যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে একটি নতুন দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে ইতিহাসের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক দাবানলের কবলে থাকা এই রাজ্যটি নতুন করে ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের প্রায় ৪৫ মাইল উত্তর-পশ্চিমে, বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকা ও স্কুলের সীমানায় অবস্থিত কাস্টেইক লেকের কাছে দাবানলের সূত্রপাত হয়। বাতাস ও শুষ্ক ঝোপঝাড়ের কারণে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দাবানল ৯,৪০০ একরেরও বেশি জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে।

নতুন এই দাবানলে কোনো বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, তবে ৩১ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। মেক্সিকো থেকে কানাডা পর্যন্ত মার্কিন পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রধান মহাসড়ক ইন্টারস্টেট ৫ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টির কাস্টেইক লেক এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, তারা ‘জীবনের জন্য তাৎক্ষণিক হুমকির’ সম্মুখীন।

স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার চিফ অ্যান্থনি ম্যারোন বলেছেন, “পরিস্থিতি গতিশীল রয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা এখনও কঠিন, তবে আমরা আধিপত্য বিস্তার করছি।”

ক্যালিফোর্নিয়ার ফায়ার এজেন্সি- ক্যাল ফায়ারের কর্মকর্তা এড ফ্লেচার বিবিসিকে বলেছেন, “এই মাসের শুরুর দিকের দাবানলের তুলনায় এই দাবানল আলাদা। বাতাস এখনও ততটা তীব্র নয়। আগুন নেভানোর জন্য প্রচুর কর্মী চেষ্টা করছেন।”

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফ রবার্ট লুনা বলেছেন, “এলাকার প্রায় ৩১ হাজার মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরো ২৩ হাজার জনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।” তিনি আরো জানান, এলাকার একটি কারাগারের প্রায় ৫০০ বন্দীকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এর আগে ১০ দিনের বেশি সময় ধরে দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস। দাবানলে প্রাণ গেছে অন্তত ২৮ জনের। পুড়ে গেছে ১২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসের বিস্তীর্ণ এলাকা। পরবর্তীতে বাতাসের গতি ধীরে ধীরে কমতে থাকায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে আসে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেন বাসিন্দারা। এর মধ্যে নতুন করে ফের শুরু হলো দাবানল।

অ্যাঞ্জেলেস ন্যাশনাল ফরেস্টের মুখপাত্র ডানা ডিয়ের্কসের মতে, বাতাস ও শুষ্ক ঝোপঝাড় সাম্প্রতিক এই দাবানলগুলোকে মোকাবিলা করা অনেক কঠিন করে তুলেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর লস অ য ঞ জ ল স ৩১ হ জ র

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও