দাবি নিয়ে এবার বিসিবিতে ক্রিকেটাররা, ফারুকের আশ্বাস
Published: 23rd, January 2025 GMT
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে ঢাকাভিত্তিক ক্রিকেট ক্লাবগুলোর মধ্যে দাবি-দাওয়া নিয়ে জটিলতা এখনও কাটেনি। দুই পক্ষ এখনও সমঝোতায় আসতে না পারায় সমস্যায় ভুগছেন ক্রিকেটাররা। ২০ জানুয়ারি প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা বয়কট করে ক্লাবগুলো। অনিশ্চয়তার মধ্যে এবার বিসিবিতে হাজির হন ক্রিকেটাররা।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে বোর্ডে আসেন প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের ২০ দলের অধিনায়ক। দুপুর নাগাদ তারা এসে হাজির হলেও অপেক্ষায় ছিলেন বিসিবি প্রেসিডেন্টের। নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুক্ষণ পর ফারুক আহমেদ হাজির হলে শুরু হয় রুদ্ধদ্বার বৈঠক। জানুয়ারির মধ্যে লিগ চালুর আশ্বাস দেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট।
বৈঠক শেষে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ ক্লাবের অধিনায়ক আসাদুজ্জামান প্রিন্স শুনিয়েছেন ফারুকের সঙ্গে ফলপ্রসু বৈঠকের গল্প, “অনেকক্ষণ কথা হলো। উনি আমাদের একটা জিনিস নিশ্চিত করেছেন কোনো সন্দেহ নেই, লিগ হবেই। তোমরা লিগ পাবা। হয়তো তারিখ ১৯-২০ হচ্ছে। কিন্তু উনার কথা হচ্ছে এ মাসের মধ্যেই প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ হবে।”
আরো পড়ুন:
ক্লাবের আল্টিমেটাম: জরুরি বোর্ড মিটিং ডেকেছে বিসিবি
বিসিবির বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনে ক্লাবগুলো, লিগ বয়কট
বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধনী নিয়ে ক্লাবের সঙ্গে জটিলতা নিরসনে আগামী শনিবার (২৫ জানুয়ারি) জরুরি বোর্ড মিটিং ডেকেছে বিসিবি। এই বৈঠকে মূলত ঠিক হবে গঠনতন্ত্র সংশোধনীর ভবিষ্যত। ক্লাবগুলোর দাবি অনুযায়ী প্রস্তাবনা বাতিল ও নাজমুল আবেদীন ফাহিমের নেতৃত্বে গড়া আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করলেই মাঠে ফিরবেন তারা। ফারুকও ক্রিকেটারদের কাছে শনিবার পর্যন্ত সময় নিয়েছেন এক হিসেবে।
“স্যার আমাদের ইনফর্ম করছেন, এজ আর্লি এজ পসিবল উনি করবেন। ২৫ তারিখ একটা মিটিং আছে উনাদের, ওটা বা ২৬ তারিখের ভেতর আমাদের একটা ডেট দিয়ে দিবেন, কবে নাগাদ হবে। প্রেসিডেন্ট আমাদের আশ্বস্ত করেছেন কোনো সমস্যা নেই, লিগ ঠিক সময়েই হবে।”
“উনি আমাদের যে হাস্যোজ্জ্বলভাবে নিয়েছেন, আমরা ২০ মিনিটের মতো উনার সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা খুব খুশি উনার রোমাঞ্চ দেখে। উনি আমাদের কথা দিয়েছেন, কোনো মিস হবে না ঢাকা লিগের। আশা করি তোমাদের এই লিগ অবশ্য অবশ্য মাঠে গড়াবে, তোমরা আমাদের ২টা দিন সময় দাও। মিটিংয়ের পর একটা ডেট আমাদের জানিয়ে দেবেন” -বলছিলেন আসাদুজ্জামান।
২০ তারিখ থেকে লিগ চালু হবে ধরে ক্রিকেটাররা সকলে ঢাকায় চলে আসেন। কিন্তু যেদিন ট্রফি উন্মোচন হওয়ার কথা সেদিন থেকে শুরু হয় অচলাবস্থা। ক্লাব থেকে কাউন্সিলর ও পরিচালক পদ কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবনা তৈরির পরই শুরু হয় আন্দোলন। প্রথমে তিন দিনের আল্টিমেটাম, পরবর্তীতে লিগ বয়কটে যায় ক্লাবগুলো।
আসাদুজ্জামান বলেন, “এই মুহূর্তে প্রত্যেকটা ক্লাব এবং বোর্ডের মধ্যে কোনো একটা সমস্যা চলছিল, বিশেষ করে ক্লাবরাও চাচ্ছিল খেলবে না বা কোনো একটা আল্টিমেটাম বোর্ডকে দিয়েছিল। এটা নিয়ে হয়তোবা কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব উনাদের ভেতর চলছিল। যেহেতু আমাদের লিগ, আমাদের সংসার চলাতে হয়, ৭-৯ মাস অপেক্ষা করি শুধু প্রথম বিভাগ ক্রিকেটের জন্য। এই পারিশ্রমিক দিয়ে আমরা আমাদের সংসার চালাই। যে কারণে ২০ দলের সিনিয়র ক্রিকেটার আমরা এ মুহূর্তে আপানাদের সামনে। কারণ একটাই, আমাদের লিগ কবে প্রেসিডেন্ট শুরু করবেন, সেটা জানার জন্য।”
ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রথম ব ভ গ ক র ক ট
এছাড়াও পড়ুন:
মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
১৮৮৬ সালের ১ মেÑএকটি দিন, একটি দাবি, আর হাজারো শ্রমিকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিহাসে রক্তাক্ত দাগ কেটে দিয়েছিল যে মুহূর্ত, তা আজ বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। তখনকার দাবিটি ছিল স্রেফ ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। কিন্তু আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের দাবি শুধু সময়
নয়Ñমর্যাদা, সুরক্ষা ও ন্যায্যতার প্রশ্নও।
এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য “শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এদেশ নতুন করে”Ñএ যেন সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই বার্তা কেবল প্রাসঙ্গিক নয়, বরং তা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের জন্য এক যৌথ দিকনির্দেশনা।
বাংলাদেশের শ্রমচিত্র ও বাস্তবতা
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ, কৃষি ও নির্মাণ খাতে আরও কয়েক কোটি মানুষ নিয়োজিত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে শ্রমনির্ভর খাত থেকে। কিন্তু যাঁরা এই অর্থনীতির ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছেন, সেই শ্রমিকরা কি পেয়েছেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা?
দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও বহু শ্রমিক পান না ন্যূনতম মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা কিংবা ছুটি সংক্রান্ত মৌলিক সুবিধা। নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও জটিলÑযত্রতত্র হয়রানি, মাতৃত্বকালীন সুবিধার অভাব, কিংবা নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে না তোলার ফলে এই খাতেও স্থিতিশীলতা আসছে না।
মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক: দ্বন্দ্ব নয়, দরকার সহমর্মিতা
এক সময় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক মানেই ছিল দ্বন্দ্ব, ধর্মঘট ও হুমকি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা বলছেÑসহযোগিতাই টেকসই উৎপাদনের চাবিকাঠি। মালিকপক্ষ যখন শ্রমিককে কেবল “ব্যয়” হিসেবে না দেখে “সম্পদ” হিসেবে বিবেচনা করেন, তখন প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। একইভাবে শ্রমিকও যদি বুঝেন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন মানে তার কর্মস্থলের স্থায়িত্বÑতাহলে দুপক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের
ভিত্তি গড়ে ওঠে।
এই বিশ্বাস গঠনের জন্য প্রয়োজন তিনটি স্তম্ভ:
নীতিগত স্বচ্ছতা Ñ ন্যায্য মজুরি, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা দায়িত্বশীল মালিকপক্ষ Ñ কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিতে উদ্যোগ সচেতন শ্রমিকশ্রেণি Ñ অধিকার আদায়ের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের মানসিকতা
নীতি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও সংশোধিত ২০১৮ সংস্করণ অনুযায়ী শ্রমিকের অধিকার স্বীকৃত হলেও বাস্তবায়নের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক খাতে (যেমন কৃষি, গৃহপরিচারিকা, গিগ-ওয়ার্কার) শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি এখনও প্রায় উপেক্ষিত।
এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা বীমা, এবং পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার হওয়া জরুরি। সরকার শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করলেও তা অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
এই প্রেক্ষাপটে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে’ দেশ গড়ার বার্তাটি যেন শুধুই স্লোগানে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং এটি হোক রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আর্থিক বিনিয়োগ ও মানবিক বিবেচনার এক বাস্তব প্ল্যাটফর্ম।
প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও নতুন শ্রম বাস্তবতা
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজার দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন ও গিগ-ইকোনমি অনেক চাকরি বিলুপ্ত করছে, আবার নতুন দক্ষতা চাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়, তাহলে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, পুনঃস্কিলিং এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এখানে মালিক ও রাষ্ট্র উভয়ের উচিত হবে, শ্রমিককে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে বিনিয়োগ করা, কারণ দক্ষ শ্রমিক ছাড়া কোনো শিল্পই টিকে থাকে না।
মে দিবস: উৎসব নয়, দায়বদ্ধতার প্রতীক
মে দিবস কেবল লাল পতাকা হাতে শোভাযাত্রার দিন নয়, এটি আমাদের মানবিক চেতনার প্রতিফলন। যে শ্রমিক ঘাম ঝরিয়ে ভবন গড়ে, কৃষি জমি চষে, রপ্তানি পণ্য তৈরি করেÑতার জন্য আমাদের উচিত মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা।
এবছর, আসুন আমরা সবাই রাষ্ট্র, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকÑএকটি মানবিক, উৎপাদনশীল ও শীদারিত্বভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাই। শ্রমিকের হাতে গড়া এই বাংলাদেশ হোক তার জন্যই গর্বের জায়গা।
লেখক পরিচিতি:
মীযানুর রহমান
সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক
মোবাইলঃ ০১৭৫৪১০৯০৭২
যোগাযোগ: : [email protected]