বাজেটে ভ্যাট হার সিঙ্গেল ডিজিট করার প্রস্তাব ঢাকা চেম্বারের
Published: 18th, March 2025 GMT
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নিকট ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-ডিসিসিআই বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা নির্ধারনের আহ্বান জানায় ঢাকা চেম্বার।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা অংশ নিয়ে ঢাকা চেম্বার ৪২টি প্রস্তাবনা দিয়েছে। প্রাক বাজেট আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো.
প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় ডিসিসিআইয়ের সভাপতি তাসকীন আহমেদ ছাড়াও সংগঠনটির ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান উপস্থিত ছিলেন।
বাজেট প্রস্তাবনায় অংশ নিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ করজাল সম্প্রসারণ ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ, করহার হ্রাসকরণ, ব্যবসা-বান্ধব করনীতি ও অটোমেশন ব্যবস্থা চালু, মূসক ব্যবস্থার সংষ্কার, স্থানীয় শিল্প ও উৎপাদন খাতের সুরক্ষা, আমদানি শুল্ক ও ট্যারিফ ব্যবস্থা সহজীকরণ এবং ব্যক্তি শ্রেণির কর কাঠামোর সহজীকরণ প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জোরারোপ করেন।
বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড মূসক (ভ্যাট) হার ১৫ শতাংশ থাকলেও বিভিন্ন খাতে তা কমিয়ে ১০ শতাংশ, ৭.৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ হারে নির্ধারণের ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য জটিলতা সৃষ্টির পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে বিরোধ তৈরি হচেছ। উপরন্তু উপকরণ কর রেয়াতের সুবিধা সবক্ষেত্রে নিশ্চিত না হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী বাড়তি করের বোঝা বহন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন বাস্তবতায়, আগামী বাজেটে ভ্যাটের হার সিঙ্গেল ডিজিট নির্ধারনের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসায়ীদের ভ্যাট ১ শতাংশ হারে নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছে ঢাকা চেম্বার। এর মাধ্যমে সামগ্রিক কর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসার পাশাপাশি ব্যবসার পরিচালন ব্যয় হ্রাস পাবে এবং উৎপাদন খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে বাণিজ্য সংগঠনটি।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ আগামী অর্থবছর হতে সকল করদাতাকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন প্রদান কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করায় এনবিআরকে অভিনন্দন জানান। দেশে করদাতার হার বৃদ্ধি এবং করজাল সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এনবিআরকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি। এছাড়াও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহজে অনলাইনে কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে অটোমেটেড কর রিটার্ন পদ্ধতি চালু করার ওপর জোরারোপ করেন তাসকীন আহমেদ। বিদ্যমান ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা হতে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা নির্ধারনের আহ্বান জানান।
তাছাড়া বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের ক্ষেত্রে পণ্য আমদানি পর্যায়ে অগ্রীম কর ৫ শতাংশ হতে ধাপে ধাপে হ্রাস এবং আমদানি পর্যায়ে উৎপাদনকারীদের জন্য বিদ্যমান অগ্রীম কর পর্যায়ক্রমে বিলুপ্তির প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট রাজস্ব নীতিমালার ক্রমান্বয়ে সংষ্কারের মাধ্যমে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে এনবিআর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করজাল সম্প্রসারণে বদ্ধপরিকর, কারণ সমাজে কেউ কর দেবে কেউ দেবেনা, তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি বলেন, “দেশের ব্যবসায়ী সমাজ একমত পোষণ করলে, ভ্যাটের বিভিন্ন স্তর বহাল না রেখে, সরকার ভ্যাট হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে আগ্রহী। তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের স্বদিচ্ছা ও স্বচ্ছতা একান্ত অপরিহার্য।”
ঢাকা/এনএফ/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড স স আই ব যবস য় ব যবস থ ত ব কর আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৩২১ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় সমান। গত অর্থবছরে (২০২৩–২৪) মোট ৩৩৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মানে হলো, এবার প্রথম ৯ মাসেই গত অর্থবছরের কাছাকাছি ঋণ পরিশোধ হয়ে গেছে।
আজ বুধবার বিকেলে প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তৈরি জুলাই–মার্চ মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ইআরডির তথ্য অনুসারে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) দেশে মোট প্রায় ৪৮১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে। এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থছাড়ের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশের সমান।
অন্যদিকে আলোচ্য ৯ মাসে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধের মধ্যে আসলের পরিমাণ ২০১ কোটি ডলার। আর সুদ বাবদ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।
এদিকে গত জুলাই–মার্চ সময়ে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গতবারের একই সময়ে পাওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকের কম। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল।
জুলাই–মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১২২ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ১০৭ কোটি ডলার ও জাপান ৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে।