করের আওতায় আসছেন গ্রামের ব্যবসায়ী-শিক্ষক
Published: 18th, February 2025 GMT
বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় করজাল বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। এ জন্য গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও শিক্ষকদের করের আওতায় আনতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীসহ সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবীকেও করের আওতায় আনা হবে। পেশাজীবীর মধ্যে যারা কর দেওয়ার মতো আয় করেন কিন্তু দিচ্ছেন না, তাদের তালিকা করতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে তিন দিনের ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অর্থ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এদিকে আসছে রমজান ও গরমের সময় বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় সচিবালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অফিস, মসজিদ, বাসাবাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্রের ব্যবহার ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, যেসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া যাবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। রোজার ঈদের আগে এক কোটি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। নিজ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন উপদেষ্টারা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ডিসিরাই সভায় উত্থাপন করেছেন গ্রামাঞ্চলে ব্যবসায়ীরা অনেক আয় করেন। তবে তারা কর দিচ্ছেন না। তাদের করের আওতায় এনে রাজস্ব বাড়াতে চায় সরকার। এ বিষয়ে এনবিআর এখন উদ্যোগ নেবে। এ ছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে ৫০ থেকে ৬০ লাখ; কিন্তু কর দেয় মাত্র ৫ লাখ। মোটকথা, জোর করে করের পরিমাণ না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানো হবে। ভ্যাটের মতো পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ বাড়াতে চায় সরকার।
উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশের চিকিৎসক-আইনজীবীরা নগদ টাকায় ফি নেন। এ জন্য সেবাগ্রহীতাকে কোনো রসিদও দেন না। এ কারণে তাদের করের আওতায় আনা যায় না। এই ফি যদি ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাহলে একটা রেকর্ড থাকে। বিদেশে এগুলো সব রেকর্ডেড। আইনজীবী বা অন্যান্য পেশার জন্যও এমন ব্যবস্থা করতে হবে। সম্মেলনে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়াতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।
এসির তাপমাত্রা রাখতে হবে ২৫ ডিগ্রিতে
আসছে রমজান ও গরমে এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি বা তার ওপরে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এ অনুরোধ উপেক্ষা করা হলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন কিংবা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি পর্যবেক্ষণে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দিষ্ট টিম কাজ করবে। কোথাও নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে সে এলাকায় লোডশেডিং হবে।
তিনি বলেন, শীতকালে আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৯ হাজার মেগাওয়াট। গ্রীষ্মে সেই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ থেকে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। সেচ যেহেতু খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাই একে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেব। তবে এসির যে ব্যবহার, এটা যদি পরিমিত আকারে ব্যবহার করা যায়, তাহলে কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আসবে আইনের আওতায়
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া গেলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বের করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল পুনর্গঠন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায়ও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সে অনুযায়ী জেলায় জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করা হবে। সেখান থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করা হবে। পরবর্তী সময়ে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জুলাই যোদ্ধারা ক্যাটেগরি অনুযায়ী এককালীন ও মাসিক ভাতা পাবেন। এ জন্য তিনটি ক্যাটেগরি হচ্ছে। ‘এ’ ক্যাটেগরির যোদ্ধারা এককালীন ৫ লাখ ও মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। ‘বি’ ক্যাটেগরির যোদ্ধারা এককালীন ৩ লাখ ও মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। আর ‘সি’ ক্যাটেগরির যোদ্ধারা পুনর্বাসন ও সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, এর পর যে সরকার আসবে, তারাও জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা নিয়ে আসবে। আশা করছি, জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের বিষয়গুলো পরবর্তী সরকারও অগ্রাধিকারে রাখবে। উপদেষ্টা জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রমের মালপত্র এখন থেকে স্থানীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করা হবে। দ্রুত সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছানো, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিসিদের তত্ত্বাবধানে ইউএনও এসব মালপত্র কিনবেন। প্রতি উপজেলায় এ খাতে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ইউএনওরা প্রয়োজনে মালপত্র কিনবেন। বর্তমানে ত্রাণসামগ্রী কেন্দ্রীয়ভাবে কেনা হয়।
রমজানে খাদ্যপণ্য দেওয়া হবে সুলভ ও বিনামূল্যে
খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, আগামী মার্চ ও এপ্রিলে ৩ লাখ টন চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজি করে তা ৫০ লাখ পরিবারকে দেওয়া হবে। পাশাপাশি ঈদের সময় ১ কোটি পরিবারকে বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। অধিবেশনে উপদেষ্টা রমজান মাসে খাদ্যপণ্য সুলভ ও বিনামূল্যে বিতরণ কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানান, রোজায় প্রায় ৭ লাখ টন খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার টন করে দুই মাসে বিতরণ করা হবে ১ লাখ টন চাল। ওএমএসের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন করে বিতরণ করা হবে আরও ১ লাখ টন।
তিনি বলেন, বিতরণ কার্যক্রম বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ করবে, তবে মূল তদারকি করবেন ডিসিরা। ঢাকা মেট্রোপলিটনে ১২২ কেন্দ্র এবং ৭০টি ট্রাক আছে। খাদ্য বিভাগ, ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবে বিতরণ কার্যক্রম তদারকিতে। ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা সনাতনী পদ্ধতি থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টা চান গোটা দেশ ডিজিটাল ব্যবস্থায় আসুক। পর্যায়ক্রমে মানুষের সমস্যা দূর হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সমঝোতার কারণে বড় দুর্নীতির অভিযোগই হয় না
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড.
