রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক ‘রক্তকরবী’ মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমণ্ডল মিলনায়তনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের প্রযোজনায় মঞ্চে আসছে কালজয়ী এ নাটকটি।

থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ জানিয়েছে, আজ থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সন্ধ্যা ৭টায় এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ বিকেল ৫টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নাটকটির প্রদর্শনী হবে। রক্তকরবী মঞ্চে নির্দেশনা দিয়েছেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানভীর নাহিদ খান। এতে ৩য় বর্ষের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের ২৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অভিনয় করছেন।

তানভীর নাহিদ বলেন, “বাংলাদেশে সম্প্রতি এক রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে আকাঙ্ক্ষা গড়ে উঠেছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে, রক্তকরবী নাটকটির রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিতা এ প্রযোজনা সৃজনের নেপথ্যে বিশেষ অনুপ্রেরণা সঞ্চার করেছে। জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাট্যভাষ্যরূপে এ প্রযোজনায় নানা চিহ্ন সৃজিত হয়েছে।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘রক্তকরবী’ নাটকটি লিখেছেন শতবর্ষ আগে। ২০২৩ সালের ২৬ এপ্রিল নাটকটি রচনার ১০০ বছর পূর্তি হয়। ‘রক্তকরবী’ রচনার শতবর্ষ পূর্তিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নাটকটি মঞ্চস্থ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছের তানভীর নাহিদ।

তিনি বলেন, “রক্তকরবীতে আমরা দর্শক-অভিনেতার নৈকট্য, নিরাভরণ মঞ্চ ও যৎসামান্য দ্রব্যাদি ব্যবহার দ্বারা দেশজ আঙ্গিকে উপস্থাপনের প্রতি মনোযোগ দিয়েছি। ঐতিহ্যবাহী দেশজ নাট্যের আবহে চারপাশে দর্শক পরিবেষ্টিত হয়ে মঞ্চস্থ হবে এই পালা।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রূপক সাংকেতিক নাটক রক্তকরবী। মানুষের প্রবল লোভ কীভাবে জীবনের সৌন্দর্য ও স্বাভাবিকতাকে অস্বীকার করে মানুষকে নিছক যন্ত্রে ও উৎপাদনের উপকরণে পরিণত করে এবং শোষকের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ কী রূপ ধারণ করে তারই রূপায়ণ ঘটে এ নাটকে।

থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন কাজী তামান্না হক সিগমা বলেছেন, রক্তকরবী এক দ্রোহ, যা শিল্প এবং সৃষ্টি দিয়ে রাজা নয়, রাজনীতির পরিবর্তন আনে; যা অর্থনৈতিক মুক্তির চেয়ে সৃজনের আলোয় মুক্তির পথ দেখায়। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন টকট

এছাড়াও পড়ুন:

শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ আনন্দ মোহনে ‘অচলাবস্থা’

দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আনন্দ মোহন কলেজ। ১১৭ বছরের পুরোনো এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ‘জ্ঞানের আঁতুড়ঘর’ হিসেবে পরিচিত। তবে বর্তমানে নানা সংকটে ধুঁকছে।

বর্তমানে কলেজটিতে ২১ বিভাগে স্নাতক (সম্মান) ও ২০ বিভাগে স্নাতকোত্তর চালু আছে। আছে উচ্চমাধ্যমিকও। সব মিলিয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪১ হাজার ৮৮৩ জন। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক আছেন মাত্র ১৮০ জন। যদিও শিক্ষকের অনুমোদিত পদের সংখ্যা ২০৮।

এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষের অভাব, আবাসনসংকট রয়েছে। পরিবহনও অপ্রতুল। এর বাইরে প্রায় দুই মাস ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। সাত দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে ‘অচলাবস্থা’ তৈরি হয়েছে।

বাইরে মেসে থাকতে মাসে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। হলে সুযোগ পেলে খরচ বাঁচত, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারতাম। মোরসালিন মিয়া, প্রথম বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ

শ্রেণিকক্ষের সংকট

ইংরেজি বিভাগে শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র দুটি। স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আজ (২১ অক্টোবর) এক ক্লাস শেষ হতেই রুম ছেড়ে দিতে হয়েছে, মাস্টার্স পরীক্ষা চলছে। অন্তত পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ দরকার, কিন্তু আছে মাত্র দুটি।’

কলেজে ৪১ হাজার ৮৮৩ শিক্ষার্থীর জন্য ৭৬টি শ্রেণিকক্ষ। গড়ে ৫৫১ শিক্ষার্থীর জন্য একটি কক্ষ। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, আরও অন্তত ৫০টি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তিনটি শ্রেণিকক্ষ। পরীক্ষার সময় অন্য বিভাগের কক্ষ ব্যবহার করতে হয়। আরও দুটি কক্ষ থাকলে ভালো হতো।’

এদিকে বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে শৌচাগারের সংকট। ইংরেজি বিভাগের একমাত্র শৌচাগারে কল নষ্ট, পানি নেই। শিক্ষার্থী মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলে-মেয়ে সবাই একই টয়লেট ব্যবহার করি, ফ্লাশ কাজ করে না।’

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নেসার আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বিভাগের শৌচাগারই নেই, অন্য বিভাগে যেতে হয়।’

বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম সিদ্দিকী বলেন, ‘সিঁড়ির পাশে থাকা শৌচাগার ব্যবহার করা হয়, স্থায়ী সমাধান দরকার।’

