দেশ-মাটি-মানুষের শিল্পী ফকির আলমগীর। ‘গণ’ শব্দটির সঙ্গে ফকির আলমগীরের নাম যুগলবন্দি হয়ে আছে। দেশমাতৃকার জন্য নিবেদিত এ সংগ্রামী শিল্পীর ৭১ বছরের বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল ২৩ জুলাই ২০২১ সালে। এই খ্যাতিমান শিল্পীর দীর্ঘ জীবন খুব মসৃণ ছিল না।
ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত দিনটিই ফকির আলমগীরের জন্মতারিখ। ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঐতিহ্যবাহী কালামৃধা গোবিন্দ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে আসাদের মিছিলের সহযোদ্ধা ছিলেন ফকির আলমগীর। দেশাত্মবোধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে তিনি ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করতে সোচ্চার ছিল তাঁর বিপ্লবী দরাজ কণ্ঠ।
আত্মপ্রত্যয়ে অবিচল থেকেছেন এই সংগ্রামী শিল্পী। একজন সমাজ ও রাজনীতি সচেতন এ শিল্পী পৃথিবীর সব বিপ্লবী নেতার প্রতিই অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা পোষণ করতেন। দরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষের কথা, তাদের দুঃখ-কষ্ট-যাতনা তাঁর দরাজ কণ্ঠে প্রকাশ পেত। তিনি সংস্কৃতিকে ড্রয়িংরুম থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন রাজপথে।
ফকির আলমগীর শুধু গণসংগীত শিল্পী নন; রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে তিনি আদর্শিকভাবে গণসংগীতে সমন্বয় করেছেন। তাঁর কণ্ঠ রাজপথ ও বাংলার জনপদে দিন বদলের কথাই বলেছে।
ম্যান্ডেলা, পিটসিগার, বেঞ্জামিন মলয়েস্বি, ফিদেল কাস্ত্রো, চে গুয়েভারা, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর বিপ্লবী কণ্ঠস্বর মহাসমুদ্রের কলতানে কল্লোল সৃষ্টি করেছে।
নিজাম উল হক, আবদুল লতিফ, কামাল লোহানী, সাধন ঘোষ, সাধন রায়, আবু বকর সিদ্দিক, আলতাফ মাহমুদ, সলিল চৌধুরী, ভূপেন হাজারিকা, হেমাঙ্গ বিশ্বাসের মতো ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে এসে গণসংগীতে নিবেদিত শিল্পীতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি।
ফকির আলমগীর লোকজ ঐতিহ্য ও কৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন অনেক বই। তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার কথা’। জীবদ্দশায় তাঁর শেষ বই ছিল পবিত্র হজব্রত নিয়ে লেখা ‘ইহরাম থেকে আরাফাত’। অনেক পাণ্ডুলিপি রয়ে গেছে অপ্রকাশিত। তাঁর মৃত্যুর পর সংগ্রাম ও লাল-সবুজের পতাকা, সংস্কৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ, দেশান্তর, মায়ের মুখ বইগুলো আমি উদ্যোগ নিয়ে প্রকাশ করেছি।
ফকির আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ৩০ বছর চাকরি করেছেন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের গণযোগাযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে ২০০৭ সালে অবসরে যান।
জীবনে অনেক পুরস্কার ও পদক লাভ করেছেন তিনি। একুশে পদক, বাংলা একাডেমি ফেলো, সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার, তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক, জসীম উদ্দীন স্বর্ণপদক, ভাসানী পদক, ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার মমতা ব্যানার্জি কর্তৃক সংগীতে মহাসম্মাননা পেয়েছেন।
দেশের দুঃসময়ে, সুসময়ে ফকির আলমগীরের কণ্ঠের গান কখনও থেমে থাকেনি। তিনি দেশ-মাটি-মায়ের সঙ্গে ভালোবাসার অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে জড়িয়েছিলেন। বিদেশের মোহ কোনোদিন তাঁকে আচ্ছন্ন করতে পারেনি। স্বদেশের প্রতি এ রকম দায়বদ্ধতা তাঁকে জনগণের প্রাণের কাছাকাছি এনে দিয়েছিল। দেশ-জননীর তিনি আদরের সন্তান।
গান শুধু গানের জন্য নয়; গান জীবনের জন্য। প্রান্তিক মানুষের জীবনের আনন্দ-বেদনা, জীবনে বেঁচে থাকার নানা অনুষঙ্গ তাঁর গানে উঠে এসেছে জীবন্ত হয়ে।
ফকির আলমগীর বেঁচে থাকবেন তাঁর লেখা বই, গান ও গণমানুষের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য। এই মহৎ শিল্পীর চিরবিদায়ের তৃতীয় বছর অতিক্রান্ত। দেশের মানুষের কাছে তাঁর জন্য দোয়া কামনা করছি। আজ জন্মদিনে ফকির আলমগীরকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি।
সুরাইয়া আলমগীর: প্রয়াত শিল্পী ফকির আলমগীরের সহধর্মিণী এবং ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ দুই মাস। প্রশিক্ষণটি আগামী ১২ অক্টোবর শুরু হবে, চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সরকারি সনদ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে আবেদন করতে হবে।
প্রশিক্ষণের বিষয়১. বেসিক কম্পিউটার,
২. অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ইউনিকোড বাংলা,
৩. ইন্টারনেট,
৪. গ্রাফিক ডিজাইন,
৫. ফ্রিল্যান্সিং,
৬. মার্কেটপ্লেস ও কনসালটিং।
আরও পড়ুনহার্ভার্ড এনভায়রনমেন্টাল ফেলোশিপ, দুই বছরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আবেদনের যোগ্যতা১. ন্যূনতম দাখিল বা সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে,
২. হাফেজদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হবে,
৩. উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে,
৪. প্রার্থীকে কম্পিউটার চালনায় বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে,
৫. যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।যে ৮টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে১. ঢাকা,
২. চট্টগ্রাম,
৩. রাজশাহী,
৪. খুলনা,
৫. বরিশাল,
৬. সিলেট,
৭. দিনাজপুর,
৮. গোপালগঞ্জ।
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ৭ ঘণ্টা আগেদরকারি কাগজপত্র১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,
২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,
৩. এক কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে,
৪. ইমামদের ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে নেওয়া ইমামতির প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে,
৫. মাদ্রাসাছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে ছাত্রত্ব প্রমাণের কপি জমা দিতে হবে।
নিবন্ধন ফিমনোনীত প্রার্থীদের নিবন্ধন ফি হিসেবে ৫০০ টাকা দিতে হবে।
দেশের ৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে