর্টস ও নৃত্যম।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • পুঁজিবাজার অংশীজনদের সঙ্গে বিএসইসির ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
  • মধ্যপ্রাচ্যকে ‘অতল গহ্বরে’ পতিত হওয়া রোধে ট্রাম্পের পরবর্তী
  • বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, ২৯০০ পদের আবেদন পাঠাতে হবে ডাকযোগে
  • কী হতে পারে ইরানে ইসরায়েলি হামলার পরিণাম
  • ড. ইউনূস-তারেক বৈঠকে বিচার-সংস্কার সেভাবে প্রাধান্য পায়নি
  • আড়াইহাজারে শীর্ষ মাদক কারবারি সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীসহ গ্রেপ্তার
  • পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ৭ জনকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ 
  • ইসরায়েলের হামলা: নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করল ইরান