পর্যাপ্ত নয় পরিবহন

৪২ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে কলেজের নিজস্ব বাস আছে মাত্র তিনটি। মুক্তাগাছা, ফুলপুর ও হালুয়াঘাট রুটে চলে সেগুলো। ভালুকা-ময়মনসিংহ রুটে একটি ভাড়ায় নেওয়া বাস রয়েছে।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী হাফিজা আক্তার বলেন, ‘বাসে ৪০ জনের সিট, কিন্তু ঠাসাঠাসি করে ৮০ জন যাতায়াত করি। বাস মিস করলে ১৫০ টাকা খরচ হয়ে যায়। পরিবহন বাড়ানো খুব দরকার।’

কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, জেলার ১৩ উপজেলার শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বাস না থাকায় রুট বাড়ানো যাচ্ছে না।

নিয়ম এখন ‘অতিরিক্ত সিট’

কলেজে ছেলেদের তিনটি ও মেয়েদের চারটি হল আছে। ধারণক্ষমতা ছেলেদের ৩৫০ ও মেয়েদের ৪৫০, কিন্তু বাস্তবে থাকেন আরও বেশি।

কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থী আহমেদ জুনাইদ বলেন, ‘চারজনের রুমে এখন পাঁচজন থাকা নিয়ম হয়ে গেছে।’

খালেদা জিয়া হলের ছাত্রী আঞ্জুমান নাহার বলেন, ‘ছয়জনের রুমে থাকি ১২ জন। বছরে ৬ হাজার ৭০০ টাকা দিতে হয়, প্রতিদিন ৬০ টাকা মিল খরচ। কিন্তু ঠাসাঠাসিতে পড়াশোনা করা যায় না।’

যদিও হলের সুপার ও বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ঝরনা বেগম দাবি করেন, ‘রুমে ১০ জনের বেশি কেউ নেই, পুরোনো সমস্যাগুলো সমাধান করা হয়েছে।’

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, ছেলেদের নতুন পাঁচতলা হলের কাজ প্রায় শেষ। আরও একটি নতুন হল নির্মাণাধীন। তবে শিক্ষার্থীর তুলনায় আবাসন এখনো অপ্রতুল।

ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোরসালিন মিয়া বলেন, ‘বাইরে মেসে থাকতে মাসে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। হলে সুযোগ পেলে খরচ বাঁচত, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারতাম।’

রিডিং রুম নেই, গ্রন্থাগারও অচল

মেয়েদের চারটি হলে (সৈয়দা নাফিসা ইসলাম, তারামন বিবি, খালেদা জিয়া ও শহীদজননী জাহানারা ইমাম) কোনো রিডিং রুম নেই। তাঁরা ডাইনিং রুমেই পড়াশোনা করেন।

অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী সালিহা জাহান বলেন, ‘ডাইনিংয়ে কেউ খাবার না খেলে সেখানে বসেই পড়ি।’

গ্রন্থাগারে আছে প্রায় ৫০ হাজার বই, কিন্তু ভবন নির্মাণের কারণে দুই বছর ধরে অস্থায়ী কক্ষে চলছে কার্যক্রম। সেখানে বই থাকলেও নেই পাঠের জায়গা। নিবন্ধিত পাঠক মাত্র ৪২০ জন।

গ্রন্থাগারের কর্মী লাকি আক্তার বলেন, আগে সবাই এসে পড়ত, এখন জায়গা নেই বলে বই নিতে আসে কম।

তিন হলে এক ডাইনিং

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল, আবু সালেহ হল (তরুণ হল) ও জসীমউদ্‌দীন হল—ছেলেদের এ তিন হলের জন্য একটি ডাইনিং রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১৮৫ জনের খাবার রান্না হয়। তিন বেলা খাওয়ার জন্য লাগে ৭০ টাকা।

শিক্ষার্থী আহমেদ জুনাইদ বলেন, ‘প্রতিদিন একেক রুম থেকে মিল ম্যানেজার দায়িত্ব নেয়। টাকাটা আমরা নিজেরাই তুলি।’

ডাইনিংয়ের কর্মী আলাল উদ্দিন বলেন, ‘৭০ টাকায় তিন বেলা খাবার দেওয়া হয়। টাকার হিসাবে খাবার খারাপ নয়। কিন্তু টাকা ভালো হলে খাবারও ভালো হতো।’

সংকট সুরাহার দাবি

কলেজের অধ্যক্ষ আমান উল্লাহকে গত ৩১ জুলাই ওএসডি করা হয়। এরপর ৩ আগস্ট উপাধ্যক্ষ সাকির হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হন। তবে ১২ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থীদের একাংশ আন্দোলনে নামেন। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে চেয়ার বাইরে ফেলে দেন তাঁরা।

এখনো অফিসে যেতে পারছেন না ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। শিক্ষার্থীরা ২১ অক্টোবর সাত দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাঁদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে অনতিবিলম্বে অধ্যক্ষ পদায়ন করতে হবে; হিন্দু হল দ্রুত চালু করতে হবে; প্রশাসনিক কার্যক্রমে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া কলেজ ক্যাম্পাসে একটি পুলিশ বক্স চান শিক্ষার্থীরা।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাকির হোসেন বলেন, এত বড় কলেজে সমস্যা থাকবেই, পর্যায়ক্রমে সমাধান হবে। তবে কিছু শিক্ষার্থীর আন্দোলনের কারণে কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক ও রাজনীতিক আনন্দ মোহন বসুর নামে ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কলেজটি। তবে কার্যক্রম শুরু হয় পরের বছর, ১৯০৯ সালে। একসময় ময়মনসিংহ অঞ্চলের জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র ছিল আনন্দ মোহন কলেজ। কিন্তু এখন শ্রেণিকক্ষ, আবাসন, গ্রন্থাগার, পরিবহন—সব ক্ষেত্রেই সংকটে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ তার পুরোনো মর্যাদা ফিরে পাক, এটাই শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের চাওয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অ্যালবামের গল্প বলবে ‘পেনোয়া’
  • শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ আনন্দ মোহনে ‘অচলাবস্থা’