ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের উপজাতি অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চলে গতকাল রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কুকি-জো সম্প্রদায়।

পার্বত্য অঞ্চলে, বিশেষত মধ্য-উত্তর মণিপুরের উপজাতি সংখ্যাগরিষ্ঠ কাংপোকপি জেলায় পুলিশের সঙ্গে কুকি সম্প্রদায়ের মানুষের সংঘর্ষের জেরে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

গত শনিবার কাংপোকপিতে নিরাপত্তা বাহিনী ও কুকি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত একজন নিহত হন। আহত অন্তত ৪০ জন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ছাড়াও রয়েছেন একাধিক নারী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে বাড়তি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

১ মার্চ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুর রাজ্যে অবাধ যাতায়াতের ব্যবস্থা করা নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রশাসনকে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী দুই নম্বর জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ মুক্ত করতে গিয়েছিল পুলিশ। এই মহাসড়ক উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম থেকে নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের মধ্য দিয়ে মিজোরাম গেছে। ২০২৩ সালের মে মাসে মণিপুরের সহিংসতা শুরু হলে কিছুদিন পর থেকে মণিপুরের অংশ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সেটাই খুলে দিতে গত শনিবার পুলিশি অভিযান শুরু হয়।

প্রচুর নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করে রাজ্য সরকারের কিছু বাস এনে কাংপোকপি দিয়ে বাস চালানোর চেষ্টা করা হয়। ইম্ফল-কাংপোকপি-সেনাপতি রুটে বাস চালানোর এই প্রক্রিয়া শুরুর পরে প্রথমে বাসের ওপরে আক্রমণ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা বাস লক্ষ্য করে গুলতি দিয়ে পাথর ছুড়তে শুরু করে। পরে আক্রমণ চলায় নিরাপত্তা রক্ষীদের ওপরে। এ সময় গুলিতে অন্তত এক বিক্ষোভকারী নিহত হন।

মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, কাংপোকপির গামঘিপাই অঞ্চলে বিক্ষোভকারীরা বাসের ওপরে পাথর ছুড়তে শুরু করে। তাদের সরিয়ে দিতে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পুলিশের ভাষায়, ‘সমাজবিরোধীদের’ প্রতিরোধ করতে যত কম সম্ভব শক্তি ব্যবহার করা যায়, সেটাই করা হয়েছে।

পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ ঘটনায় ১৬ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর ২৭ জন সদস্যও আহত হয়েছেন। সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরে যথেষ্ট গুলি চালিয়েছে।

বিবৃতিতে জানানো হয়, বিক্ষোভকারীরা গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে, গাছ ও বড় বড় পাথরের টুকরো ফেলে রাস্তা অবরুদ্ধ করেছিল। পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে তারা পুলিশের ওপরে পাথর ছুড়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মেইতেই সমাজের একটি নাগরিক সংগঠনের শোভাযাত্রাও এই দিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ, ওই শোভাযাত্রা নিয়ে কাংপোকপি যাওয়ার অনুমতি তাদের কাছে ছিল না। এই শোভাযাত্রা আদিবাসী অঞ্চলে পৌঁছালে বিপদ আরও বাড়তে পারত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কুকি-জো সমাজের প্রতিক্রিয়া

কুকি জো সম্প্রদায়ের তরফে তাদের প্রধান নাগরিক সংগঠন ইন্ডিজিনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরাম (আইটিএলএফ) বিক্ষোভকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে কুকি-জো কাউন্সিলের ডাকা প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে সমর্থন করেছে।

গতকাল রোববার সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার মেইতেই সম্প্রদায়কে কুকি-জো অধ্যুষিত অঞ্চল দিয়ে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করার একটা চেষ্টা হয়েছিল। এ কারণেই কাংপোকপিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে।

আইটিএলএফের বিবৃতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ অঞ্চলে ধর্মঘট চলবে জানিয়ে বন্ধ্ সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রচুর অস্ত্র এখনো মানুষের হাতে

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মণিপুর রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়। রাজ্য প্রশাসন কেন্দ্রের হাতে চলে যায়। এরপর ১ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চলাফেরার ওপরে নিয়ন্ত্রণ তোলার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। যার জেরে গত শনিবার পুলিশ অভিযান চালাতে যায়। মণিপুরে গত দেড় বছরের সহিংসতার জেরে অন্তত আড়াই শ মানুষ মারা গেছেন, গৃহহীন হয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে মণিপুরের রাজ্যপাল অজয়কুমার ভাল্লা ৬ মার্চের মধ্যে সব পক্ষকে লুণ্ঠিত অস্ত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানান। এখন পর্যন্ত হাজারখানেক অস্ত্র জমা পড়েছে।

শনিবারের ঘটনা প্রমাণ করল, লুণ্ঠিত প্রায় ছয় হাজার অস্ত্রের মধ্যে বেশির ভাগ এখনো মানুষের হাতে রয়েছে। কারণ, পুলিশ নিজেই দাবি করছে, আগ্নেয়াস্ত্র থেকে তাদের ওপর যথেচ্ছ গুলি চালানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত স ঘর ষ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

মসজিদে ঢুকে হামলা ও ভাঙচুর, থানায় অভিযোগ

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে একটি মসজিদে ঢুকে ভাঙচুর ও মুসল্লিদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে নেশাগ্রস্ত তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে মসজিদ কমিটির সভাপতি আশরাফ আলী বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

শনিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বারোমারী বাজার এলাকার উত্তর বাতকুচি ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন বাইতুল নূর জামে মসজিদে হামলা ও আসবাবপত্র ভাঙচুরের ঘটনাটি ঘটে।

আরো পড়ুন:

মুন্সীগঞ্জে প্রতিপক্ষের গুলিতে যুবক নিহত

লাকসামে অস্ত্রের মুখে এতিমখানার ৫ গরু লুট, আহত ৮

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার উত্তর বাতকুচি গ্রামের জহুর উদ্দিনের তিন ছেলে ফরহাদ মিয়া, রুবেল মিয়া ও ফারুক মিয়া নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করেন। তারা ইমাম শফিকুল ইসলামের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আজ থেকে এই মসজিদে আর আযান দেওয়া যাবে না। আমাদের অনুমতি ছাড়া আর আযান হবে না।’ ইমাম এই কথার প্রতিবাদ করলে তারা তাকে ভয়ভীতি দেখান। আত্মরক্ষার্থে ইমাম পালিয়ে গেলে অভিযুক্তরা মসজিদের মাইক সেট, বৈদ্যুতিক বোর্ড, টিনের বেড়াসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন।

এসময় হাবিবুর রহমান ও কাজল মিয়া নামে দুই মুসল্লি বাঁধা দিতে গেলে তাদেরকেও মারধর করেন নেশাগ্রস্তরা। স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। পরে আহতদের উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. আশরাফ আলী বলেন, “এই ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি এবং এ নিয়ে থানায় একটি লখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।”

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

নালিতাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সোহেল রানা বলেন, “মসজিদে ঢুকে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/তারিকুল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