কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, অস্ত্র প্রদর্শন
Published: 19th, October 2025 GMT
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। এ সময় দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। রোববার দুপুরে নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় রানীর দীঘির পাড়ে কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখার সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ধারণা, সংঘর্ষে জড়িত দুই পক্ষ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।
সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিরা হলেন মোস্তাফিজুর রহমান, অনয় দেবনাথ, মো.
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রোববার সকালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখার ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী জিসান ও তাহফিদ হোসেনের সঙ্গে একই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীন সিফাতের কথা–কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার সময় সিফাত অপর শিক্ষার্থী তাহফিদের ওপর হামলা করেন এবং জিসানকে মারধরের হুমকি দেন। পরে তাহফিদ ও সিফাতের মধ্যে মারামারি হয়। একপর্যায়ে সিফাত বিভিন্ন কলেজে থাকা তাঁর বন্ধু ও সঙ্গীদের মুঠোফোনে কল দিলে তাঁরাও কলেজের সামনে দীঘির পাড়ে অবস্থান নেন। পাশাপাশি জিসান ও তাহফিদের পক্ষেও আরেক পক্ষ অবস্থান নেয়।
স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য, দুপুর ১২টার পর কলেজের শিক্ষার্থীরা বের হওয়া শুরু করলে সিফাত তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে অপর পক্ষের ওপর হামলা চালান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় একজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র এবং কয়েকজনের হাতে দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। সংঘর্ষে আহত চারজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এদিকে রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনার ১২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক তরুণ হাতে ধারলো রামদা নিয়ে অন্য তরুণদের ধাওয়া করছেন। এ সময় এক তরুণের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। তবে তাঁর চেহারা ভিডিওতে দেখা যায়নি।
রোববার রাত আটটার দিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাসার ভূঁঞা বলেন, ‘যারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে, তারা কিশোর গ্যাং বলে জানতে পেরেছি। আমরা এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় জড়িত আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় এরই মধ্যে আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।’
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছার আগেই সংঘর্ষে জড়িত ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। এরপর নগরে অভিযান চালিয়ে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুই পক্ষ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের আটক করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ শুরু করেছে জানিয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইফুল মালিক প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরাই এই ঘটনায় জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া সেখানে আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো ব্যবহার হয়েছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আগ ন য় স ত র র স মন কল জ র স ঘর ষ র বব র এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা-১ আসনে জামায়াতের চমক, চূড়ান্ত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী
প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে খুলনা-১ আসনে বড় চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। প্রাথমিক পর্যায়ে মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন করে সংগঠনটির হিন্দু শাখার নেতা কৃষ্ণ নন্দীকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
খুলনা জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা এমরান হোসাইন বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রার্থী পরিবর্তনের এ কৌশলের মধ্যে দিয়ে আসনটিতে নিজেদের বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী দলটি।
আরো পড়ুন:
‘আমি রাজমিস্ত্রির ছেলে, খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছি’
লটারির মাধ্যমে ৫২৭ থানার ওসি পদে রদবদল
এর আগে বুধবার বিকেলে খুলনা মহানগর জামায়াতের কার্যালয়ে জেলার কর্মী সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি জেনারেল ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক।
জামায়াতের হয়ে প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কৃষ্ণ নন্দীও। জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাসে এবারই প্রথম অন্য ধর্মের কোনো ব্যক্তিকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলো, যা স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এক মাস ধরে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কৃষ্ণ নন্দীর নাম রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে অবশেষে তাকে প্রার্থী করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকায়। তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার ‘জামায়াতে ইসলাম সনাতনী‘র সভাপতি। এ উপজেলা ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। প্রায় এক বছর ধরে গোলাম পরওয়ারের ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় বিভিন্ন সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীর সক্রিয় উপস্থিতি দেখা গেছে। তার নেতৃত্বে হিন্দু নারী-পুরুষের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো।
মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কৃষ্ণ নন্দী বলেছেন, ‘আমাকে কেন্দ্রে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে জামায়াতের আমিরসহ উচ্চ পর্যায়ের নেতারা ছিলেন। তারা আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। আমি তাদের নির্দেশনা পেয়েছি। এলাকায় গিয়ে কাজ শুরু করব।”
এর আগে এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন মাওলানা আবু ইউসুফ। তাকে নিয়ে প্রশ্ন করলে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, “বুধবার জামায়াতের আমির আমাদের দুজনকে বুকে বুক মিলিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি নিজেই আমার জন্য প্রচারণায় নেমেছেন। জামায়াতের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।”
ডুমুরিয়ার চুকনগর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ নন্দী ২০০৫ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার সভাপতি এবং স্থানীয় সনাতন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “কঠোরভাবে আদর্শভিত্তিক জামায়াত হলো ন্যায় ও সততার দল। এখানে দুর্নীতি নেই, চাঁদাবাজি নেই, মাদক নেই। শান্তি-সমৃদ্ধি আনার দল বলে আমি জামায়াতকে বেছে নিয়েছি। ২০০৫ সাল থেকে এটি করছি, হঠাৎ নয়।”
আগের সরকারের আমলে কোণঠাসা ছিলেন বলে অভিযোগ তার। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দাপটে থাকা এই এলাকায় তিনি জামায়াত করার কারণে বিভিন্নভাবে চাপের মুখে ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন।
এর আগে খুলনা-১ আসনে মাওলানা মো. আবু ইউসুফকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল জামায়াত।
কৃষ্ণ নন্দী বলেন, “গত ১ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান খুলনায় এলে আমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। পরে আগের প্রার্থী মাওলানা ইউসুফকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে আমাকে প্রার্থী হিসেবে কাজ করতে বলা হয়। মাওলানা ইউসুফও আমার সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।”
খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুন্সী মঈনুল ইসলাম বলেন, “খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে। বাবু কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী করা হয়েছে। দলের সিদ্ধান্তে সবাই দাঁড়িপাল্লার হয়ে কাজ করবেন।”
সাবেক প্রার্থী মাওলানা আবু ইউসুফ বলেছেন, “দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমাকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিচালক করা হয়েছে। আমি কৃষ্ণ নন্দীর বিজয়ের জন্য সর্বাত্মক কাজ করব। তার পক্ষে আমি প্রচারণা শুরু করেছি। যেহেতু আমাকেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিচালক করা হয়েছে, সেহেতু সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি যথাসম্ভব কাজ করব, ইনশাআল্লাহ।”
ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক