১০ বছর পর ছাত্রত্ব ফিরে পাচ্ছেন রাবির রফিকুল
Published: 17th, February 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে ফলিত গণিত বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী ছিলেন রফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় প্রথম হয়ে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হন। দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন তাকে ‘শিবির’ সন্দেহে তুলে নিয়ে থানায় সোপর্দ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তিনি চার মাস সাত দিন জেল খাটেন। জেলে বসেই দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দেন তিনি। এভাবে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ৩ দশমিক ৮০ পেয়ে অনার্সে প্রথম স্থান অর্জন করেন রফিকুল। পরে মাস্টার্সের থিসিস জালিয়াতির অভিযোগে তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর রেজিস্ট্রেশন পুনর্বহালের আবেদন করেন রফিকুল। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রিভিউ কমিটি গঠন করে প্রশাসন। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিয়ে সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে, মাস্টার্স শেষ করার ১০ বছর পর সনদ পাচ্ছেন রফিকুল।
চলতি মাসের ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৬তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এছাড়া এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় ওই বিভাগের তিন শিক্ষক ড.
জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলামের মাস্টার্সের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের মাধ্যমে ছাত্রত্ব হারানোর বিষয়ে গঠিত রিভিউ কমিটির প্রতিবেদন বিবেচনা করে তার ছাত্রত্ব পুনর্বহাল ও পরীক্ষার অপ্রকাশিত ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন ভালো ফলাফল করায় ‘শিবির’ সন্দেহে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রফিকুলকে তার নিজ বিভাগ থেকে তুলে নিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। এ সময় চার মাস সাত দিন কারাগারে থাকেন তিনি। কারাগারে থেকে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সেখানেও প্রথম হন রফিকুল। এভাবেই নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে অনার্সে ৩ দশমিক ৮০ পেয়ে বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি।
২০১৪ সালে মাস্টার্সে ভর্তি হন তিনি। এদিকে, ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট ফলিত গণিত বিভাগে দু’জন প্রভাষক চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে তিনি আবেদন করেন। তবে তার শিক্ষক হওয়া আটকাতে রফিকুলের বিরুদ্ধে থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হয়। থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ এনে ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬১তম সিন্ডিকেট সভায় তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়।
এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে গত বছরের অক্টোবরে উপাচার্য বরাবর আবেদন করি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি আমার জালিয়াতির কোনো প্রমাণ পায়নি। ফলে আশা করছি, ১০ বছর ৬ মাস পর আমার সনদ ফেরত পাব। জুলাই-আগস্টে আমার শত শত শহীদ ভাইয়ের আত্মত্যাগের ফলেই আমার অধিকার ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দিন খান বলেন, ‘রফিকুল বিভাগের ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট ছিলেন। শিক্ষক হওয়া ঠেকাতে থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ এনে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। যার কোনো সত্যতাই ছিল না। এ নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট এক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।’
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৬তম সিন্ডিকেট সভায় নিয়ম অনুযায়ী রফিকুল ইসলামের মাস্টার্সের ফলাফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র পর ক ষ বর ষ র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
নীলফামারীর সাবেক এমপি তুহিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ
দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও কর ফাঁকির পৃথক দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত নীলফামারী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলামের ছেলে।
মঙ্গলবার ঢাকার পৃথক দুই বিশেষ জজ আদালতে তার আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
প্রথমে কর ফাঁকি মামলায় জামিন শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক কবির উদ্দিন প্রামাণিক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক প্রদীপ কুমার রায়ের মামলাতেও তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়েছে।
শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, দুই মামলায় তাকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত সাজা দিয়েছিলেন। এ সাজার জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের নেই। আমরা উচ্চ আদালতে তার জামিন আবেদন করবো। আশা করি উচ্চ আদালত তার জামিন মঞ্জুর করবেন।
কর ফাঁকি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত এক এগারোর পর ২০০৭ সালে তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে দুদক। এর মধ্যে কর ফাঁকির মামলায় ২০০৮ সালে পৃথক দুটি ধারায় তিন বছর ও পাঁচ বছরসহ মোট আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। দুই ধারার সাজা একত্রে চলবে বিধায় তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজা ভোগ করতে হবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া অবৈধ সম্পদের মামলায় ২০০৮ সালে তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
জামিনের আবেদনে শাহরিন ইসলাম উল্লেখ করেন, তিনি ১৯৯৮-১৯৯৯ কর বছর থেকে ২০০৬-২০০৭ কর বছর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। তিনি সেখানে তার সব সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেছেন। বিচারিক আদালত থেকে তিনি ন্যায়বিচার পাননি বলে দাবি করেন।