গত মাসে উন্মুক্ত হওয়ার পরপরই প্রযুক্তি-দুনিয়ায় হইচই ফেলে দিয়েছে চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ডিপসিক চ্যাটবট। আর তাই এক মাসের মধ্যেই তারকা বনে গেছেন চ্যাটবটটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ডিপসিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং। এরই মধ্যে নিজের জন্মস্থান দক্ষিণ চীনের গুয়াংডং প্রদেশে সংবর্ধনা পেয়েছেন তিনি। লুনার নিউ ইয়ার উদ্‌যাপনের জন্য গুয়াংডং ভ্রমণে গেলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। তাঁর নিরাপত্তার জন্যও ছিল বিশেষ ব্যবস্থা।

ওয়েনফেংয়ের শৈশব কেটেছে গুয়াংডংয়ের এক গ্রামে। স্থানীয় লোকজন জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। গণিতে দক্ষতার পাশাপাশি কমিক বই পড়তে ভালোবাসতেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘ওয়েনফেং ফুটবলও খেলতেন। আমরা একই গ্রামে বড় হয়েছি। তাঁকে নিয়ে আমরা গর্বিত।’ তবে বিশ্বজুড়ে আলোচনার শীর্ষে থাকলেও ওয়েনফেং নিজেকে আড়ালে রাখতে চান। আর তাই তিনি বরাবরই জনসমক্ষে আসার বিষয়টি এড়িয়ে চলছেন।

আরও পড়ুনচীনের ডিপসিক এআই মডেল নিয়ে কেন এত আলোচনা২৮ জানুয়ারি ২০২৫

৪০ বছর বয়সী ওয়েনফেং তারকা পরিচিতির পাশাপাশি কোটিপতিও বনে গেছেন। এত দিন হাই ফ্লাইয়ার নামের প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিচিতি পেলেও এবার নিজের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের কারণে আয়ের পরিমাণ বেড়েছে লিয়াং ওয়েনফেংয়ের। চীনের জন্যও ডিপসিক চ্যাটবট বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসর সরবরাহে মার্কিন বিধিনিষেধের মুখে রয়েছে।

আরও পড়ুনডিপসিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নতুন এআই মডেল আনল ওপেনএআই০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ডিপসিক চ্যাটবটের কার্যক্ষমতা এরই মধ্যে চ্যাটজিপিটি, জেমিনি ও ক্লডের মতো বিভিন্ন এআই চ্যাটবটকে পেছনে ফেলেছে। এর ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে চীন।

সূত্র: টেক ক্রাঞ্চ, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

আরও পড়ুনডিপসিক নিয়ে মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলো কী ভাবছে৩০ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