পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫৪ ইটভাটার মালিককে চার লাখ টাকা করে জরিমানা
Published: 6th, March 2025 GMT
বারবার রিট করে অবৈধ ইটভাটা পরিচালনায় জড়িত থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫৪ ইটভাটার মালিকদের প্রত্যেককে চার লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। এ–সংক্রান্ত রুল (ডিসচার্জ) খারিজ করে এ রায় দেওয়া হয়। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ওই অর্থ জমা দিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের তথ্যমতে, ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের প্রশাসনিক উদ্যোগ চ্যালেঞ্জ করে পার্বত্য জেলার ইটভাটার মালিকদের পক্ষে ২০২৩ সালে রিট করা হয়। আদালত রুল দিয়ে ইটভাটাগুলো উচ্ছেদ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। অন্যদিকে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে হাইকোর্ট লাইসেন্সবিহীন সব ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন। এ অনুসারে স্থানীয় প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে গেলে পার্বত্য জেলার বেশ কয়েকজন ইটভাটার মালিক হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেখান। এ অবস্থায় মালিকদের করা রিটে পক্ষভুক্ত হয় এইচআরপিবি।
এইচআরপিবির তথ্যমতে, চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট পার্বত্য জেলায় অবস্থিত ইটভাটার মালিকদের রিট খারিজ করে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ইটভাটার মালিকেরা আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ২০২৩ সালের ৪ জুন আপিল বিভাগ ইটভাটার মালিকদের আবেদন নিষ্পত্তি করে ইটভাটার জন্য স্থান নির্বাচন বিষয়ে ইটভাটাগুলোর মালিকদের আবেদন দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে এ–সংক্রান্ত কমিটিকে নির্দেশ দেন। তবে তখন কোনো স্থগিতাদেশ বা স্থিতাবস্থার আদেশ দেওয়া হয়নি বলে জানায় এইচআরপিবি। পার্বত্য চট্টগ্রামে ইটভাটার কার্যক্রম চালাতে মালিকপক্ষ থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আরেকটি রিট করা হয়। শুনানি নিয়ে একই বছরের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। সর্বশেষ গত মাসের ১২ ফেব্রুয়ারি স্থিতাবস্থার মেয়াদ আরও ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়।
এ বিষয়টি সম্পর্কে জানার পর তা আদালতকে অবহিত করেন বলে জানান হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এ অবস্থায় মালিকপক্ষের করা এ–সংক্রান্ত রিটটি আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। শুনানি নিয়ে রুল খারিজ করে রায় দেওয়া হয়। আদালতে এইচআরপিবির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো.
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, রুল খারিজ করে দিয়ে স্থিতাবস্থার আদেশ প্রত্যাহার করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রিট আবেদনকারীদের (মালিকপক্ষ) সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে অর্থাৎ বারবার রিট করে অবৈধ ইটভাটা পরিচালনায় জড়িত থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫৪ ইটভাটার মালিকদের প্রত্যেককে চার লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ওই টাকা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের অনুকূলে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইটভ ট র ম ল ক এইচআরপ ব খ র জ কর আইনজ ব র ট কর
এছাড়াও পড়ুন:
পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা আপাতত বহাল, চলবে না কার্যক্রম
রাজধানীর সার্ক ফোয়ারা মোড় সংলগ্ন ‘পান্থকুঞ্জ পার্ক’ ও হাতিরঝিল জলাধারের উন্মুক্ত স্থানে যেকোনো ধরনের নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ আপাতত বহাল থাকছে। ফলে যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায়ই থাকবে, অর্থাৎ নির্মাণ কার্যক্রম চলবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আজ মঙ্গলবার নট দিজ উইক (চলতি সপ্তাহে নয়) বলে আদেশ দিয়েছেন। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করতে বলা হয়েছে।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল দিয়ে ‘পান্থকুঞ্জ পার্ক’ ও হাতিরঝিল জলাধারের উন্মুক্ত স্থানে যেকোনো ধরনের নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেন। ফলে হাতিরঝিলের যে অংশে কাজ চলছিল বা চেষ্টা করছিল, সেই অংশে এবং পান্থকুঞ্জে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলবে না বলে তখন জানান রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আজ আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় ১৬ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ শুনানিতে ছিলেন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন কুমার বড়ুয়া।
পরে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট নির্মাণ কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছিলেন। যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় থাকবে, অর্থাৎ নির্মাণকাজ চলবে না। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। স্থগিতাদেশ দেননি আদালত। এতে করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল আছে। হাইকোর্টের প্রত্যায়িত আদেশ ইতিমধ্যে হাতে এসেছে। রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়ের করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদনটি করা হয়েছিল। যেহেতু হাইকোর্টের আদেশের প্রত্যায়িত অনুলিপি ইতিমধ্যে বেরিয়েছে, তাই নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়ের করতে বলা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে শুনানি হতে পারে।
সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের এফডিসি (চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন) থেকে পলাশী পর্যন্ত সম্প্রসারণে পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল জলাধারের উন্মুক্ত স্থানে নির্মাণকাজের বৈধতা নিয়ে পরিবেশসচেতন নাগরিক ও বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের’ সমন্বয়ক আমিরুল রাজীবসহ ৯ বিশিষ্ট নাগরিক ৯ সেপ্টেম্বর রিটটি করেন। অপর আবেদনকারীরা হলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, আইনজীবী সৈয়দ মাহবুবুল আলম, লেখক ও গবেষক ফিরোজ আহমেদ ও গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাঈম উল হাসান।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে পান্থকুঞ্জ পার্ক এবং হাতিরঝিলে বিনোদন ও অন্য উদ্দেশ্যে জনসাধারণের প্রবেশাধিকারে হস্তক্ষেপ না করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে এফডিসি (চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন) থেকে পলাশী পর্যন্ত সম্প্রসারণে পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল এলাকার ভেতরে নির্মাণকাজ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সম্প্রসারণকাজ অন্য কোনো উপযুক্ত স্থানে স্থানান্তর করতে এবং মগবাজার থেকে এফডিসি পর্যন্ত হাতিরঝিল জলাধার পুনরুদ্ধারে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুসচিব, সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক ও সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালকসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।