জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে রাখাইন গণহত্যার বিচার চাইলেন রোহিঙ্গারা। পাশাপাশি তারা মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন।
কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা গুতেরেসকে বলেন, ‘মিয়ানমারের জান্তা সরকার আমাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। তখন বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। এই দেশে আর কত বছর থাকব? আর থাকতে চাই না। আমরা আমাদের স্বদেশে ফিরতে চাই। মিয়ানমার আমাদের দেশ।’
গতকাল শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে জাতিসংঘ মহাসচিবকে এসব কথা বলেন তারা। রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত লার্নিং সেন্টারে এসব কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন মহাসচিব। এ সময় নারী-শিশুরাও তাদের নানা দাবি তুলে ধরেন। এর পর মহাসচিব ঘুরে দেখেন রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টার। অনেকটা আকস্মিকভাবে রোহিঙ্গাদের ঘরে প্রবেশ করেন তিনি। নিজ চোখে দেখেন তাদের মানবেতর জীবনের চিত্র। জাতিসংঘ মহাসচিবকে কাছে পেয়ে অনেক নারী-শিশু তুলে ধরেন তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া ও নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা।
আরাকান সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ জোবায়ের সমকালকে জানান, রোহিঙ্গারা জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছেন, ‘২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমার বাহিনী যেভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তা দেখে পুরো দুনিয়ার মানুষ কেঁদেছে। সেই গণহত্যার বিচার চাই। সেদিন মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়ে ভেবেছিল, তারা রাখাইন রাজ্যকে রোহিঙ্গামুক্ত করেছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা জন্মভূমি আরাকান কাউকে লিজ দিয়ে আসেনি। যে কোনোভাবে রোহিঙ্গারা আরাকানে ফিরতে চায়। বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে দাবি, রোহিঙ্গাদের দ্রুত দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নিন।’
এফডিএমএন রিপ্রেজেন্টেটিভ কমিউনিটির মুখপাত্র কামাল হোসেন বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, তারা অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চান। তারা বাংলাদেশের নন, মিয়ানমারের নাগরিক।
.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।
শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।
পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।
শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।