বিগত সময়ে ভারত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বৈধতা দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ আদায় করেছে। বাংলাদেশকে ভারতীয় আধিপত্য থেকে বের হয়ে আসতে হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে চালু রাখতে হবে। একই সঙ্গে প্রশাসনকেও ঢেলে সাজাতে হবে নিরপেক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ: প্রসঙ্গ ভারত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। ‘ন্যারেটিভ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সভায় ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসির (আইআইএলডি) পরিচালক শফিউল আলম শাহীন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভারত বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির পরিবর্তে দল কিংবা ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে; যে কারণে শেখ হাসিনার পতনের পর ভারত সংখ্যালঘু কার্ড খেলে তার স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে।

ভারতকে দল কিংবা ব্যক্তিভিত্তিক সম্পর্ক তৈরির নীতি থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতি মনোযোগী হতে আহ্বান জানান শফিউল আলম শাহীন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুল হক বলেন, জুলাই-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের নীতি কী হওয়া উচিত, সে বিষয়ে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের মূল চিন্তার কারণ হচ্ছে তার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের নিরাপত্তা।

ভারতের কেমন বাংলাদেশ নীতি হওয়া উচিত, সে বিষয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন দেশ সম্ভব হয়েছিল শুধু বাংলাদেশের মানুষের অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে। অন্য কোনো কারণে নয়। এটা ভারতকে অসাধারণ সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে দিয়েছিল, তবে তারা সেটা হারিয়েছে। [ভারতের নদীর] পানির ন্যায্য হিস্যা, সীমান্তে হত্যাসহ নানান উদাসীনতা ছিল। তবে সেটি গত ১৬ বছরে নতুন মাত্রা যোগ করে। যার কারণে বাংলাদেশের মানুষকে ভারত স্থায়ীভাবে হারিয়েছে। তবে সেটা কবে ফিরে পাবে, ঠিক নেই।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য মুস্তাইন জহির বলেন, জুলাই-পরবর্তী নতুন প্রজন্মের ভারতবিষয়ক অভিজ্ঞতা এবং একাত্তরের সময়ের প্রজন্মের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে ক্ষেত্রে জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে নতুন প্রজন্মের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত। এ প্রজন্মকে ভারতনীতির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে।

বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড.

সায়মা হক বলেন, বিগত সময়ে ভারত অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বৈধতা দেওয়ার মাধ্যমে তার স্বার্থ আদায় করেছে। বাংলাদেশকে ভারতীয় আধিপত্য থেকে বের হয়ে আসতে হলে যেমন স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত রেখে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে চালু রাখতে হবে, তেমনি প্রশাসনকেও নিরপেক্ষ এবং যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি দ্বারা ঢেলে সাজাতে হবে। পররাষ্ট্রনীতি তৈরিতে যোগ্য এবং দক্ষ লোকদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে বাংলাদেশ তার স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম হবে।

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক নায়েল রহমান বলেন, বাংলাদেশের ভারতনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ-উপযোগী পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করতে হলে দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ এবং জাতীয় স্বার্থকে সমন্বয় করতে হবে।

আলোচনা সভা পরিচালনা নুসরাত তাসনিম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রজন ম

এছাড়াও পড়ুন:

‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।

আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।

আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।

সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট
  • পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না: আসিফ নজরুল
  • বিসিআইসির নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ
  • এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী প্রস্তুতি নিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন
  • ৪৪তম বিসিএস: মনোনীত প্রার্থীদের তথ্য চেয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
  • ‘আগামীর বাংলাদেশে মিডিয়াকে দালাল হিসেবে দেখতে চাই না’ 
  • ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
  • মাইলস্টোনে দগ্ধ ৩৩ জন এখনো ভর্তি, আইসিইউতে ৩
  • শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনলে বোঝা যায়, তাঁর এখনো প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা আছে: আইন উপদেষ্টা
  • দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে