২০২৪ সালে মার্কিন সাংবাদিক জো শিফার এ বিষয়ে একটি বই লেখেন—‘এক্সট্রিমলি হার্ডকোর: ইনসাইড ইলন মাস্কস টুইটার’। শিফার নিউজ সাইট প্ল্যাটফর্মারের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। জো শিফার তাঁর বইয়ে ইলন মাস্কের বিভিন্ন আচরণ সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেন। মাস্ক যেভাবে নিজের প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের ইউনিয়ন করতে দেন না, তা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেন। ইলনের ‘উইক মাইন্ড (দুর্বল মন)’ ভাইরাস রয়েছে বলে মনে করেন জো শিফার। ইলন টুইটারের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করাতে চেয়েছিলেন। ইলন মাস্ক যেভাবে সিলিকন ভ্যালি ও মার্কিন রাজনীতিতে ‘ব্রোলিগার্কি’র ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করেছেন, তা নিয়ে মার্কিন সাংবাদিক জো শিফারের বেশ লেখালেখি দেখা যায়। ২০২২ সালে ইলন মাস্ক আগের মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার (বর্তমান নাম এক্স) অধিগ্রহণ করেন। ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর ইলন টুইটার কেনার পরে লিখেছিলেন, পাখি মুক্ত হয়েছে। ইলন মাস্ক টুইটার অধিগ্রহণে ব্যয় করেন ৪ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। নানা ধরনের আইনি লড়াই আর আলোচনার মধ্য দিয়ে টুইটার অধিগ্রহণ করেন ইলন মাস্ক।

জো শিফার সম্প্রতি আল–জাজিরায় ইলন মাস্কের আচরণ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছেন। এ সময়ে প্রযুক্তি খাতে নারীদের টিকে থাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, সিলিকন ভ্যালিতে শীর্ষ পদে নারীর উপস্থিতি একেবারেই কম। নারীদের এখানে আসার পথে অনেক বাধা রয়েছে। সবাইকে নিয়ে একটি সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করতে হবে। এই খাতকে সবার জন্য নিরাপদ করা প্রয়োজন। ইলন মাস্কসহ অন্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের আচরণকে ব্রোলিগার্কি হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।

ব্রোলিগার্কি শব্দটি দুই বছর ধরে প্রযুক্তির দুনিয়ায় বেশ আলোচনায় আসছে। অতিধনী পুরুষদের একটি ছোট গোষ্ঠীর সদস্যদের এই নামে ডাকা হচ্ছে। প্রযুক্তি খাতের প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন ব্যক্তি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খাতে কয়েক বছর ধরেই প্রভাব তৈরি করছে। তাঁদের এই দলে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ভাইয়ের ইংরেজি শব্দ ব্রাদারের সংক্ষিপ্ত রূপ থেকে ব্রো শব্দটি এসেছে। আর অলিগার্কি শব্দটি সমাজে শক্তিশালী কয়েকজন ব্যক্তির শাসনকে প্রকাশ করা হয়। ব্রোলিগার্ক নামের বড় ভাইদের কারণে অনেক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ব্রোলিগার্কি ধারণাটি এই শতকের প্রথম দিকে দেখা যায়। কয়েকজন মিলে যখন একটি ছোট দল তৈরি করে সার্ফিং স্পটে আধিপত্য বিস্তার করে, তখন এই শব্দ ব্যবহার করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শব্দটি সামাজিক বিষয় থেকে প্রযুক্তি দুনিয়ার শীর্ষ ধনীদের প্রভাবকে প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে কন্ডা ন্যাস্ট নামের একটি গণমাধ্যমের সম্পাদক লুক জালেস্কি ইলন মাস্ককে বিশ্বের প্রথম ব্রোলিগার্ক হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি এই শব্দকে মূলধারার বক্তৃতায় প্রথম প্রবর্তন করেন।

