তর্ক-বিতর্কে যেন স্বৈরাচার সুযোগ পেয়ে না যায়: তারেক রহমান
Published: 24th, February 2025 GMT
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যার তারেক রহমান বলেছেন, “সংস্কার নিয়ে অবান্তর আলোচনা করে মূল কাজকে নষ্ট করা হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে অযাচিত তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে এমন কোনো পরিস্থিতি উদ্ভব না হয়, যাতে বাংলাদেশের ভালো চায় না এমন শক্তি (স্বৈরাচার) আবারো সুযোগ পায়।”
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। নগরীর সার্কিট হাউজ ময়দানে দীর্ঘ ১৬ বছর পর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলকে ঘিরে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। সকাল থেকেই নানা আনুষ্ঠানিকতায় কর্মসুচি শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, “দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। তবে এজন্য বসে থাকলে চলবে না। নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।”
আরো পড়ুন:
নোয়াখালীতে অস্ত্রসহ বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার
খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলনের উদ্বোধন
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “জনগণ আমাদেরকে আবারো সুযোগ দিলে অতীতের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করবে বিএনপি।”
রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির রুপরেখা ৩১ দফাতে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্পসহ সব সেক্টরে বিএনপি কাজ করবে। যুক্তরাজ্যে মানুষের স্বাস্থ্য সেবার সব দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তবে সেই জায়গায় পৌঁছাতে তাদের ৭৭ বছর লেগেছে।আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য সেই ব্যবস্থা গড়ে তুলব।”
তারেক রহমান অভিযোগ করেন, “স্বৈরাচার আমাদেরকে খাদের কিনারে পৌঁছে দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের শাসনামলে দেশের মানুষ প্রায় সবাই নির্যাতিত ছিল। মিথ্যা মামলা, গুম, খুন দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। ১৪০০ মানুষ শহীদ হয়েছেন মুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য। তাদের প্রত্যাশিত দেশ গড়তে দরকার স্থিতিশীলতা।”
নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দলে যতে বেশি গণতন্ত্রের চর্চা করা হবে ততে ভালো মানুষ পর্যায়ক্রমে নেতৃত্বে আসতে পারবে। একইভাবে দেশে গণতন্ত্র চর্চা হলে দেশ ভালো নেতৃত্ব পাবে। গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে বিএনপির প্রতিটি কর্মীকে অব্যাহতভাবে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।”
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছিল খুলনাতে। অনেক বছর পরে আবারও খুলনায় কাউন্সিলে থাকতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারেক রহমান।
এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে জাতীয় সঙ্গীত ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, খুলনা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, গবেষণা সম্পাদক কৃষিবীদ শামীমুর রহমান শামীম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সাবেক এমপি সৈয়দা নার্গিস আলী, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, কে এম হুমায়ুন কবির, হাফিজুর রহমান মনি, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী বাবু, মুর্শিদ কামাল, কাজী মিজানুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সৈয়দা নার্গিস আলী। শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা ফারুক হোসাইন। গীতা পাঠ করেন সত্যানন্দ দত্ত।
দ্বিতীয় অধিবেশনে খুলনা জেলা স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়ামে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের ৬টি পদে ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। ৫টি থানা কমিটির ৫০৫ জন ভোটার নির্বাচনের মাধ্যমে মহানগর বিএনপির আগামী নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই তিনটি পদে প্রার্থী হয়েছেন ১২ জন। মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে বর্তমান আহ্বায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহির এবং দৌলতপুর থানা বিএনপির সদস্য সাহাজী কামাল টিপু প্রার্থী হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন ৩ জন।
প্রার্থীরা হলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মাহমুদ আলী এবং মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর।
এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ জন প্রার্থী হলেন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাসুদ পারভেজ বাবু, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ সাদী, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহবুব হাসান পিয়ারু, যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শের আলম সান্টু, সাবেক ছাত্রদল নেতা হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজ ও তারিকুল ইসলাম তারেক। এর মধ্যে তারেক ছাড়া বাকিরা বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক।
তবে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ তার অনুসারীদের কেউ প্রার্থী হননি। কাউন্সিল ঘিরে তাদের তৎপরতাও চোখে পড়েনি।
২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর মহানগর বিএনপির ৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি এবং পরে ২০২২ সালের ১ মার্চ ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছিল। ইতোমধ্যে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ড, তিনটি ইউনিয়ন ও পাঁচটি থানায় সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্মেলনের পর মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে ১৫১ সদস্যের।
এর আগে খুলনা মহানগর বিএনপির সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর।
খুলনা/নুরুজ্জামান/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন গণতন ত র ল ইসল ম র রহম ন র সদস য র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’
তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’
আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’
ঢাকা/আসাদ/রাজীব