২৫ শতাংশে শতভাগ পারফরম্যান্স, মাঠেও বিপ্লব তাসকিনদের
Published: 18th, January 2025 GMT
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে রেডিসন হোটেল থেকে বের হলেন পরিচালক আকরাম খান, মঞ্জুর আলমকে নিয়ে। আকরামের কাছে জানা গেল, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলেন তারা। নিয়ম মেনে চলা ফারুকের হঠাৎ অনিয়ম করার কারণ কী? এর ব্যাখ্যাও দেন আকরাম, দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটারদের চুক্তির টাকা দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বলে খেতে দেরি হয়েছে। এদিন ফ্র্যাঞ্চাইজি ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের মালিক টাকা নিয়ে চট্টগ্রামে না এলে গতকাল রাজশাহীর ক্রিকেটারদের সিলেটের বিপক্ষে মাঠে নামানোই কঠিন হয়ে যেত। অনুশীলন বয়কটের মধ্য দিয়ে বিসিবির দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাজশাহীর খেলোয়াড়রা চুক্তির ২৫ শতাংশ টাকা অন্তত আদায় করে নিতে পেরেছে।
ম্যাচের আগে আংশিক সম্মানী পাওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে টনিকের মতো কাজ করেছে। গতকাল সিলেটের বিপক্ষে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে ৬৫ রানে জিতেছে তারা। সাত ম্যাচের তিনটিতে জিতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে রাজশাহী। সিলেটের পয়েন্ট ৪।
তবে সিলেটের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের পরও সম্মানীর বাকি টাকা পাওয়ার দুশ্চিন্তা কাটেনি। দলটির বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলামের কণ্ঠে সে হতাশার সুর বেজেছে সংবাদ সম্মেলনে, ‘দেখেন, পেমেন্ট আমাদের অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। আর দেখবেন আজ আমরা চারজন বিদেশি ক্রিকেটার নিয়ে খেলেছি, মানে পুরো শক্তি। আমাদের দল অনুযায়ী যতটুকু ভারসাম্য আনা যায়। সক্ষমতা অনুযায়ী আজ (গতকাল) আমরা মাঠে নামতে পেরেছি। আর সবাই নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পেরে ম্যাচ জিতেছি।’
মালিক পক্ষের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় টাকার অভাবে প্রথম থেকেই সমস্যায় ছিল রাজশাহী। জিম্বাবুয়ের রায়ান বার্ল ছাড়া মানসম্পন্ন বিদেশি ক্রিকেটার আনতে পারেনি। লিগের প্রথম ম্যাচে তিন বিদেশি খেলালেও পরের পাঁচ ম্যাচে খেলেছে দু’জন করে। গতকাল দলে যোগ দিয়েই মাঠে নেমেছেন দুজন– ওয়েস্ট ইন্ডিজের মার্ক ড্রেয়াল ও আফগানিস্তানের আফতাব আলম। সপ্তম ম্যাচে এসে চার বিদেশি নিয়ে খেলার সুযোগ পায়। যে দু’জন নতুন খেলেছে, তাদেরও ভালো মানের ক্রিকেটার বলতে পারবেন না। ক্রিকেটারদের চুক্তির টাকা দিতে দেরি করা, বিদেশি ক্রিকেটার আনতে না পারার মধ্যে আরও কিছু জিনিস চোখে পড়ার মতো।
রাজশাহী দল থেকে এখনও কিট ব্যাগও দেওয়া হয়নি খেলোয়াড়দের। খুঁজতে গেলে আরও হাজারটা খুঁত পাওয়া যাবে। সানজামুলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, অনেক ঘাটতি আর অনিশ্চয়তা নিয়ে ম্যাচ খেলা কতটা কঠিন। দলের মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলে কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা তো অবশ্যই পড়ে। তবে যখন আমরা মাঠে চলে আসি, আমাদের তো সবকিছু ভুলেই আসতে হয়। আমাদের কাজ তো পারফর্ম করা, মাঠে খেলা। চাপটা কমে গেছে আমরা ম্যাচের আগে পেমেন্টটা পেয়ে গেছি। এ জন্য আর আমাদের ওই চাপটা থাকেনি। তাই আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলার চেষ্টা করেছি।’
রাজশাহী জয়ে ফেরার ম্যাচে ভালো ব্যাটিং করেছে। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮৪ রান করেছে তারা। ব্যাটারদের সবাই ইমপ্যাক্ট ইনিংস খেলেছেন। এনামুল হক বিজয় ৩২ রান করেন ২২ বলে। রায়ার্ন বার্ল ৪১ রান করেন ২৭ বলে, এক চার ও চার চক্কায়। রুয়েল মিয়া তিনটি, নাহিদুল ইসলাম ও নিহাদুজ্জামান দুটি করে উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে সিলেট অলআউট ১১৯ রানে। জাকির হাসান ২৮ বলে ৩৯, জাকের আলী ২০ বলে ৩১ রান করেন। সানজামুল ২৫ রানে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন। তাসকিন আহমেদ, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ও আফতাব আলম দুটি করে উইকেট নেন। বোলারদের উইকেটপ্রাপ্তিতে তিন-তিনটি ক্যাচ নিয়ে প্রশংসিত হন বিজয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব প এল র ন কর গতক ল উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়
অভাগাদের বছরে ‘কুফা’ কাটানোর তালিকায় সর্বশেষ নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেস্টের রাজদণ্ড হাতে পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াদের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসর শেষ হয়েছে।
তবে এর রেশ থাকতেই চলে এসেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর বা চক্র। ২০২৫-২৭ চক্রের শুরুটা হচ্ছে বাংলাদেশকে দিয়েই। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।
ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বছর পার দিলেও রেকর্ড ভালো নয়। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসার পর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ক্রমশ উন্নতির দিকে।
প্রথম চক্রে (২০১৯-২১) কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় চক্রে (২০২১-২৩) মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয় বাদ দিলে বলার মতো কিছু নেই। প্রথম দুই চক্র শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।
তবে তৃতীয় চক্রে (২০২৩-২৫) বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ আশাব্যঞ্জক। ১২ টেস্ট খেলে জিতেছে চারটিতে। এর মধ্যে গত বছর পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের সুখস্মৃতিও আছে। পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান ছিল সাত নম্বরে; পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৩১ টেস্ট। জিতেছে পাঁচটি, ড্র করে দুটি আর হেরেছে ২৪টি।
এবার কী হবে? শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে আশার বাণীই শুনিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল। তিনি বলেছেন, ‘গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে এই চক্রে কীভাবে আরও একটা-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’ সেটা কতটুকু সম্ভব, সময়ই বলে দেবে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের তিন চক্রের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে ৯ দল। প্রত্যেক দল খেলবে ছয়টি করে সিরিজ—তিনটি নিজেদের মাঠে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। পয়েন্ট সিস্টেমেও কোনো পরিবর্তন আসেনি (জিতলে ১২, ড্র করলে ৪, টাই করলে ৬ পয়েন্ট)।
তবে এবার ম্যাচের সংখ্যা গত দুবারের চেয়ে একটি বেড়েছে। ফাইনালসহ মোট ম্যাচ হবে ৭১টি, সিরিজ ২৭টি। প্রত্যেক সিরিজেই সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ পাঁচটি ম্যাচ হবে।
চতুর্থ চক্রের ফাইনালও লর্ডসে আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ম্যাচ হবে ২০২৭ সালের জুনে। ফাইনালের আগে শেষ সিরিজ হবে সেই বছরের মার্চে; পাকিস্তানে দুটি টেস্ট খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ড।
এবার সবচেয়ে বেশি ২২ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। সবচেয়ে কম ১২টি করে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা, যাদের সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের চক্র। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ দলের টেস্ট সিরিজ এই একটিই। নাজমুল-মুশফিক-তাইজুলদের বাকি পাঁচ সিরিজই ২০২৬ ও ২০২৭ সালে। সব সিরিজেই দুটি করে ম্যাচ।
২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ মার্চে, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই বছরের আগস্টে দল যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটিই হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম টেস্ট সিরিজ।
এই চক্রে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে দ্বিতীয় সিরিজ খেলবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে; খেলতে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের মাসে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। বাংলাদেশের শেষ সিরিজ দেশের মাটিতেই; ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসবে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালের পর এটিই হবে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ।
অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো খবর হলো ২০২৫-২৭ চক্রে বাংলাদেশ যে ছয় দলের বিপক্ষে খেলবে, এর চারটির বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তারা হারেনি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছে আর পাকিস্তানকে করেছে ধবলধোলাই (দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়)। সিরিজ হেরেছে শ্রীলঙ্কা আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।