ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধীকে লাথি মারার অভিযোগ, অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন
Published: 25th, March 2025 GMT
টাঙ্গাইলের সখীপুরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানসিক প্রতিবন্ধীকে লাথি মারার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন করেন তাঁরা।
অভিযুক্ত ওই চেয়ারম্যানের নাম সরকার নূরে আলম (মুক্তা)। তিনি উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি গত ৪ আগস্ট টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলায় এক শিক্ষার্থী হত্যার মামলার আসামি। ভুক্তভোগী মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নাম মোতালেব মিয়া (৫০)। তিনি উপজেলার চতলবাইদ মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
এর আগে গত বছরের ২ মার্চ প্রতিবেশী এক নারীকে মারধর করেন চেয়ারম্যান সরকার নূরে আলম। ওই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই ঘটনায় করা মামলায় তিনি মাসখানেক জেলহাজতে ছিলেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম চলছিল। বেলা ১১টার দিকে ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চতলবাইদ মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব মিয়া একটি লাঠি হাতে পরিষদ চত্বরে যান। তিনি মোশারফ নামের এক ব্যক্তিকে পেটাবেন বলে খোঁজ করছিলেন। এ সময় দায়িত্বরত গ্রাম পুলিশ মোতালেবকে সরিয়ে দেন। পরে বেলা দুইটার দিকে মোতালেব মিয়া একইভাবে পরিষদ চত্বরে গিয়ে বকাঝকা করতে থাকেন। চেয়ারম্যান নূরে আলম তাঁকে পরিষদ চত্বর ত্যাগ করতে বলেন। তখন চেয়ারম্যানকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন মোতালেব। এ সময় চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে মোতালেবকে লাথি মারেন। গতকাল সোমবার দুপুরে চেয়ারম্যানের লাথি মারার পাঁচ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী গ্রাম পুলিশ প্রহর লাল চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, ওই লোককে পরিষদ চত্বর ত্যাগ করতে বললে তিনি হঠাৎ দৌড়ে গিয়ে চেয়ারম্যানকে লাথি দেন। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানও ক্ষিপ্ত হয়ে লাথি মেরেছেন। লোকটি মানসিক প্রতিবন্ধী। তিনি নিজ এলাকায়ও অনেকের সঙ্গে এমন আচরণ করেছেন।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে পরিষদ চত্বরে চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। এই কর্মসূচিতে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, ‘এক বছর আগে একজন নারীকে পিটিয়েছেন। এবার একজন বয়স্ক প্রতিবন্ধীকে পিটিয়েছেন। টাঙ্গাইল সদর থানায় চেয়ারম্যানের নামে খুনের মামলাও রয়েছে। এ ধরনের নষ্ট চেয়ারম্যান আমাদের দরকার নেই। আমরা তাঁর অপসারণ চাই।’
বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার নূরে আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘লোকটি যে মানসিক ভারসাম্যহীন, তা আমি আগে জানতাম না। জানলে আমি কোনোভাবেই এমন আচরণ করতাম না। এ বিষয়ে আমি খুবই লজ্জিত।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল রনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেয়ারম্যানের ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমি দেখেছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। দোষী প্রমাণিত হলে এরপর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বললেন আসিফ মাহমুদ
একজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কুমিল্লার মুরাদনগরে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ করেছেন একদল ব্যক্তি। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মুরাদনগর উপজেলা সনাতন ধর্মাবলম্বী জনতা’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে মুরাদনগর থেকে আসা সনাতন ধর্মের কয়েকজন কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাবা ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভযোগ করা হয়। তা ছাড়া পুলিশকে ব্যবহার করে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ তুলে এই উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করেন সংবাদ সম্মেলনকারীরা। তবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এলাকার সাবেক একজন সংসদ সদস্যের অনুসারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ‘সর্ব ধর্ম মিশন’র প্রচারক পরিচয় দিয়ে দুলাল দেবনাথ বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ইউসুফ আবদুল্লাহর (আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন) নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করা আওয়ামী লীগের দোসরেরা আজ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার ও ভাইয়ের নেতৃত্বে মুরাদনগরে পুনর্বাসিত হওয়ার চেষ্টা করছে এবং কায়কোবাদ (বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ) সাহেবের সুনামকে নষ্ট করার জন্য তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে আমরা তার (উপদেষ্টার) পদত্যাগ চাই।’
অভিযোগ করে দুলাল দেবনাথ আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ ভুঁইয়ার বাবা আজকে আমার বাড়িতে দুজন হিন্দু কমিউনিটির লোক পাঠিয়ে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমি যেন এই প্রোগ্রামে না আসতে পারি। এ ছাড়া আমরা মুরাদনগর থেকে ঢাকায় আসার পথে কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজায় গাড়ির কাগজপত্র চেকের (যাচাই বাছাই) নামে এক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুরাদনগর উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সহসভাপতি দীন দয়াল পাল। তিনি বলেন, মুরাদনগর উপজেলায় যানজট নিরসনে সাবেক পাঁচবারের এমপি মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেন। তবে পুলিশকে ব্যবহার করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা, চাচাতো ভাই ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের দিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের মারধর করায়। পরে এই স্বেচ্ছাসেবকদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে থানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল হয় এবং সেদিন সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে রাতভর সালিসও চলে। অথচ রাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সালিসে বসে বিষয়টি সমাধান করতে আসা বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দেয় এবং পবিত্র ঈদ ও রমজানজুড়ে পুরো মুরাদনগরে পুলিশ ও ডিবি আতঙ্ক বিরাজ করে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মুরাদ নগর ইউনিয়ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রঞ্জন রায়, কামাল্লা দেবপরি মন্দির কমপ্লেক্সের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব কুমার সাহা, নিবাস চন্দ্র ঘোষ, দয়ানন্দ ঠাকুর।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন এর আগেও একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিল। আমার কাছে যে তথ্য রয়েছে, কয়েকজন সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাকে সামনে রেখে এটি করা হচ্ছে, যারা সাবেক এমপি কায়কোবাদের সঙ্গে রাজনীতি করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেককে এসি বাসে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেককে নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা অর্থ দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কায়কোবাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, ‘বরং কায়কোবাদ আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক এমপি জাহাঙ্গীরের সঙ্গে থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, বালু উত্তোলন, মাটি উত্তোলনের অবৈধ কাজগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করছেন এবং সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করছেন।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘একটা ভিডিওতে দেখেছি, যারা এক সময় কায়কোবাদের ফাঁসি চেয়ে মিছিল করেছিল, তারা এখন কায়কোবাদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করেন। যদি আপনি মুরাদনগরের সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন কী অবস্থা এলাকার? তাহলে তারা চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের যে অত্যাচার, সে কথা আপনাদের বলবে।’