জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন রাজনৈতিক নেতারা
Published: 15th, March 2025 GMT
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ তাহের, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকি, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, এনসিপির নাহিদ ইসলাম, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।
বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার শেষ করে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংস্কার অবশ্যই করতে হবে, সেই সংস্কারের কথা সবার আগে বলেছে বিএনপি। কিন্তু সেই সংস্কারটা যত দ্রুত করা যায়। আমরা যেটা বলেছি, মূলত নির্বাচন কেন্দ্রিক বিষয়গুলো সংস্কারগুলো করে ফেলা, তারপর দ্রুত নির্বাচন করা, এরপর একটি সংসদের মাধ্যমে বাড়তি সংস্কারগুলো করা। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, এটাই আমরা বলেছি।’
নির্বাচন নিয়ে কোনো টাইম ফ্রেমের কথা বলেছেন কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের কোনো টাইম ফ্রেমের কথা বলার প্রয়োজন নেই। সংস্কার আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমরা সংস্কার কমিশনগুলোর সঙ্গে আমরা কথা বলছি, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। তারা যা চাচ্ছে আমরা সব দিয়ে দিচ্ছি। ইতিমধ্যে আমাদের সঙ্গে একটা বৈঠক হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিবকে আমরা আমাদের টাইম ফ্রেমটা দিতে যাব কেন?’
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন কিভাবে হবে সেটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলে জাতিসংঘ মনে করে। এদেশের জনগণকেই তা নির্ধারণ করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
বৈঠক শেষে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলেছি। একটা ফেয়ার নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের অধিকাংশ বক্তব্য সমর্থন করে বলেছেন, বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের কাজে আমাদের সহযোগিতা করবেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে জুলাই গণহত্যার বিচার নিশ্চিতে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য নিয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
এদিকে বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বৈঠকে সংস্কার নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। সংস্কার ও গণহত্যার বিচারে জনগণের কাছে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কারের মৌলিক ভিত্তি এই সরকারের আমলেই তৈরি করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন কাজে দেবে না। এছাড়া, সংবিধান ও গণপরিষদ নিয়েও আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেয়া সুপারিশ বাস্তবায়নে সংস্থাটির সাহায্য প্রয়োজন। এখনও জাতিসংঘের তিনটি প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার আত্মীয়রা কাজ করছেন।
বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড.
সফরের তৃতীয় দিনে জাতিসংঘ মহাসচিব ব্যস্ত সময় পার করছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আজ সকালে তিনি রাজধানীতে নতুন জাতিসংঘ কমন প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন। সেখানে ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের পতাকা উত্তোলন করেন।
আন্তোনিও গুতেরেস এবং শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্তবিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান যৌথভাবে গুলশানে ‘ইউএন হাউস ইন বাংলাদেশ’ উদ্বোধন করেন।
বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।
গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় আসেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট আম দ র ফখর ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