টেক ব্রোলিগার্কদের উত্থান সম্পর্কে এই শব্দ ব্যবহার করা হয়। ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ব্রোলিগার্কির প্রাধান্য দেখা যায়। প্রযুক্তি দুনিয়ার আলোচিত ব্যক্তিত্বরা মার্কিন নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সেই ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে বেশ ভালোই। স্পেসএক্সের ইলন মাস্ক, অ্যামাজনের জেফ বেজোস, ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ আর গুগলের সুন্দর পিচাইয়ের মতো বিলিওনিয়ার ব্যক্তিরা প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানের মঞ্চে চমক তৈরি করেন। তাঁরা নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্ভাব্য মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের সামনে অবস্থান করেন। মার্কিন নির্বাচনে ও ট্রাম্পের দ্বিতীয়বারের উত্থানে প্রযুক্তি দুনিয়ার যথেষ্ট পরিমাণ অর্থের কথা শোনা যায়। এসব অতিধনী প্রযুক্তি উদ্যোক্তা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনাকে প্রভাবিত করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাস্তবে অনেক প্রমাণ দেখা যাচ্ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসনে মন্ত্রিসভার সদস্য নিয়োগে তাঁদের প্রভাব দেখা যায়। ইলন মাস্ক, বায়োটেক উদ্যোক্তা বিবেক রামাস্বামীসহ ১৩ জন বিলিয়নিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ট্রাম্পের নতুন প্রতিষ্ঠিত সরকারি দক্ষতা বিভাগ, যা ডজ নামে পরিচিত, এই বিভাগ তৈরির পেছনে টেক ব্রোলিগার্কদের ভূমিকা আছে। প্রযুক্তি খাতে ধনী ও অভিজাতদের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার কারণে গণতান্ত্রিক নীতি হুমকির মুখে পড়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। ধনী প্রযুক্তিবিদেরা তাঁদের স্বার্থের কারণে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে গুরুত্ব দেবে না বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রোলিগার্কির প্রভাব সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালকে ইয়ার অব ব্রো বা ভাইদের বছর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ব্রোদের উত্থানকে বেশ দুশ্চিন্তার সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

সূত্র: আল–জাজিরা ও দ্য গার্ডিয়ান

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক ২০২৪ স ল ট ইট র গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিশেষ অনুষ্ঠান

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, যুবসমাজ শুধু আমাদের ভবিষ্যৎই নয়, বাংলাদেশে তারা আমাদের ‘বর্তমান’। এক বছর আগে, তাদের হাত ধরেই সমতা, স্বচ্ছতা এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের দাবি সার্বজনীন জন-আকাঙ্ক্ষায় রূপ নেয়।

আরো পড়ুন:

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস খোলার সিদ্ধান্ত সরকারের বড় অসতর্কতা: মঞ্জু

গাজাকে নিশ্চিহ্ন করার কোনো ন্যায্যতা থাকতে পারে না: গুতেরেস

তৌহিদ হোসেন আরো বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য- সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। 

তিনি তার বক্তব্যে বিগত এক বছরে বর্তমান সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর কথা তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাকে বৈশ্বিক বাস্তবতার সঙ্গে অত্যন্ত সঙ্গতিপূর্ণ মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন বলেন, তারুণ্যের প্রতি আস্থা রাখলে তারা জাতি গঠনের কেন্দ্রে দাঁড়াতে পারে।  তিনি বলেন, যারা এক সময় মিছিলের অগ্রভাগে ছিল, আজ তারা নীতিনির্ধারণে অংশ নিচ্ছে, আর আগামী দিনের দিকনির্দেশনা ঠিক করতে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছে।  বাংলাদেশে তারুণ্যের নেতৃত্ব জাতিসংঘের যুববিষয়ক নীতি ও কার্যক্রমের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার সফল গণআন্দোলনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানমালার আলোকে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কিত তথ্যচিত্র এবং পোস্টার, দেয়াললিখন ও আলোকচিত্র প্রভৃতির প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নবযাত্রায় যুব সমাজের অনন্য অবদানকে উদযাপন করা হয়। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তাবৃন্দসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে এই বিশেষ আয়োজনে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের ইয়ুথ অফিসের প্রতিনিধি ড. সুধা বালাকৃষ্ণণ বক্তব্য রাখেন।

ড. বালাকৃষ্ণণ তার বক্তব্যে বলেন, জাতিসংঘ সমাজ পরিবর্তনে যুবসমাজের সত্যিকারের অংশগ্রহণকে সর্বদাই উৎসাহিত করে থাকে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের অগ্রভাগে থাকা যুবশক্তি তাই অন্যান্য সমাজের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।

উল্লেখ্য, ফিলিস্তিন সমস্যার দুই-জাতি-ভিত্তিক সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের একটি উচ্চ-পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বর্তমানে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন।

ঢাকা/হাসান/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পিডিবির ভুলে ২৪৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হলো বাংলাদেশকে
  • জুলাইয়ের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স ২৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • নির্বাচনের রোডম্যাপে কবে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ
  • ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
  • এ দেশে খুচরা ব্যাংকিং বন্ধ করে দিচ্ছে এইচএসবিসি
  • রাবিপ্রবির ১০ শিক্ষার্থীর সনদ-ছাত্রত্ব বাতিল
  • জন্মহার বাড়াতে চীনের নতুন উদ্যোগ, শিশুদের জন্য মা-বাবা পাবেন ভাতা
  • সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • ‘রাষ্ট্রীয় শোক’ প্রত্যাখ্যান
  • জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিশেষ অনুষ্ঠান