শাহবাগে শিক্ষকদের অবরোধে পুলিশের লাঠিচার্জ-সাউন্ড গ্রেনেড
Published: 10th, February 2025 GMT
রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে অবস্থান নেওয়া শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিবন্ধিত নিয়োগ প্রত্যাশী ও সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। দুপুর পৌনে ২টার দিকে সেখানে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আন্দোলনকারীরা।
এর আগে আজ সোমবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে সড়ক অবরোধ করেন তারা। এতে করে শাহবাগ দিয়ে চলাচল করা সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহবাগ মোড়ের বামপাশের সড়কে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুপারিশপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা এবং ডানপাশের সড়কে এনটিআরসিএ’র নিবন্ধিত নিয়োগ প্রত্যাশীরা অবস্থান নিয়েছেন। আর চারপাশে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। এর মধ্যে শাহবাগ মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে রাখা হয়েছে একটি জলকামান এবং এপিসি।
এনটিআরসিএ’র নিবন্ধিত নিয়োগ প্রত্যাশী শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক জিএম ইয়াছিন বলেন, এনটিআরসিএ এখন পর্যন্ত ১৭টি নিয়োগ পরীক্ষার সুপারিশ করলেও মাত্র পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছে। এতে প্রায় ১২-১৩ হাজার যোগ্য শিক্ষক বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। বহু নিবন্ধিত শিক্ষক একাধিকবার পরীক্ষায় পাস করেও চাকরির সুপারিশ পাননি। অথচ কিছু লোক আবেদন ছাড়াই নিয়োগ পেয়েছেন।
প্রাথমিকের নিয়োগ প্রত্যাশীরা বলছেন, আমাদের নিয়োগ বাতিল করে যে রায় দেওয়া হয়েছে সেটি বৈষ্যম্যমূলক৷ এই সরকারই আমাদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে। আবার আমাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এটি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা। আমরা চাই, দ্রুতই যেন এই রায় বাতিল করে আমাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়।
এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে সমাবেশ করেন নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। তখন পুলিশের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে উত্তীর্ণ ছয় হাজার ৫৩১ জন প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট।
এর আগে ১৯ নভেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগপত্র প্রদানের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়োগ দেওয়ায় আদালত এ আদেশ দেন।
গত ৩১ অক্টোবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের (তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া) চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ৬ হাজার ৫৩১ জন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়।
গত ২৮ মে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর (তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া) মৌখিক পরীক্ষাসহ নিয়োগপ্রক্রিয়া ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণসংক্রান্ত হাইকোর্ট যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন, আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে মৌখিক পরীক্ষা নেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে এই নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গণমাধ্যমে আসা অভিযোগ অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবর ধ আম দ র ন য় গ অবস থ ন ন ব ত ল কর ন বন ধ ত পর ক ষ সরক র সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভিসা ও প্রযুক্তি দিয়ে আসিয়ানে সংযোগ বাড়াচ্ছে চীন
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সদস্যরা এখনও মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকা। এসব দেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ কম থাকায় গবেষণা ও উন্নয়নে তেমন অগ্রগতি নেই। প্রযুক্তির সীমিত বিস্তারের কারণে আজও এই অঞ্চলটি পেছনে পড়ে আছে। শিল্প খাতে অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও নিম্নমানের শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নেও অঞ্চলটি পিছিয়ে।
প্রতিরক্ষা খাত দুর্বল হওয়ায় পরিবর্তিত ঝুঁকি ও হুমকির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সাহস নেই দেশগুলোর। এ কারণে মিয়ানমার সংকটে শক্তিশালী কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না জোটটি। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বহিরাগত শক্তি এই অঞ্চলে ক্রমশ জেঁকে বসছে। বিশেষ করে চীন বিনিয়োগের পাশাপাশি ভিসা ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে আসিয়ানে সংযোগ বাড়াচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমার সংকট নিয়ে আসিয়ান এখনও বিভক্ত। একদিকে চীনের প্রভাব আসিয়ানকে মিয়ানমারে পদক্ষেপ নিতে বাধা দিচ্ছে, অন্যদিকে বহিরাগত শক্তির ওপর নির্ভরতা নিজেদের সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে। আঞ্চলিক নেতৃত্ব এবং ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপটে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা না রাখায় মিয়ানমার সংকট গভীর হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এই অঞ্চল ঘিরে চীন প্রতিরক্ষাসহ নানা খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। থেমে নেই যুক্তরাষ্ট্রও। উৎপাদন ও প্রযুক্তি খাতে যথেষ্ট উন্নতি না করতে পারায় দেশগুলো সামনের দিকে অগ্রসর হতে বাধা পাচ্ছে।
শক্তিশালী শাসনব্যবস্থার অভাবে তারা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এই অবস্থায় এই অঞ্চলে অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তর প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
আসিয়ানের সদস্য দেশগুলো হলো- ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।
১০ দেশের এই জোটটির লক্ষ্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। আসিয়ানে গড় মাথাপিছু আয় প্রায় ৫ হাজার ৩০০ ডলার এবং দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপি প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন ডলার।
আসিয়ান কোন দিকে ঝুঁকছে, যুক্তরাষ্ট্র না চীন- এই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ নিক্কেই এশিয়ায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দেশগুলোর উচিত বেইজিংয়ের প্রবৃদ্ধি থেকে লাভবান হওয়া। তিনি ভারতের সঙ্গেও বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
অন্যদিকে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কলিন্স চং ইউ কিট মনে করেন, আত্মরক্ষার নিজস্ব শক্তি ও ক্ষমতা অর্জন না করা পর্যন্ত আসিয়ান দেশগুলোকে মার্কিন নিরাপত্তার ছাতার তলেই থাকতে হবে।
অধ্যাপক কলিন্স ইউরেশিয়া রিভিউকে বলেন, গত কয়েক দশক ধরে আসিয়ান দেশগুলো নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভর করেছে। হঠাৎ করে চীন এই অবস্থানে যেতে পারবে না। আসিয়ান দেশগুলো এটা ভালো করেই জানে। যদিও বেইজিংকে এই অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক বিকল্প ও সম্পদের প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে দেখা হয়।
গালফ নিউজের সিনিয়র বিশ্লেষক বলরাম মেনন মনে করেন, অনেক বছর ধরে আসিয়ানসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে আসছে। অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্র ভোক্তা বাজার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিনিয়োগও বাড়াতে চায় ওয়াশিংটন।
থাইল্যান্ডের মাহিদোল ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল কলেজের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উইলিয়াম জে জোন্স মনে করেন, আসিয়ান রাষ্ট্রগুলোকে বহিরাগত শক্তির কাছে ঐক্যবদ্ধ বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদর্শন করতে ইচ্ছুক হতে হবে। ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতির পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে পূর্ব এশিয়াও। এজন্য আসিয়ানকে বাস্তবসম্মতভাবে একটি ঐক্যফ্রন্ট উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে চীন
ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে আসিয়ান ও চীনের মধ্যে সহযোগিতার গভীরতা আগের চেয়ে বেড়েছে। চীন দেশগুলোর সঙ্গে সখ্য গড়তে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহারকে গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা চীনকে এআই প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পরামর্শ দিয়েছেন।
এছাড়া চীন আঞ্চলিক সংযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য চালু করেছে ‘আসিয়ান ভিসা’। আন্তঃসীমান্ত ভ্রমণ এবং আঞ্চলিক একীকরণে এটি চীনের বড় পদক্ষেপ।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান মনে করেন, নতুন ভিসা সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যমান পারস্পরিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে।
গত ২৭ মে কুয়ালালামপুরে হয়ে গেল আসিয়ান-চীন-জিসিসি (উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ) শীর্ষ সম্মেলন। তিনটি পক্ষ তাদের নিজ বাজারকে সংযুক্ত করার মাধ্যমে বিশাল অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ উন্মোচন করতে পারে। তিন পক্ষের সম্মিলিত শক্তি বিশ্ব অর্থনৈতিক দৃশ্যপটকে নতুন রূপ দিতে পারে।
ক্ষমতার আধিপত্য বজায় রেখেছে ওয়াশিংটন
অধ্যাপক কলিন্স চং ইউ কিট মনে করেন, আসিয়ানে প্রযুক্তিগত আধিপত্যসহ অর্থনৈতিক ও সামরিক খাতে আগামী ৫০ বছর ওয়াশিংটন প্রধান ভূমিকায় থাকবে। এই সময়ের মধ্যে দেশগুলোতে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক বিভাজন ঘটতে পারে। ফলে বিনিয়োগ, প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তার জন্য তারা বিদেশি শক্তির ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এসব ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই সুবিধা নেবে যুক্তরাষ্ট্র।
কঠোর নিরপেক্ষতা থাকা সত্ত্বেও আসিয়ান দেশগুলো প্রায় নিশ্চিতভাবেই নতুন সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে বলেও মনে করেন কলিন্স চং। তিনি বলেন, দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান কেন্ত্রিক এই সংঘাত শুরু হতে পারে। এই সংঘাতে ওয়াশিংটন যুক্ত হয়ে পড়লে দক্ষিণ চীন সাগরে চীন বেকায়দায় পড়বে। ফলে আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে আরও অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা থাকবে।
সূত্র: গালফ নিউজ, ইউরেশিয়া রিভিউ, ইস্ট এশিয়া ফোরাম