ঈদে প্রতি বছর বর্ণিল অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। এসব অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘আনন্দমেলা’ থাকে দর্শক আগ্রহের কেন্দ্রে। এ আয়োজনে নাচ মানেই ভিন্নধর্মী পরিবেশনা। এবার আনন্দমেলায় নাচ পরিবেশন করবেন বরেণ্য নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ, নন্দিত অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ও চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী। বিটিভি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ আয়োজনের মাধ্যমেই দীর্ঘদিন পর নাচ নিয়ে হাজির হবেন তিশা। তিশা ও বুবলীর নাচের কোরিওগ্রাফি করছেন ইভান শাহরিয়ার সোহাগ। আর নিজের কোরিওগ্রাফিতে নাচ পরিবেশন করবেন মৌ। 

ঈদ আনন্দমেলার কোরিওগ্রাফি প্রসঙ্গে ইভান শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, ‘বিটিভির আনন্দমেলা মানেই অন্যরকম আয়োজন। এতে নানা কিছু সমাহার ঘটে এতে। এর মধ্যে নাচ নিয়ে দর্শকের তুমুল আগ্রহ থাকে। দীর্ঘদিন পর কোনো টিভি আয়োজনে ফিরছেন তিশা। শবনম বুবলীও ভিন্নধর্মী পরিবেশনা নিয়ে হাজির হবেন। প্রত্যেকে তাদের অভিনীত সিনেমার গানেই নাচবেন। দু’জনের সঙ্গেই আয়োজন নিয়ে পরিকল্পনা করেছি। আগামী ২১ মার্চ থেকে রিহার্সেল শুরু হবে। আশা করছি, জমজমাট একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান উপহার পেতে যাচ্ছেন দর্শক’। 

শবনম বুবলী বলেন, ‘এক বছর আগে ‘আনন্দমেলা’ অনুষ্ঠানে নাচ করেছি। আবার নাচ নিয়ে হাজির হব একই আয়োজনে। নিজের সিনেমার প্রিয় কিছু গানের সঙ্গে নাচব। আশা করছি, পরিবেশনাটি দর্শকদের পছন্দ হবে’। 

জানা গেছে, রামপুরার বিটিভির নিজস্ব অডিটোরিয়ামে আনন্দমেলার শুটিংয়ে শিগগিরই অংশ নেবেন তারকাশিল্পীরা। আয়োজন নিয়ে বিটিভির অনুষ্ঠান নির্বাহী ও আনন্দমেলার  প্রযোজক মাহবুবা ফেরদৌস বলেন, ‘বেশ বড় আয়োজন নিয়ে ‘আনন্দমেলা’র পরিকল্পনা করেছি। অনেক নামিদামি তারকারা হাজির হবেন অনুষ্ঠানে। গান ও নাচ, চমৎকার কিছু স্কিডসহ হরেক রকম আয়োজন।

অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করবেন মাসুমা রহমান নাবিলা ও মামনুন ইমন। এর আগে ২০১৮ সালে ‘আনন্দমেলা’ উপস্থাপনা করেন নাবিলা। ওই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সজল নূর। ৭ বছর পর  ফিরলেন তিনি।

এ বিষয়ে নাবিলা বলেন, “এর আগেও আমি আনন্দ মেলার উপস্থাপনা করেছি। দ্বিতীয় বারের মতো উপস্থাপনা করতে যাচ্ছি। আনন্দমেলা প্রযোজকরা খুব করে চাইছিলেন এটি যেন আমি উপস্থাপনা করি। এটি একটি লিজেন্ডারি শো। ছোটবেলা থেকে এটি দেখে দেখেই বড় হয়েছি। আনন্দমেলার মাধ্যমে দেশের মানুষকে একটু আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা থাকে বিটিভির। সবকিছু ভেবেই অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করতে রাজি হয়েছি। চেষ্টা করব নতুন আঙ্গিকে নিজেকে উপস্থাপন করতে। এই অনুষ্ঠানের প্রতি দেশের মানুষের এখনও অনেক আগ্রহ। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এখনও অনুষ্ঠানটি দেখার জন্য আগ্রহ দেখায়। তাই অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করতে যাচ্ছি ভেবে  ভালো লাগছে।”

মাহবুবা ফেরদৌস ছাড়াও ৫০ মিনিটের অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করছেন মোঃ হাসান রিয়াদ ও মোহাম্মদ মনিরুল হাসান। ‘আনন্দমেলা’ প্রচার হবে ঈদের দিন রাতে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স দ য় ইসল ম ম অন ষ ঠ ন হ জ র হব করব ন আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ

১৮৮৬ সালের ১ মেÑএকটি দিন, একটি দাবি, আর হাজারো শ্রমিকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিহাসে রক্তাক্ত দাগ কেটে দিয়েছিল যে মুহূর্ত, তা আজ বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। তখনকার দাবিটি ছিল স্রেফ ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। কিন্তু আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের দাবি শুধু সময়
নয়Ñমর্যাদা, সুরক্ষা ও ন্যায্যতার প্রশ্নও।

এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য “শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এদেশ নতুন করে”Ñএ যেন সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই বার্তা কেবল প্রাসঙ্গিক নয়, বরং তা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের জন্য এক যৌথ দিকনির্দেশনা।

বাংলাদেশের শ্রমচিত্র ও বাস্তবতা

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ, কৃষি ও নির্মাণ খাতে আরও কয়েক কোটি মানুষ নিয়োজিত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে শ্রমনির্ভর খাত থেকে। কিন্তু যাঁরা এই অর্থনীতির ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছেন, সেই শ্রমিকরা কি পেয়েছেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা?

দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও বহু শ্রমিক পান না ন্যূনতম মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা কিংবা ছুটি সংক্রান্ত মৌলিক সুবিধা। নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও জটিলÑযত্রতত্র হয়রানি, মাতৃত্বকালীন সুবিধার অভাব, কিংবা নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে না তোলার ফলে এই খাতেও স্থিতিশীলতা আসছে না।

মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক: দ্বন্দ্ব নয়, দরকার সহমর্মিতা

এক সময় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক মানেই ছিল দ্বন্দ্ব, ধর্মঘট ও হুমকি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা বলছেÑসহযোগিতাই টেকসই উৎপাদনের চাবিকাঠি। মালিকপক্ষ যখন শ্রমিককে কেবল “ব্যয়” হিসেবে না দেখে “সম্পদ” হিসেবে  বিবেচনা করেন, তখন প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। একইভাবে শ্রমিকও যদি বুঝেন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন মানে তার কর্মস্থলের স্থায়িত্বÑতাহলে দুপক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের
ভিত্তি গড়ে ওঠে।

এই বিশ্বাস গঠনের জন্য প্রয়োজন তিনটি স্তম্ভ: 

নীতিগত স্বচ্ছতা Ñ ন্যায্য মজুরি, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা দায়িত্বশীল মালিকপক্ষ Ñ কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিতে উদ্যোগ সচেতন শ্রমিকশ্রেণি Ñ অধিকার আদায়ের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের মানসিকতা

নীতি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও সংশোধিত ২০১৮ সংস্করণ অনুযায়ী শ্রমিকের অধিকার স্বীকৃত হলেও বাস্তবায়নের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে  অনানুষ্ঠানিক খাতে (যেমন কৃষি, গৃহপরিচারিকা, গিগ-ওয়ার্কার) শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি এখনও প্রায় উপেক্ষিত।

এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা বীমা, এবং পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার হওয়া জরুরি। সরকার শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করলেও তা অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

এই প্রেক্ষাপটে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে’ দেশ গড়ার বার্তাটি যেন শুধুই স্লোগানে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং এটি হোক রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আর্থিক বিনিয়োগ ও মানবিক বিবেচনার এক বাস্তব প্ল্যাটফর্ম।
প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও নতুন শ্রম বাস্তবতা

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজার দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন ও গিগ-ইকোনমি অনেক চাকরি বিলুপ্ত করছে, আবার নতুন দক্ষতা চাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়, তাহলে  শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, পুনঃস্কিলিং এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এখানে মালিক ও রাষ্ট্র উভয়ের উচিত হবে, শ্রমিককে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে বিনিয়োগ করা, কারণ দক্ষ শ্রমিক ছাড়া কোনো শিল্পই টিকে থাকে না।

মে দিবস: উৎসব নয়, দায়বদ্ধতার প্রতীক

মে দিবস কেবল লাল পতাকা হাতে শোভাযাত্রার দিন নয়, এটি আমাদের মানবিক চেতনার প্রতিফলন। যে শ্রমিক ঘাম ঝরিয়ে ভবন গড়ে, কৃষি জমি চষে, রপ্তানি পণ্য তৈরি করেÑতার জন্য আমাদের উচিত মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা।

এবছর, আসুন আমরা সবাই রাষ্ট্র, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকÑএকটি মানবিক, উৎপাদনশীল ও  শীদারিত্বভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাই। শ্রমিকের হাতে গড়া এই বাংলাদেশ হোক তার জন্যই গর্বের জায়গা। 


লেখক পরিচিতি:

মীযানুর রহমান
সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক
মোবাইলঃ ০১৭৫৪১০৯০৭২
যোগাযোগ: : [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 
  • রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
  • কানাডায় আবারও লিবারেল পার্টির সরকার গঠনের আভাস
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে: ড. ইউনূস
  • অন্তর্বর্তী সরকারকে মানুষ এখনও ভালো সমাধান মনে করছে: আল জাজিরাকে