খাদের কিনার থেকে যেভাবে শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাল সিটি ব্যাংক
Published: 10th, March 2025 GMT
আমার আগের প্রজন্মের সময় ব্যবসা নয়, মানুষ দেখে ঋণ দেওয়া হতো। ফলে অনেক ঋণ খারাপ হয়ে পড়ে। ব্যাংকটি সমস্যাগ্রস্ত তালিকায় পড়ে যায়। সেখান থেকে ব্যাংকটিকে সঠিক পথে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে দিতে একরকম চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি দায়িত্ব নিই– আজিজ আল কায়সার, চেয়ারম্যান, সিটি ব্যাংক
ব্যাংকটির শুরুর উদ্যোক্তা ছিলেন ১২ জন তরুণ ব্যবসায়ী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আনোয়ার গ্রুপ, ফিনিক্স গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, আজিজ গ্রুপ, হোসাইন গ্রুপ ও নূরানী অ্যাগ্রোর উদ্যোক্তারা। ব্যাংকটির প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন ফিনিক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান দীন মোহাম্মদ। ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন, এম এ হাশেম, ইব্রাহিম মিয়া, আবুল বারিক চৌধুরী ও দীন মোহাম্মদ। ১৯৯৩-৯৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি ছিল লোকসানি ব্যাংক। পরিস্থিতি এতই খারাপ হয়ে পড়ে যে নিয়ন্ত্রণমূলক মূলধনেও ঘাটতি দেখা দেয়। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এটিকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে উদ্যোক্তারা কোনোভাবেই ব্যাংকটিকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে বের করে আনতে পারছিলেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন ব্যাংকটির সব ধরনের কেনাকাটা, ঋণ প্রদানসহ সব ক্ষেত্রে আগাম অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। সরকারি-বেসরকারি খাতের অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের এনে ব্যাংকের কিছুটা উন্নতি হলেও পুরো সংকট থেকে বের হতে পারেনি। ২০০৫ সালের নভেম্বরে সমস্যাগ্রস্ত তালিকা থেকে বের হলেও ‘আর্লি ওয়ার্নিং’ তালিকায় ছিল ব্যাংকটি। ২০০৭ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন আজিজ আল কায়সার। তিনি দেশি-বিদেশি ব্যাংকে অভিজ্ঞদের ব্যাংকটিকে ঘুরে দাঁড় করানোর দায়িত্ব দেন। তাঁদের নানা উদ্যোগের ফলে ব্যাংকটি সংকট কাটিয়ে শক্তিশালী ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
আজিজ আল কায়সার বলেন, ‘সিটি ব্যাংক সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের তালিকা থেকে বের হলেও আমার অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষক বহাল রাখে। আমি চেয়েছিলাম ব্যাংকটি উন্নতি করতে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে, তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিবিড় তদারকি থাকুক। এতে অন্যরা সতর্ক থাকবে। যার সুফল আমরা পেয়েছি।’
গেম চেঞ্জারসিটি ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার আগে থেকে পরিচালনা পর্ষদে থাকলেও ২০০৭ সালের জুনে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। পরের মাসেই ইস্টার্ণ ব্যাংককে সফল রূপান্তরে নেতৃত্ব দেওয়া কাজী মাহমুদ সাত্তারকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির এমডি ছিলেন। তাঁর সঙ্গে তখন যোগ দেন বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্যাংকে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আরও ৪ ব্যাংকার। এর মধ্যে তখন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে যোগ দেন সোহেল আর কে হুসেইন, খুচরা ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন মাসরুর আরেফিন, ট্রেজারি বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন শেখ মোহাম্মদ মারুফ ও করপোরেট ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন ইউসুফ সাঈদ। কাজী মাহমুদ সাত্তারের পর সোহেল আর কে হুসেইন ছয় বছর সিটি ব্যাংকের এমডি ছিলেন। বর্তমানে তিনি ব্যাংক এশিয়ার এমডি। মাসরুর আরেফিন ২০১৯ সাল থেকে সিটি ব্যাংকের এমডি ও শেখ মোহাম্মদ মারুফ গত বছর ঢাকা ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দিয়েছেন। ইউসুফ সাঈদ সিটি ব্যাংকে যোগ দেওয়ার এক বছর পর কাতার ন্যাশনাল ব্যাংকে চলে যান। এখন তিনি কাতারের রিচমন্ড কনসালট্যান্ট অ্যান্ড সার্ভিসেসের কো-এমডি। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও দেশি-বিদেশি ব্যাংকের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা। পাশাপাশি তরুণ মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া শুরু করে ব্যাংকটি।
কাজী মাহমুদ সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যখন সিটি ব্যাংকে যোগ দিই, তখন ব্যাংকটি সবে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে বেরিয়ে এসেছে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৭টি সূচকের উন্নতির শর্ত বেঁধে দেয়। আমার ছয় বছরে এসব সূচকের লক্ষ্য পূরণ করে অনেক ওপরে উঠে যায়। এসব অর্জনের প্রধান কারণ ছিল সুশাসন নিশ্চিত করে সঠিক পথে এগোনো। পেশাদারত্বের সঙ্গে ঋণ বিতরণ ও পরিচালনা করা। ওই সময়ে ব্যাংকের লোগো পরিবর্তন করা হয়, অ্যামেক্সের সঙ্গে যুক্ত হয় সিটি ব্যাংক। কার্ড, ভোক্তা ঋণ—সব মিলিয়ে ব্যাংকটি আমার সময়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায়। পরবর্তী নেতৃত্ব ব্যাংকটিকে আরও শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।’
