যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র রক্ষায় রাজপথে থাকতে হবে
Published: 21st, February 2025 GMT
কেন এই মুহূর্তে আমরা সারাদেশে বিশেষত রক্ষণশীল এলাকাগুলোতে সমাবেশ করছি? উত্তর সুস্পষ্ট। ডিসি বেল্টওয়ের ভেতরে রাজনীতিবিদরা ট্রাম্পবাদ পরাজিত করতে পারবেন না। এটি শুধু লাখ লাখ মার্কিনের দ্বারা পরাজিত হবে। এ দেশের প্রতিটি রাজ্যে তৃণমূল পর্যায়ে একটি শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে উঠবে, যা অলিগার্ক, কর্তৃত্ববাদ, ক্লেপ্টোক্রেসিকে না বলবে। এ ছাড়া শ্রমজীবী মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কর্মসূচিতে ব্যাপক কাটছাঁট করা যাবে না এবং দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের জন্য বিশাল ট্যাক্স থেকে মুক্তিও দেওয়া হবে না। এসব কর্মসূচি মাথায় রেখেই সমাবেশগুলো হচ্ছে।
ট্রাম্পবাদ কি পরাজিত হতে পারে? নিশ্চয়! কিন্তু আমরা যদি সেটি করতে যাই, তাহলে জানতে হবে ঠিক কীসের বিরুদ্ধে আমরা লড়ছি এবং কীভাবে সবচেয়ে ভালোভাবে এগিয়ে যেতে পারি। আমাদের যা জানা দরকার তার কয়েকটি এখানে রয়েছে– ট্রাম্পবাদ বাস্তবায়নে বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক, যিনি ট্রাম্পের প্রচারণায় ২৭০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করেছেন, যা তাঁর সম্পদের এক ক্ষুদ্রাংশ। অন্যান্য মাল্টি বিলিয়নেয়ারও প্রয়োজন অনুযায়ী মাস্কের সঙ্গে যোগ দেবেন।
ট্রাম্পবাদ মিডিয়ার বড় অংশের ওপর উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, যেখান থেকে লাখ লাখ যুক্তরাষ্ট্রবাসী তাদের ব্যাপারে তথ্য পায়। ফক্স ও মাস্কের এক্স অন্য প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সাধারণ মিডিয়া আউটলেট নয়। তাদের মূল কাজ ‘সংবাদ’ পরিবেশন করা নয়, বরং ডানপন্থি চরমপন্থি মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া। ট্রাম্পবাদ ‘বড় মিথ্যা’ ধারণাকে এমনভাবে ব্যবহার করছে, যা এই দেশে কখনও দেখা যায়নি। দিনের পর দিন নির্লজ্জভাবে অসাধু বক্তব্য ও ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচার করা হয়, আর সেগুলোর বারবার পুনরাবৃত্তি হয়।
ট্রাম্পবাদ গণতন্ত্র বা আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না। ট্রাম্প সম্প্রতি পোস্ট করেছেন, ‘যে তার দেশকে বাঁচায় সে কোনো আইন লঙ্ঘন করে না।’ অন্য কথায়, ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, তাঁর মন চাইলে তিনি যে কোনো কিছু করতে পারেন। তিনি কংগ্রেস বা আদালতকে উপেক্ষা করতে পারেন। তিনি আইনের ঊর্ধ্বে। যখন ট্রাম্প তাঁর নিজের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করছেন, সেখানে অন্য কিছু চলমান।
আমাদের সংগ্রাম, আমেরিকান জনগণের সংগ্রাম গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষার জন্য। এটিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের অবশ্যই অলিগার্কের অবসান ঘটাতে হবে এবং এমন একটি অর্থনীতি তৈরি করতে হবে, যা শুধু কয়েকজনের জন্য নয়, সবার জন্য কাজ করে। আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ এবং এআই, রোবোটিক্স ও অন্যান্য নতুন প্রযুক্তি শুধু আমাদের দেশকে আরও সমৃদ্ধ করবে। এটি অযৌক্তিক, অন্যায্য ও অমানবিক যে, কার্যত যেসব নতুন সম্পদ তৈরি করা হচ্ছে তার সবটুকু সেসব লোকের কাছে যায়, যাদের এটির ন্যূনতম প্রয়োজন।
বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী দেশে নিম্নোক্ত শর্তগুলো অবশ্যই আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা একটি মানবাধিকার এবং নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের জন্য তা নিশ্চিত করতে হবে। আমেরিকার প্রত্যেক শ্রমিক একটি উপযুক্ত আয় উপার্জনের অধিকারী। আমাদের অবশ্যই তাদের সুন্দর জীবনযাপনের জন্য ন্যূনতম মজুরিতে উন্নীত এবং শ্রমিকদের ইউনিয়নে যোগদান সহজ করতে হবে। আমাদের অবশ্যই বিশ্বের সর্বোত্তম পাবলিক শিক্ষা ব্যবস্থা থাকতে হবে। স্নাতক পর্যন্ত শিশুসেবা থেকে শুরু করে সবার জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অবশ্যই আবাসন সংকট মোকাবিলা এবং লাখ লাখ ইউনিট স্বল্প আয়ের ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন তৈরি করতে হবে, যা আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অস্তিত্বের হুমকি মোকাবিলায় বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই লাখ লাখ ভালো বেতনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সব ধরনের গোঁড়ামির অবসান ঘটাতে হবে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, জাতি ও পরিবেশগত ন্যায়বিচারের নীতির ওপর ভিত্তি করে আমাদের কেবল একটি জাতির জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে না, আমাদের অবশ্যই ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়াশীল আইনি এজেন্ডার বিরুদ্ধে লড়াই ও নেতৃত্ব জারি রাখতে হবে। অভূতপূর্ব আয় ও বৈষম্যভিত্তিক সম্পদের পরিস্থিতিতে এই আইন আমাদের দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের জন্য ট্রিলিয়ন ডলার কর ছাড় দেবে। এটি ধনীদের আরও ধনী করে তুলবে। এ ঘটনা এমন সময়ে ঘটছে যখন এ দেশের শ্রমিক শ্রেণি খাবার ও আবাসনের জন্য অর্থ পেতে সংগ্রাম করছে। এ আইনটি স্বাস্থ্যবিষয়ক তহবিল, আবাসন, পুষ্টি, শিক্ষা ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা থেকে অন্যায্যভাবে কেটে রাখবে। এটি গরিবদের আরও গরিব করে তুলবে। আমরা এটি হতে দিতে পারি না। এই আইন ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয়, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ঠিক যা চায় না। এটি কংগ্রেস দ্বারা পাস করা উচিত নয়। এটিকে অবশ্যই পরাজিত করতে হবে এবং আমরা এটিকে পরাজিত করতে পারি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি এক বিপজ্জনক মুহূর্ত। আসুন একসঙ্গে এগিয়ে যাই।
বার্নি স্যান্ডার্স: মার্কিন সিনেটর; দ্য গার্ডিয়ান থেকে
ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র সবচ য পর জ ত র জন য ত করত
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’
তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’
আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’
ঢাকা/আসাদ/রাজীব