গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী (জরুন) এলাকায় কেয়া কসমেটিকসের চারটি কারখানা বন্ধ ঘোষণার ২১ দিনের মাথায় আরও দুটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ২০ মে থেকে এই কারখানা দুটি বন্ধ হয়ে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার এক নোটিশে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাংলাদেশ শ্রম আইনের বিধি অনুযায়ী সব পাওনা কারখানা বন্ধের পরবর্তী ৩০ দিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

কেয়া কসমেটিকসের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক সাবিনা ইয়াসমিন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নতুন করে বন্ধ ঘোষণা করা কারখানা দুটি আগে বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলোর সঙ্গে যুক্ত। তবু আমরা এ দুটি কারখানা চালু রাখার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বেশ কিছু কারণে এই কারখানা দুটিও বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, আগামী ১ মে থেকে কেয়া গ্রুপের বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলো হলো, কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড (নিট কম্পোজিট গার্মেন্টস ডিভিশন, নিটিং বিভাগ, স্পিনিং ডিভিশন, কটন ডিভিশন) ও গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জরুন এলাকার কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড। কারখানাগুলো ১ জানুয়ারি থেকে চালু আছে, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চালু থাকবে। কারখানাগুলো ১ মে থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পাওনাদি পাবেন। সবশেষ নোটিশ অনুযায়ী, কারখানা দুটি আগামী ২০ মে থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।

কর্তৃপক্ষ কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধের নোটিশে বন্ধের কারণ হিসেবে বর্তমান বাজার অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সঙ্গে হিসাবের অমিল, কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা ও কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের অপ্রতুলতাকে দায়ী করে। নোটিশে কেয়া গ্রুপের পরিচালক/ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান (নিট কম্পোজিট ডিভিশন) স্বাক্ষর করেছেন। নোটিশটি গতকাল বিকেলে কারখানার প্রধান ফটকে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড (নিট কম্পোজিট ডিভিশন) ডাইং ও ইউটিলিটি বিভাগের (জরুন, কোনাবাড়ী, গাজীপুর) সব শ্রমিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বর্তমান বাজার অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সঙ্গে হিসাবের অমিল, কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা এবং ফ্যাক্টরি উৎপাদন কার্যক্রম অপ্রতুলতার কারণে আগামী ২০ মে কারখানার সব কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো।

শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাংলাদেশ শ্রম আইনের বিধি অনুযায়ী সব পাওনা কারখানা বন্ধের ৩০ দিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।

কারখানার মালিক ও শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানাগুলোতে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে এসব মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাদের মধ্যে ১ হাজারের কাছাকাছি শ্রমিক রয়েছেন, যারা শ্রবণ ও বাক্‌প্রতিবন্ধী। যাদের অনেক বয়স হয়ে গেছে। তাদের পক্ষে নতুন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

মঙ্গলবার কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন সেকশনে কর্মরত সাত শতাধিক শ্রবণ ও বাক্‌প্রতিবন্ধী শ্রমিক কারখানা খোলার দাবিতে প্রধান ফটকে জড়ো হন। তারা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কেয়া গ্রুপের সামনে সাজু মার্কেটে একত্র হয়ে কারখানা খোলার দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন।

কেয়া গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক সাবিনা ইয়াসমিন এসব বিষয় স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কেয়া গ্রুপে ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী রয়েছেন। আমরা তাদের নিয়েও চিন্তিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মালিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যমূলক হয়রানির শিকার। ব্যাংক আমাদের সঙ্গে হিসাবের গরমিল সমাধান করছে না। তারা আমাদের রপ্তানির আয় সরাসরি কেটে নিয়েছে। মালিকের হিসাবে জমা দেয়নি। আমরা অনেক দেনদরবার করেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে হিসাব নিয়ে বসাতে পারিনি। তাই আমাদের মালিক সময়মতো শ্রমিকদের বেতন দিতে পারেননি। শ্রমিকেরা আন্দোলন করেছেন। তাই মালিক বাধ্য হয়ে কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছেন।’

মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক বলেন, সরকার যদি বিষয়গুলো দেখে, কারখানা খোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তাহলে আবার কারখানা চালু করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

মুশফিকের প্রেমকাহিনির মঞ্চে ম্যাথুসের বিদায়ী সুর

* শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৬ টেস্টে বাংলাদেশের একটাই জয়। সেটি আবার শ্রীলঙ্কাতে। সেই জয় বাংলাদেশের শততম টেস্টে বলে আপনার তা খুব ভালোমতোই মনে থাকার কথা।

* টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ৬০০ ছাড়ানো একমাত্র স্কোরটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেটিও শ্রীলঙ্কাতে।

* টেস্টে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেটিও শ্রীলঙ্কাতেই।

শেষ দুটি আবার একে অন্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দুটি একই টেস্টে। ২০১৩ সালে যে টেস্টে বাংলাদেশের ৬৩৮, সেটিতেই মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি। টানা ১২ টেস্টে হারার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ড্র-ও।

এই পুরোনো প্যাচাল খুব বেশি অপ্রাসঙ্গিক লাগবে না, যখন জানবেন ওই টেস্টটা হয়েছিল গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। পশ্চাৎপটে অতিকায় গল ফোর্টের পাথুরে কাঠামো আর দুই পাশে সাগর মিলিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়ামের একটি। ২০০৪ সালে সুনামিতে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার পর পুনর্জন্ম নেওয়া গলের সেই মাঠেই আজ শুরু বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট। শুরু আসলে তিন ধরনের ক্রিকেটেই একে অন্যের নাড়ি-নক্ষত্র বুঝে নেওয়ার লড়াই। যাতে টেস্ট আছে, ওয়ানডে আছে, আছে টি-টোয়েন্টিও। দুই টেস্টের পর সাদা বলের সিরিজে তিনটি করে ম্যাচ।

আরও পড়ুনআমিনুল ইসলাম বুলবুলকে চিনতে হলে এই লেখাটা পড়তে হবে০২ জুন ২০২৫

দুই দল পরস্পরের খুব চেনা। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ২৬টি টেস্ট খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ঘন ঘন দেখা হলে হৃদ্যতা যেমন হয়, তেমনি রেষারেষিও। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। গত কয়েক বছরে এই দুই দল মুখোমুখি হলেই মাঠে বা মাঠের বাইরে উত্তেজনার ফুলকি ছুটেছে। ‘টাইমড আউট’ হয়তো সেটির এক নম্বরে, এর বাইরেও নানা কিছু মিলে লঙ্কা-বাংলা এখন গনগনে এক দ্বৈরথের নাম।

গত চার বছর দুই দলের মধ্যে চতুর্থ টেস্ট সিরিজ। দুই দলের জন্যই রণকৌশল ঠিক করা তাই খুব সহজ হওয়ার কথা। বাংলাদেশ দলের জন্য হয়তো তা থাকছে না শ্রীলঙ্কা দলে নতুনের সমারোহে। ১৮ জনের দলের এক–তৃতীয়াংশই এখনো টেস্ট খেলার অপেক্ষায়। বাংলাদেশ দলেও কিছু পরিবর্তন আছে, তবে তা ধর্তব্যের মধ্যে নয়।

টেস্টের প্রস্তুতিতে গলে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল

সম্পর্কিত নিবন্ধ