তিনি বলেন, দুদক ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ সময় ব্যয় করে পুরাতন দুর্নীতি নিয়ে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, পুরাতন দুর্নীতি নিয়ে ২০ শতাংশ, বর্তমানের দুর্নীতি নিয়ে ৩০ শতাংশ এবং ভবিষ্যতের দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য ৫০ শতাংশ সময় ব্যয় করা উচিত। আমরা এই নির্দেশনা আমলে নিয়েছি। ওই নির্দেশনা জেলা প্রশাসকদেরও দিয়েছি। কারণ জেলা প্রশাসক হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে প্রধান কর্মকর্তা। ঘটনা যেখানেই ঘটুক, জেলা প্রশাসককেই আগে জানতে চাওয়া হয়। আবার দুর্নীতির প্রসঙ্গ এলে জেলা প্রশাসককেই জবাবদিহি করতে হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণাসূচক (সিপিআই) প্রতিবেদনের সঙ্গে দুদক একমত কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত আমরা পরীক্ষা করিনি। সিপিআই একটি ম্যাট্রিক্সের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশ করা হয়। ম্যাট্রিক্স নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে এটা ১৮০ দেশ গ্রহণ করে। আমরা এর বাইরে থাকতে পারি না।
বিচার ও নির্বাহী বিভাগের কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা আলাদা হলেও ব্যবহারিক প্রয়োজনে তাতে নিরবচ্ছিন্ন সমন্বয় প্রয়োজন।’ ডিসি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিচার বিভাগের প্রধান। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে ডিসিরা সাক্ষাৎ করেন।
আগামী নির্বাচন ভালো হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে ডিসিদের একাত্ম হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছেন, ১০০ টাকার মধ্যে ৪৬ টাকা উপযুক্ত ভাতাভোগী পান না। এ অবস্থায় ভাতা দেওয়ার জন্য অনলাইন পদ্ধতি করা হবে। আর ভাতা পেতে নতুন করে নিবন্ধনও করতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর আইন র আওত য় ন উপদ ষ ট ব যবস থ ব তরণ ক ব যবহ র ল খ টন দ র কর বল ছ ন রমজ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এসএসসিতে অনুপস্থিতির বড় কারণ বাল্যবিবাহ
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ছয় হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্য থেকে পাওয়া ১ হাজার ২০৩ জনের তথ্য বলছে, প্রায় ৪০ শতাংশের (৪৮১) বিয়ে হয়ে গেছে।
বিয়ে হওয়ার এ হার মেয়ে ও ছেলে মিলিয়ে। এ ছাড়া ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে। বাকিরা অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।
উদ্বেগের বিষয় হলো অনুপস্থিত ওই সব পরীক্ষার্থীর মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের প্রায় ৫১ শতাংশ আর পড়াশোনা করবে না। বাকিরা বলেছে, পরবর্তী বছরে পরীক্ষা দেবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের অধীন বিদ্যালয়গুলো থেকে এসব তথ্য পেয়েছে। এখন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
সারা দেশে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফরম পূরণ করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গতবারের চেয়ে প্রায় এক লাখ কম ছিল। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে।
বিয়ে হওয়ার এ হার মেয়ে ও ছেলে মিলিয়ে। এ ছাড়া ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে। বাকিরা অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।আবার এবার পরীক্ষার ফরম পূরণ করে অংশ না নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ছিল অন্যান্যবারের তুলনায় বেশি। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসব পরীক্ষার প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ছিল ২৬ হাজার ৯২৮ পরীক্ষার্থী। অথচ গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজার ৩৫৯ পরীক্ষার্থী।
প্রতিবছরই শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকে, কিন্তু কারণ জানা হয় না। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা অনুপস্থিতির প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ জন্য অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের তথ্য নির্ধারিত গুগল ফরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। অনুপস্থিতির কারণ জানার জন্য পরীক্ষার্থী বা অভিভাবকের সঙ্গে সশরীর বা মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করা এবং কোন কোন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত, তা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে নির্দেশ দিয়েছিল ঢাকা বোর্ড।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের বোর্ডের অধীন ৬ হাজার ৩৮৯ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের সবার তথ্য জানা যায়নি। ১ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণসহ তথ্য পেয়েছে ঢাকা বোর্ড। তার ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন করা হয়েছে। এসব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেও পরীক্ষা দেয়নি।
