অনুমোদন পেলেও ফেরি মিলছে না রাজনগর ঘাটে
Published: 22nd, March 2025 GMT
সড়ক পথে রাজনগর ও বালাগঞ্জের হাজার হাজার মানুষের প্রাত্যহিক যোগাযোগ সহজ করতে ফেরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই উপজেলার মাঝে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে ফেরির অনুমোদন দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে দুই বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর এবং সিলেটের বালাগঞ্জ দুটি প্রতিবেশী উপজেলা। সদর এলাকাসহ এই দুই জেলার মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে জেলা দুটিতে যাতায়াত করেন। এই দুই প্রতিবেশী উপজেলার মাঝে অন্তরায় কুশিয়ারা নদী।
ফেরি প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় ভোগান্তি কাটেনি নদী পারাপারে দুই উপজেলার মানুষের। প্রায় দুই লাখ মানুষ এই পথে যাতায়াতে সময় এবং অর্থ দুই-ই ব্যয় করছেন। তাতে কষ্ট কমছে না। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার উত্তরাংশের জনপদের খেয়াঘাট ও সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা সদরের মানুষের যোগাযোগের সুবিধার্থে ২০ বছর ধরে কুশিয়ারা নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি করে আসছেন উভয় উপজেলার ভুক্তভোগীরা। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান কুশিয়ারা নদীর রাজনগরের খেয়াঘাট অংশে একটি ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। পরে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
বিগত সরকারের সময় আবারও এ অংশে ব্রিজ নির্মাণের দাবি ওঠে। এক পর্যায়ে নদীর প্রকৃতি রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় আমলে নিয়ে ওই অংশে একটি ফেরিঘাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় একপত্রে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার খেয়াঘাট ও সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা সদরের নিকটবর্তী সওজের তত্ত্বাবধানে একটি ফেরিঘাট স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এই আদেশের প্রায় দীর্ঘ আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও ফেরিঘাট স্থাপন কিংবা চালুর কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
রাজনগরের ফতেপুর ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের দবির আলী জানান, এ উপজেলার কাউয়াদিঘি হাওরপারের ফতেপুর, উত্তরভাগ, পাঁচগাঁও ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রামের মানুষ বালাগঞ্জ তথা সিলেটের ওপর শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কারণে নির্ভরশীল। ফেরি চালু হলে আঞ্চলিক অর্থনীতি ও ব্যবসা লাভবান হবে।
স্থানীয়রা জানান, বালাগঞ্জের অনেক মানুষের ক্ষেত-কৃষি রাজনগর অংশে রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষসহ শিক্ষার্থী খেয়া নৌকায় করে এপার-ওপার যাতায়াত করে থাকেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ খেয়া নৌকায় ভরা কুশিয়ারা পাড়ি দেন। ফেরি চালু হলে সহজ উপায়ে দ্রুততম সময়ে বিভাগীয় শহর সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে কম খরচে যাতায়াত করা সম্ভব হবে।
বালাগঞ্জ উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী রজত দাশ ভুলন জানান, বালাগঞ্জ অংশে ফেরিতে যানবাহন যাতায়াতের লক্ষ্যে সংযোগ সড়কের স্থানকেন্দ্রিক জটিলতায় ফেরিঘাট স্থাপনে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বালাগঞ্জ পূর্ব বাজার হাসপাতালের কাছে ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে সহজে যানবাহন যাতায়াতে সুবিধা হবে।
মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার হামিদ সমকালকে জানান, কুশিয়ারা নদীর রাজনগরের খেয়াঘাট ও বালাগঞ্জ উপজেলা শহরে যাতায়াতে ফেরিঘাট স্থাপনের অনুমোদন হয়েছে। বালাগঞ্জ অংশের যেখানে ফেরিঘাট স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেখানে খাস ভূমি থেকে ব্যক্তিমালিকানা ভূমি বেশি হওয়ায় অন্যত্র স্থান নির্ধারণের চেষ্টা চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র র জনগর উপজ ল র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস