হামজা জ্বরে কাঁপছে বাংলাদেশের ফুটবল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা এই ফুটবলারকে নিয়ে উন্মাদনায় মেতেছে পুরো দেশ। প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা যাবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার।
২৫ মার্চ শিলংয়ে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ দিয়ে তার জাতীয় দলের দুয়ার খুলে যাবে। বিশ্বের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রতিযোগিতা ইপিএলে লেস্টার সিটির হয়ে খেলেছেন হামজা। এখন তার ঠিকানা শেফিল্ডে। খেলছেন নিয়মিত। দলটির অন্যতম ভরসার জায়গা। তাকে নিয়ে মাতামাতি হবে, উল্লাস হবে এমনটাই তো হওয়ার কথা।
‘হামজা হাওয়া’ ছড়িয়ে পড়েছে তা গায়ে লেগেছে ক্রিকেটাঙ্গনেও। ক্রিকেটাররাও খুশি হামজার মতো প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলার বেছে নিয়েছেন লাল-সবুজের জার্সিকে।
আরো পড়ুন:
মুশফিকুরের বিদায়ে আবেগের বিচ্ছুরণ, গর্বের ঝরনাধারা
আড়াল থেকে আরো অতলে
মুশফিকুর রহিম হামজার ছবি নিজের প্রোফাইলে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘অল দ্য বেস্ট।’’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা খুলে দিয়েছেন কথার ঝাঁপি, ‘‘বাংলাদেশের ফুটবলে আপনাকে স্বাগত হামজা দেওয়ান চৌধুরি! আপনার আগমনে প্রথম প্রেমের সেই রোমাঞ্চ যেন আবার টের পাচ্ছি, যে প্রেমের নাম ফুটবল! আমাদের ছেলেবেলায়, শৈশব-কৈশোরে ফুটবল ঘিরে যে উন্মাদনা ছিল, কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশের ফুটবলে যেন দিনগুলোই ফিরে এসেছে।”
“ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা একজন ফুটবলার আমাদের দলে খেলেন, লেস্টার সিটি বা শেফিল্ড ইউনাইটেডের খেলায় তার নামের পাশে আমাদের দেশের নামও উচ্চারিত হবে, এই দেশের জন্য এটা বড় পাওয়া। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। যে শেকড়ের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে, সেই পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা।”
নিজের প্রত্যাশার কথাও ভাগাভাগি করেছেন মাশরাফি, ‘‘আপনি এসেই জাদুকরী কিছু করে রাতারাতি দেশের ফুটবল বদলে দেবেন, এমন আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা আমার নেই। মাঠে একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ভূমিকাও আমার জানা আছে। স্রেফ আশা করব, আপনার ছোঁয়ায় দেশের ফুটবলে নতুন প্রাণের জোয়ার আসবে, লোকের আগ্রহ বাড়বে, শিশু-কিশোররা ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখবে, আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল দল বা ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের মতোই নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের ফুটবলকে আপন করে নেবে।’’
‘‘আশা করব, আপনাকে ঘিরে দেশের ফুটবলের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসবে, আপনার পায়ে পায়ে দেশের সামগ্রিক ফুটবল এগিয়ে যাবে। জামাল ভূঁইয়া, তারেক কাজীসহ প্রবাসী যারা এসে দেশের ফুটবলকে সমৃদ্ধ করেছেন, আরও যারা আসবেন, সবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা।’’
হামজাকে ঘিরে মাশরাফির উচ্ছ্বাস টের পাওয়া গেল ভালোভাবে, ‘‘ফুটবল আমাদের প্রাণের খেলা। ফুটবলে এই নতুন দিনের গান আমাদের মনেও নতুন স্বপ্নের দোলা দিচ্ছে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ ও সামনের দিনগুলির জন্য শুভকামনা হামজা। শুভকামনা বাংলাদেশ ফুটবল দল।‘’
মাশরাফির কণ্ঠে সুর মিলিয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার রিশাদ হোসেন, ‘‘বাংলাদেশে আপনাকে স্বাগতম। অনেক অনেক শুভকামনা। এগিয়ে যাক বাংলাদেশ ফুটবল দল।’’
ঢাকা/ইয়াসিন/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ল দ শ র ফ টবল জ ত য় দল র ফ টবল র আম দ র আপন র আপন ক
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।