বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিরাজগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে মহাসড়কের পর রেলপথও অবরোধ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। এতে ট্রেনসহ ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আজ সোমবার বিকেল চারটায় যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে মহাসড়কের গোল চত্বর এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তাঁরা সেতুর পশ্চিম পাড়ে সয়দাবাদ রেলস্টেশনে গিয়ে রেলপথও অবরোধ করেন।

এদিকে রাত ৮টার পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজ থেকে সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি স্থগিতের কথা জানানো হয়। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান।

ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার কথা নিশ্চিত করে আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে যমুনা সেতুর পশ্চিম সয়দাবাদ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, স্টেশনে শিক্ষার্থীরা ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি এক্সপ্রেস এবং কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকামুখী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। এতে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

যমুনা সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনারুল ইসলাম সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন করছেন। আমরা তাঁদের বারবার অনুরোধ করছি। আমাদের অনুরোধে একটু সময় মহাসড়ক ছাড়লেও আবার তাঁরা মহাসড়কটি অবরোধ করেছেন। মহাসড়ক বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করায় দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।’

আরও পড়ুনবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি বাতিলের দাবিতে সিরাজগঞ্জে আবারও মহাসড়ক অবরোধ৩ ঘণ্টা আগে

সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে বাজার স্টেশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল উদ্দিন বলেন, ‘পদবঞ্চিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে। আমরা এর চাইতে কিছু বলতে পারছি না।’

গত শনিবার রাতে আগামী ছয় মাসের জন্য ২৮৪ সদস্যবিশিষ্ট সিরাজগঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে সজীব সরকারকে আহ্বায়ক, মেহেদী হাসানকে সদস্যসচিব, ইকবাল হোসেনকে মুখ্য সংগঠক ও টি এম মুশফিক সাদকে মুখপাত্র করা হয়। এর পর ওই কমিটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

আন্দোলনে প্রকৃত ত্যাগীদের স্থান না দেওয়ার অভিযোগ তুলে ওই কমিটি বাতিলের দাবি তুলেছে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরে সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি বাতিলে ছয় ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় ‘জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্রসমাজ’। সেই সঙ্গে এই কমিটি প্রস্তুত করার জন্য কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন তাঁরা। এ সময় উপস্থিত নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া ৩০ জন স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

কমিটি বাতিলের দাবি বাস্তবায়িত না হওয়ায় আজ বিকেল চারটার দিকে আবারও মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল

ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র

গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।

গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানের

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।

ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।

ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