কো-পাইলট চ্যাটবটে থাকা ত্রুটি খুঁজে দিলে আগের তুলনায় বেশি অর্থ দেবে মাইক্রোসফট
Published: 11th, February 2025 GMT
নিজেদের বিভিন্ন প্রযুক্তি ও অ্যাপে থাকা নিরাপত্তাত্রুটির সন্ধান পেতে ‘বাগ বাউন্টি’ কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে মাইক্রোসফট। এ কর্মসূচির আওতায় মাইক্রোসফটের তৈরি প্রযুক্তি ও অ্যাপে থাকা নিরাপত্তাত্রুটির সন্ধান দিতে পারলেই বিভিন্ন অর্থমূল্যের পুরস্কার পাওয়া যায়। এবার কো-পাইলট চ্যাটবটে থাকা নিরাপত্তাত্রুটির সন্ধান পেতে নিজেদের বাগ বাউন্টি কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি পুরস্কারের মূল্য বাড়িয়েছে মাইক্রোসফট।
মাইক্রোসফটের নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে কো-পাইলট চ্যাটবটে থাকা মাঝারি মাত্রার নিরাপত্তা ত্রুটি শনাক্ত করে রিপোর্ট জমা দিলে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত পুরস্কার পাওয়া যাবে। এ ছাড়া কো-পাইলটের বেশ কিছু সেবাকে নতুন করে বাউন্টি কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কো-পাইলট ফর টেলিগ্রাম, কো-পাইলট ফর হোয়াটসঅ্যাপ, কো-পাইলট ডট মাইক্রোসফট ডট কম এবং কো-পাইলট ডট এআই।
এক বিবৃতিতে মাইক্রোসফট জানিয়েছে, আমরা মাঝারি মাত্রার নিরাপত্তা ত্রুটির ক্ষেত্রে নতুন পুরস্কার কাঠামো চালু করেছি। গবেষকেরা এখন এ ধরনের ত্রুটি শনাক্ত করে প্রতিবেদন দিলে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত পুরস্কার পাবেন। নিরাপত্তা ত্রুটির মাত্রা অনুযায়ী পুরস্কারের মূল্য ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, গুরুতর নিরাপত্তা ত্রুটি হিসেবে বিবেচিত তথ্য বিকৃত করার ঘটনা শনাক্ত হলে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত পুরস্কার মিলবে।
প্রসঙ্গত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর সহকারীর আদলে তৈরি কো-পাইলট চ্যাটবটের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরির পাশাপাশি এক্সেলে বিভিন্ন টেবিল তৈরি করা যায়। শুধু তা-ই নয়, লিখিত প্রম্পটের মাধ্যমে কৃত্রিম ছবি তৈরিসহ আউটলুকে আসা ই-মেইলের উত্তরও পাঠানো যায়।
সূত্র: ব্লিপিং কম্পিউটার
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।