উরসুলা আন্দ্রেস
আদর্শ বন্ডগার্ল হিসেবে এখনো শীর্ষে উরসুলা আন্দ্রেস। প্রথম বন্ড ছবি ‘ডক্টর নো’তে সমুদ্র থেকে উঠে আসা হানি রাইডার–রূপী উরসুলা আন্দ্রেস তো এখনো আইকনিক বন্ডগার্ল। চরিত্রস্রষ্টা ইয়ান ফ্লেমিং নিজেও উরসুলাকে পছন্দ করেছিলেন ভীষণ।

‘ডক্টর নো’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

উচ্চ প্রবৃদ্ধি, বৈষম্যবাদী বিকাশ এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা

গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের সমাজ অর্থনীতির পুঁজিবাদী রূপান্তর ঘটেছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। প্রথাগত বিচারে ‘অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি’র অনেকগুলো দিকই চিহ্নিত করা যায়। যেমন অর্থনীতির আকার বেড়েছে অনেক, কংক্রিট অবকাঠামোর বিস্তার ঘটেছে, জিডিপি বেড়েছে বহুগুণ, আমদানি-রপ্তানির উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে, সড়কপথের বিস্তার ঘটেছে অনেক, পরিবহন ও যোগাযোগ সম্প্রসারিত হয়েছে, বহুতল ভবন বেড়েছে দ্রুত, রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে পোশাকশিল্প বড় সাফল্য তৈরি করেছে, প্রবাসী আয় বৈদেশিক মুদ্রার বিশাল মজুত তৈরি করেছে, প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক তৎপরতায় ক্ষুদ্রঋণ ও এনজিও মডেল অনেক বিস্তৃত হয়েছে, নগরায়ণ বেড়েছে, দেশের মধ্যে এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও সচলতা বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির গুণগত পরিবর্তন বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে অনেক নতুন উপাদান যোগ করেছে। অনেক পেশা নাই হয়ে যাচ্ছে আবার অনেক পেশা নতুন যোগ হয়েছে।

অনলাইন যোগাযোগের উল্লম্ফনে গ্রাম-শহরের বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনযাপন ও অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক তৎপরতায় এর প্রভাব পড়েছে ব্যাপক মাত্রায়। অসংখ্য মানুষের দৈনন্দিন জীবন এখন মুঠোফোন, ইন্টারনেট, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ইউটিউব, ওটিটি, বিকাশ, নগদনির্ভর হয়ে গেছে। অনলাইন ব্যাংকিং, অনলাইন সেমিনার-আলোচনা-পড়াশোনা, অনলাইন কেনাবেচা ব্যবসা-বাণিজ্য, অনলাইন সাংগঠনিক তৎপরতা, অনলাইন ধর্মীয় প্রচার দিনে দিনে বেড়েছে বহুগুণ। অনলাইন-অফলাইন বেচাকেনায় কম্পিউটার, মোবাইল, ইন্টারনেট, টিভি ইত্যাদির ব্যবসার প্রসার ঘটেছে, যার অনেকগুলোই আমদানি করা পণ্যের ওপরই নির্ভরশীল। বেসরকারি ক্লিনিক, ল্যাবরেটরি ও হাসপাতাল, বেসরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও, কনসালট্যান্সি ফার্ম ইত্যাদির বিস্তার ঘটেছে অনেক। এ সময়ে সিনেমা হল কমেছে, সিনেপ্লেক্স হয়েছে কিছু; পাঠাগার, থিয়েটার হল, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সেভাবে বাড়েনি, কিন্তু বহুগুণ বেড়েছে দেশি-বিদেশি খাবারের দোকান, শপিং মল; পাবলিক বাস বেড়েছে কিছু, কিন্তু তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে প্রাইভেট গাড়ি। সমাজে ধর্মচর্চা বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি।

তবে জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি বা কথিত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যেভাবে ঘটছে, তার সামাজিক ও পরিবেশগত মূল্য অনেক বেশি। যেমন যে দশকে জিডিপির প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হারে ঘটেছে, সেই সময়ে বন বিনাশের হার দেখা গেছে সবচেয়ে উঁচু। নদী-নালা, খাল-বিল ও বনদূষণ, দখল ও বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। এ সময়েই দেশে একটি অতি ধনিকগোষ্ঠীর আবির্ভাব হয়েছে। তাদের বিত্তবৈভব যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন মাথা গণনায় দারিদ্র্যের প্রচলিত সংজ্ঞা বা কোনোভাবে টিকে থাকার আয়সীমার নিচে মানুষের সংখ্যা চার কোটির বেশি। যদি দারিদ্র্যসীমায় শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, মানবিক মর্যাদার প্রশ্ন যুক্ত করা হয় তাহলে দেখা যাবে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষই অমানবিক জীবনে আটকে আছেন। গত এক বছরেও দারিদ্র্য ও বৈষম্য বেড়েছে। 

গত কয়েক দশকে জনসংখ্যার তুলনায় খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে চার গুণের বেশি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষের যথেষ্ট পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্যের সংস্থান হয়নি। দেশে কৃষকদের জীবনও বহু দিক থেকে বিপন্ন। ফসলের দাম, অনিশ্চয়তা, বিষের মধ্যে বসবাস, দখল-দূষণ সবই তাদের অস্থির করে রাখে। টিকে থাকার জন্য তাদের খুঁজতে হয় নতুন নতুন অবলম্বন। শিক্ষা ও চিকিৎসার বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে ব্যাপক মাত্রায়। দোকানদারি অর্থনীতির উপযোগী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রসার ঘটছে, যেখানে বিজ্ঞান, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস বিষয়ে মৌলিক জ্ঞানচর্চা বাহুল্য জ্ঞান করা হয়। আশা-আকাঙ্ক্ষা ও বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে বাজার, ভোগবাদিতা ও নিয়তিবাদিতার প্রভাব বেড়েছে।

বৈষম্যের বিরোধিতা করে যে গণ–অভ্যুত্থান ঘটেছে, সেই বৈষম্য দূর করার পথে আমরা কতটুকু এগোলাম?

সম্পর্কিত নিবন্ধ