দেশে সাধারণত মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের পড়াশোনা বাদ দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দেখেছেন, অনুপস্থিত মেয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু ছেলেরও বিয়ে হয়েছে।ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী তথ্য পাওয়া ১ হাজার ২০৩ জন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের। ২৩ শতাংশ মানবিক বিভাগের ও ১৭ শতাংশ বিজ্ঞান বিভাগের। সাধারণত বিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনায় তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার কম।
অনুপস্থিত থাকাদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী প্রায় ৭০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ অনিয়মিত পরীক্ষার্থী। উল্লেখ্য, আগের বছর অকৃতকার্য বা দু–এককটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে যারা এবার পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের অনিয়মিত পরীক্ষার্থী বলা হয়।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের বোর্ডের অধীন ৬ হাজার ৩৮৯ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের সবার তথ্য জানা যায়নি। ১ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণসহ তথ্য পেয়েছে ঢাকা বোর্ড।ঢাকা বোর্ডের তথ্য বলছে, গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থীরাই বেশি অনুপস্থিত থাকে। তথ্য প্রাপ্ত ১ হাজার ২০৩ জনের মধ্যে ৭৬ শতাংশের বেশি গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থী। প্রায় ২৪ শতাংশ শহর এলাকার। সমতল এলাকায় মোট পরীক্ষার্থী বেশি হওয়ায় অনুপস্থিতিও সেখানে বেশি।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা যেসব তথ্য পেয়েছেন, সেগুলো প্রতিবেদন আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন, যাতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
যেসব কারণে অনুপস্থিতিযেসব কারণে পরীক্ষার্থীরা অনুপস্থিত ছিল, সেগুলোও জানার চেষ্টা করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে (১ হাজার ২০৩ জন), তাদের প্রায় ৪০ শতাংশের বিয়ে হয়েছে।
দেশে সাধারণত মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের পড়াশোনা বাদ দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দেখেছেন, অনুপস্থিত মেয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু ছেলেরও বিয়ে হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কতজন মেয়ে এবং কতজন ছেলে, তা উল্লেখ করা হবে।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২১ জন (প্রায় ২ শতাংশ) মেয়ে পরীক্ষার্থী গর্ভধারণের কারণে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল।
আইনানুযায়ী, বাংলাদেশে মেয়েদের ১৮ বছর ও ছেলেদের ২১ বছরের নিচে বিয়ে হলে সেটিকে বাল্যবিবাহ বলা হয়। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বয়স সাধারণত ১৮ বছরের নিচে হয়। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে।
নিজের অসুস্থতার জন্য ২৪ শতাংশের (১ হাজার ২০৩ জনের মধ্যে) বেশি পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। আর প্রস্তুতি ভালো না থাকার কারণে অনুপস্থিত ছিল ১১ শতাংশের বেশি। দারিদ্র্যের কারণও উঠে এসেছে এ তথ্যে। ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়েছে। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১৭ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া পরিবারের কোনো সদস্যের অসুস্থতা, মৃত্যুসহ অন্যান্য কারণে বাকিরা অনুপস্থিত ছিল।
এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। করোনার প্রভাবের কারণে অনেকেই বিভিন্ন স্তরে ঝরে পড়েছে। এসবের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমসহ একাধিক কারণের কথা বলে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এখন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের বড় অংশেরই বিয়ে হয়ে যাওয়ার তথ্য পেল ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
প্রথমত, সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনুপস্থিতির কারণ জানার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী‘সরকারকেই বেশি উদ্যোগী হতে হবে’বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ একটি বড় সমস্যা। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও বাংলাদেশের মতো এত বেশি বাল্যবিবাহ নেই।
জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশের ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ১৮ বছর হওয়ার আগেই। আবার ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী এক হাজার মেয়ের মধ্যে ৭১ জন এক বা একাধিক সন্তানের মা। গত মঙ্গলবার ইউএনএফপিএর বৈশ্বিক জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৫–বিষয়ক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত, সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনুপস্থিতির কারণ জানার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।’ তিনি বলেন, বাল্যবিবাহের পেছনে অসচ্ছলতা একটি বড় কারণ। এখনো দেখা যায়, অনেক অভিভাবক মেয়েদের জন্য বেশি ব্যয় করার চেয়ে ছেলে সন্তানের পেছনে ব্যয় করাকে বেশি প্রাধান্য দেন। আবার নিরাপত্তাহীনতাও মেয়েদের বাল্যবিবাহের একটি অন্যতম কারণ।
বাল্যবিবাহ রোধে সরকারকেই বেশি উদ্যোগী হতে হবে উল্লেখ করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এ জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও কাজে লাগানো যেতে পারে।