সড়ক পথে রাজনগর ও বালাগঞ্জের হাজার হাজার মানুষের প্রাত্যহিক যোগাযোগ সহজ করতে ফেরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই উপজেলার মাঝে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে ফেরির অনুমোদন দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে দুই বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর এবং সিলেটের বালাগঞ্জ দুটি প্রতিবেশী উপজেলা। সদর এলাকাসহ এই দুই জেলার মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে জেলা দুটিতে যাতায়াত করেন। এই দুই প্রতিবেশী উপজেলার মাঝে অন্তরায় কুশিয়ারা নদী।
ফেরি প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় ভোগান্তি কাটেনি নদী পারাপারে দুই উপজেলার মানুষের। প্রায় দুই লাখ মানুষ এই পথে যাতায়াতে সময় এবং অর্থ দুই-ই ব্যয় করছেন। তাতে কষ্ট কমছে না। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার উত্তরাংশের জনপদের খেয়াঘাট ও সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা সদরের মানুষের যোগাযোগের সুবিধার্থে ২০ বছর ধরে কুশিয়ারা নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি করে আসছেন উভয় উপজেলার ভুক্তভোগীরা। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান কুশিয়ারা নদীর রাজনগরের খেয়াঘাট অংশে একটি ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। পরে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
বিগত সরকারের সময় আবারও এ অংশে ব্রিজ নির্মাণের দাবি ওঠে। এক পর্যায়ে নদীর প্রকৃতি রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় আমলে নিয়ে ওই অংশে একটি ফেরিঘাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় একপত্রে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার খেয়াঘাট ও সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা সদরের নিকটবর্তী সওজের তত্ত্বাবধানে একটি ফেরিঘাট স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এই আদেশের প্রায় দীর্ঘ আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও ফেরিঘাট স্থাপন কিংবা চালুর কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
রাজনগরের ফতেপুর ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের দবির আলী জানান, এ উপজেলার কাউয়াদিঘি হাওরপারের ফতেপুর, উত্তরভাগ, পাঁচগাঁও ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রামের মানুষ বালাগঞ্জ তথা সিলেটের ওপর শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কারণে নির্ভরশীল। ফেরি চালু হলে আঞ্চলিক অর্থনীতি ও ব্যবসা লাভবান হবে।
স্থানীয়রা জানান, বালাগঞ্জের অনেক মানুষের ক্ষেত-কৃষি রাজনগর অংশে রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষসহ শিক্ষার্থী খেয়া নৌকায় করে এপার-ওপার যাতায়াত করে থাকেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ খেয়া নৌকায় ভরা কুশিয়ারা পাড়ি দেন। ফেরি চালু হলে সহজ উপায়ে দ্রুততম সময়ে বিভাগীয় শহর সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে কম খরচে যাতায়াত করা সম্ভব হবে।
বালাগঞ্জ উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী রজত দাশ ভুলন জানান, বালাগঞ্জ অংশে ফেরিতে যানবাহন যাতায়াতের লক্ষ্যে সংযোগ সড়কের স্থানকেন্দ্রিক জটিলতায় ফেরিঘাট স্থাপনে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বালাগঞ্জ পূর্ব বাজার হাসপাতালের কাছে ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে সহজে যানবাহন যাতায়াতে সুবিধা হবে।
মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার হামিদ সমকালকে জানান, কুশিয়ারা নদীর রাজনগরের খেয়াঘাট ও বালাগঞ্জ উপজেলা শহরে যাতায়াতে ফেরিঘাট স্থাপনের অনুমোদন হয়েছে। বালাগঞ্জ অংশের যেখানে ফেরিঘাট স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেখানে খাস ভূমি থেকে ব্যক্তিমালিকানা ভূমি বেশি হওয়ায় অন্যত্র স্থান নির্ধারণের চেষ্টা চলছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র র জনগর উপজ ল র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা থাকাকালে তাঁর ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বের উল্টো যাত্রা ঘটল: অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ (তিন শূন্য) তত্ত্ব সমর্থন করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। কিন্তু অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে তার উল্টো যাত্রা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনি থাকা অবস্থায় তাঁর থ্রি জিরো তত্ত্বের যে উল্টো যাত্রাটা ঘটল, এটা তাঁর খেয়াল করা দরকার। আমরা চাই, থ্রি জিরো তত্ত্বটাই অগ্রসর হোক।’

সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন। ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেভাবে হতে পারে’ শিরোনামে যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও প্রথম আলো।

বৈঠকে অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের “থ্রি জিরো” (তিন শূন্য) তত্ত্ব সারা পৃথিবীতে পরিচিত। আমি এটা খুবই সমর্থন করি যে শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য দারিদ্র্য। কিন্তু পুরো যাত্রাটা তো হচ্ছে উল্টো দিকে। অধ্যাপক ইউনূসের একটা সুযোগ ছিল যে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে থ্রি জিরো তত্ত্বের বাস্তবায়নের একটা মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে দাঁড় করানোর কিছু চেষ্টা করা। কিন্তু আমরা দেখছি, কীভাবে কার্বন নিঃসরণ আরও বাড়ে, সেটার একটা চেষ্টা চলছে। গত ১০ মাসে লক্ষাধিক বেকারত্ব বেড়েছে শুধু কারখানা বন্ধ করার কারণে আর দারিদ্র্য বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ লাখ। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনি থাকা অবস্থায় তাঁর থ্রি জিরো তত্ত্বের যে উল্টো যাত্রাটা ঘটল, এটা তো তাঁর একটু খেয়াল করা দরকার। এতে তো আমরা খুশি না। আমরা তো চাই যে থ্রি জিরো তত্ত্বটাই অগ্রসর হোক।’

‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেভাবে হতে পারে’ শীর্ষক গোলটেবিলে আলোচকদের একাংশ। সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে

সম্পর্কিত নিবন্ধ