হত্যার বিচার, পুনর্বাসনের ব্যবস্থাসহ নানা দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদের পরিবার। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে শহিদদের শিশু সন্তান, স্ত্রী, বাবা, মা, ভাই, বোন ও আত্মীয় স্বজনরা অংশ নেয়। এ সময় তারা শহিদদের ছবি ও স্মৃতিচিহ্ন বুকে, হাতে ধারণ করে।

অন্য সবার সঙ্গে মানববন্ধন অংশ নেয় ছোট্ট শিশু রিদা। কিছু না বুঝলেও বুকে জড়িয়ে রয়েছে বাবার ছবি। তার আকুতি, কখন আসবে বাবা। তার বাবার নাম নাজমুল ইসলাম রাজু। তিনি পেশায় একজন দর্জি ছিলেন। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ছিল তার কর্মস্থল। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া রাজুর স্ত্রী শিল্পী খাতুন জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে উত্তরা এলাকায় গুলিতে নিহত হন তার স্বামী। শহীদ রাজুর একমাত্র সন্তান রিদা।

শহীদ পরিবারের দাবি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৬ মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত সরকার একটি হত্যার বিচার শুরু করেনি। নেওয়া হয়নি আহত ও নিহত পরিবারের জন্য কোনো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। তাদের অভিযোগ, সরকারের জুলাই আগস্ট ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ করে টাকা দেওয়ার ঘোষণা থাকলেও তা এখনও পায়নি শহীদদের অনেক পরিবার। 

এ বিষয়ে বর্তমান সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা। বক্তব্যে শহিদ পরিবারের অনেকে অভিযোগ করেন, বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় আছে অনেক পরিবার। এ সময় মানববন্ধন অনুষ্ঠনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছাত্র-আন্দোলনে শহীদ হওয়া স্বজন হারানো অনেক পরিবারের সদস্যরা। 

অনুষ্ঠানে বক্তারা গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দ্রুত সুচিকিৎসা নিশ্চিত এবং আজীবন সরকারিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা, আহত ব্যক্তি ও নিহতের পরিবারকে দ্রুত পুনর্বাসন, আহত ব্যক্তি ও নিহতের পরিবারকে পরবর্তী কোনো সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা রাজনৈতিকভাবে কোনো হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিতে না পারে, সেই আইন পাস, জটিলতা নিরসন করে শহীদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আহত ও নিহতদের পরিবারকে দ্রুত সহায়তা, গণঅভ্যুত্থানকালে জড়িত অপরাধীদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা এবং গণঅভ্যুত্থানবিষয়ক পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানান। 

মানববন্ধনে ছাত্র সমম্বয়ক, সদস্য ঢাকা জেলা কমিটির দায়িত্বে থাকা মো.

তামিম রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৬ মাস পার হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার এখনও বিচার শুরু করেনি। শুধু তাই নয়, জুলাই আগস্ট ফাউন্ডেশন থেকে শহীদ পরিবারের জন্য ঘোষণা দেওয়া অর্থ এখনও পায়নি অনেক পরিবার। এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 
মানববন্ধন অনুষ্ঠানে অন্যান্য মধ্যে আরও বক্তব্য দেন শহীদ পরিবারের শিল্পী, শেফালী , আফাস উদ্দিন প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র পর ব র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে

আওয়ামী লীগকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা তা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান। ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।    

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে। 

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। 

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে। 

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এখনও বলছে না।  

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।  

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে আগাতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 
  • রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
  • কানাডায় আবারও লিবারেল পার্টির সরকার গঠনের আভাস
  • গণঅভ্যুত্থানের তরুণ নেতৃত্ব ও রাজনীতিতে প্রাণপ্রবাহ
  • জুলাই বিপ্লবী মেয়েরা আজ নিরাপদ বোধ করছে না: ফরহাদ মজহার
  • আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত দুজন শনাক্ত  
  • গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে