ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদের গণসংযোগস্থলে হামলা করেছেন স্থানীয় যুবদলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় পুলিশের হস্তক্ষেপে এ কে আজাদ ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও তাঁর বহরের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

আজ রোববার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের পরমানন্দপুর বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, যে দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, তার একটি সমকাল পত্রিকার, অন্যটি ফরিদপুর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ বিকেল চারটার দিকে গণসংযোগের উদ্দেশ্যে পরমানন্দপুর বাজারে যান এ কে আজাদ। তিনি পরমানন্দপুর বাজারসংলগ্ন মসজিতে আসরের নামাজ আদায় করে বাজার এলাকায় গণসংযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক লুৎফর রহমান ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি নান্নু মোল্লার নেতৃত্বে একটি মিছিল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারা এ কে আজাদকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে স্লোগান দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, মিছিলকারীরা একপর্যায়ে এ কে আজাদকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করেন। তখন তাঁর নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে ঘিরে রাখেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে যুবদলের নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে পুলিশের অনুরোধে এ কে আজাদ ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে পরমানন্দপুর মাঠে অবস্থান নেওয়া এ কে আজাদের গাড়িবহর পুলিশের পাহারায় একে একে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তবে শেষের দুটি গাড়িতে আখ দিয়ে আঘাত করে কাচ ভাঙচুর করেন যুবদলের নেতা-কর্মীরা।

এ বিষয়ে এ কে আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা তাঁর জানা নেই। গত নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হকও তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ করেননি। নায়াব ইউসুফের (ফরিদপুর-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক) কাছ থেকে এমন আচরণ এলাকাবাসী প্রত্যাশা করেননি। এসব ঘটনা রাজনৈতিক সংকটকে ঘনীভূত করবে। তিনি এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।

জানতে চাইলে নায়াব ইউসুফ বলেন, ‘এ কে আজাদ আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব কথা বলছেন, যাতে আমার ক্ষতি হয়। আমি আমার নেতা-কর্মীদের দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছি এ–জাতীয় কোনো কাজ না করতে।’ তিনি বলেন, তাঁর (এ কে আজাদ) বহরের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা থাকেন। তাঁদের দেখে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।

অন্যদিকে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ফরিদপুর সদর উপজেলার কোনো ইউনিয়নে যুবদলের কমিটি নেই। পরমানন্দপুরে আমার কোনো লোক এ ঘটনা ঘটায়নি।’

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

আসাদউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পরমানন্দপুরে আজ হাটের দিন ছিল। এ কে আজাদ সেখানে গণসংযোগ করতে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে যুবদলের লোকজনও গণসংযোগ করছিলেন। একসময় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থায় চলে গেলে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, পুলিশ অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এ কে আজাদের গাড়িবহরকে নির্বিঘ্নে পার করে দেয়। যে দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, তার একটি সমকাল পত্রিকার, অন্যটি ডিবি পুলিশের।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আজ দ র গ গণস য গ য বদল র য গ কর এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে সামরিক শক্তি বাড়ানোর ঘোষণা ট্রাম্পের

তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাঁর মিত্রদের সামরিক শক্তি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর প্রশাসনের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রে এ বিষয়টি উঠে এসেছে।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সংবেদনশীল কূটনৈতিক ইস্যুগুলোর একটি তাইওয়ান। শুক্রবার প্রকাশিত ট্রাম্প প্রশাসনের ওই নথিতে এ ইস্যু নিয়ে ওয়াশিংটন তাদের অবস্থান স্পষ্ট করল।

এমন সময় নথিটি প্রকাশ করা হলো, যখন পূর্ব এশিয়ার জলসীমায় নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক শক্তি প্রদর্শন করেছে চীন। এর মধ্য দিয়ে দেশটি মূলত গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত তাইওয়ান ও জাপানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।

নথিতে বলা হয়েছে, ‘সামরিক প্রাধান্য বজায় রেখে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট যেকোনো সম্ভাব্য সংঘাত এড়ানোই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার।’

চীন তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। দ্বীপটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে শক্তি ব্যবহার করার কথা কখনোই অস্বীকার করেনি দেশটি। দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরো এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে আসছে চীন। এ নিয়ে আশপাশের ছোট ছোট দেশগুলোর সঙ্গে তাদের বিরোধ দীর্ঘদিনের।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রই দ্বীপটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সমর্থক। মার্কিন আইনে তাইওয়ানকে আত্মরক্ষায় সহায়তা দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। এ ইস্যুই বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের একটি বড় অস্বস্তির জায়গা।

চীন তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। দ্বীপটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে শক্তি ব্যবহার করার কথা কখনোই অস্বীকার করেনি দেশটি।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রণীত ২০১৭ সালের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রের একটি বাক্যে তাইওয়ানের কথা তিনবার উল্লেখ করা হয়েছিল। আর নতুন কৌশলপত্রে তিনটি অনুচ্ছেদজুড়ে আটবার তাইওয়ানের উল্লেখ আছে। নথিতে বলা হয়েছে, ‘তাইওয়ানকে ঘিরে এত মনোযোগ থাকা স্বাভাবিক।’ বাণিজ্যসমৃদ্ধ জলপথে এর কৌশলগত অবস্থান এবং বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে দ্বীপটির আধিপত্যই এই মনোযোগের প্রধান কারণ।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, জাপান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত দ্বীপমালায় যুক্তরাষ্ট্র এমন সামরিক সক্ষমতা গড়ে তুলবে, যা যেকোনো আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে পারবে। তবে এককভাবে সবকিছু করা সম্ভব নয়। এ জন্য মিত্রদের এগিয়ে আসতে হবে, ব্যয় বাড়াতে হবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— সমষ্টিগত প্রতিরক্ষার জন্য আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে।

তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনা বাড়লে ট্রাম্প কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সে বিষয়ে তিনি এখনো পর্যন্ত কিছুই বলেননি। অবশ্য তাঁর আগের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বারবার বলেছেন, চীন আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষা করবে।

আগামী বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প বেইজিং সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সেখানে দুই দেশের নেতারা তাদের মধ্যকার বাণিজ্যিক লড়াই প্রশমিত করার ব্যাপারে আলোচনা করবেন।

চুক্তি করার প্রবণতা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা— এসব কারণে টোকিও থেকে ম্যানিলা পর্যন্ত অনেক দেশে শঙ্কা বাড়ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাইওয়ান ও আঞ্চলিক মিত্রদের প্রতি সমর্থন কমাবে।

আগামী বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প বেইজিং সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সেখানে দুই দেশের নেতারা তাদের মধ্যকার বাণিজ্যিক লড়াই প্রশমিত করার ব্যাপারে আলোচনা করবেন।

গত মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি পার্লামেন্টে বলেন, তাইওয়ানে চীনের কোনো হামলা যদি জাপানের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে, তবে জাপান সামরিক প্রতিক্রিয়া জানাবে। এতে বেইজিং তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