কাজী মাহমুদ সাত্তার.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ র এমড ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট পরিসংখ্যান
২০২১ সালের পর শ্রীলঙ্কায় টেস্ট খেলতে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। গল ও কলম্বোতে হবে দুই দলের দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। যা দিয়ে দুই দলই আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৫-২৭ চক্রে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। যেহেতু টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ, দুই দলই তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়বে বলাই যায়। মুখোমুখি লড়াইয়ে মাঠে নামার আগে তাদের আগের পরিংস্যান কেমন ছিল সেগুলোতে চোখ দেয়া যাক—
‘‘১৩’’
দুই দল এর আগে ১২টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজে মুখোমুখি হয়েছে। এবারের সিরিজটি হতে যাচ্ছে ১৩তম। আগের ১২ সিরিজে বাংলাদেশ একটিতেও জিততে পারেনি। ড্র করেছে কেবল একটি। বাকি ১১টিতেই জয় শ্রীলঙ্কার।
‘‘১’’
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত একবারই শ্রীলঙ্কাকে টেস্টে হারাতে পেরেছে। ২৬ মুখোমুখি লড়াইয়ে ২০টিতে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। ড্র হয়েছে ৫ ম্যাচ।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের বিপক্ষে হোম সিরিজে টেস্ট দল ঘোষণা শ্রীলঙ্কার
বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফরের পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি
‘‘৭৩০/৬’’
বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা দুইবার সাতশর বেশি রান করেছে। দুটিই বাংলাদেশের মাটিতে। ২০১৪ সালে ৭৩০ রান করেছিল ৬ উইকেটে। ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে করেছিল ৭১৩ রান, ৯ উইকেটে। মুখোমুখি লড়াইয়ে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
‘‘৬২’’
দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে সর্বনিম্ন রান ৬২। বাংলাদেশ ২০০৭ সালে কলম্বোতে এই রানে অলআউট হয়েছিল।
‘‘ইনিংস ও ২৪৮ রানে জয়’’
শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে আট ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় ইনিংস ও ২৪৮ রানে, ২০১৪ সালে মিরপুরে। রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয় ৪৬৫ রানের। ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে এই জয় পেয়েছিল লঙ্কানরা।
‘‘১৮১৬’’
দুই দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন কুমার সাঙ্গাকারা। ১৫ ম্যাচে ১৮১৬ রান করেছেন ৭টি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে।
‘‘৩১৯’’
সাঙ্গাকারা তার একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরি পেয়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে। ৩১৯ রান করেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। যা দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস।
‘‘৭’’
সর্বাধিক রান, সর্বোচ্চ রানের সঙ্গে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিতেও সাঙ্গাকারা এগিয়ে। ৭ সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। জয়াবর্ধনে ও চান্দিমালের রয়েছে ৫টি করে সেঞ্চুরি।
‘‘০’’
ডাকের রেকর্ডে সবার ওপরে যৌথভাবে রয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবাল। দুজন ৪টি করে ডাক পেয়েছেন।
‘‘৪৯৯’’
এক সিরিজে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসটিও সাঙ্গাকারার দখলে। ২০১৪ সালের সফরে ২ ম্যাচে ৩ ইনিংসে ৪৯৯ রান করেছিলেন।
‘‘৮৯’’
মুত্তিয়া মুরালিধরন বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১ ম্যাচে ৮৯ উইকেট নিয়েছেন। যা দুই দলের ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ।
‘‘৮৯/৭’’
রঙ্গনা হেরাথ দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড নিজের কাছে রেখেছেন। ৮৯ রানে ৭ উইকেট পেয়েছিলেন ২০১৩ সালে।
‘‘১২’’
হেরাথ ও মুরালিধরন ম্যাচে ১২টি করে উইকেট পেয়েছেন এক টেস্টে। ২০০৭ সালে ক্যান্ডিতে মুরালিধরণ ৮২ রানে ১২ উইকেট এবং ২০১৩ সালে হেরাথ ১৫৭ রানে ১২ উইকেট পেয়েছিলেন।
‘‘১১’’
সর্বোচ্চ ১১বার মুরালিধরন ইনিংসে ৫ বা তার বেশি উইকেট পেয়েছেন।
‘‘২১৯’’
তাইজুল ইসলাম ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে ২১৯ রান দিয়েছিলেন ৬৭.৩ ওভার হাত ঘুরিয়ে। যা এক ইনিংসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল বোলিং ফিগার।
‘‘২৬’’
এক সিরিজে সর্বোচ্চ ২৬ উইকেট পেয়েছেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। ২০০৭ সালে ৩ ম্যাচের সিরিজে ২৬ উইকেট নিয়েছিলেন কিংবদন্তি অফস্পিনার।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল