ইসরায়েলের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাই এখন হুমকির মুখে
Published: 27th, March 2025 GMT
আমাদের, ইসরায়েলিদের জীবন এখন নির্ভর করছে ফিলিস্তিনিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো থামানোর ওপর। এই সরল সমীকরণটা সম্প্রতি সপ্তাহগুলোতে আরও পরিষ্কার হয়েছে। আমরা যদি ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে থাকি, তাহলে ডেভিড কুনিও, মাতান জাঙ্গুকার, গ্যালি ও জিভ বারম্যান, অ্যালান ওহেল এবং গাজায় আটক অন্য সব জিম্মির জীবন এখনকার চেয়ে আরও বেশি বিপন্ন হয়ে পড়বে। যেসব জিম্মি ইতিমধ্যে প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, তাঁরা কিন্তু এমনটাই সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তবে উক্ত সমীকরণের প্রভাব আরও অনেক ব্যাপক ও গভীর—আমাদের জীবন এখন নির্ভর করছে ফিলিস্তিনিদের হত্যা থামানোর ওপর। আকাশ ও সমুদ্র থেকে উড়োজাহাজ ও মিসাইলের মাধ্যমে বোমা নিক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। পরিচয়, বয়স ও নিরপরাধের মাত্রার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের কথা ভাবতে হবে।
আমরা যদি হত্যাযজ্ঞ না থামাই, এখানে, ইসরায়েলে, আমাদের শিশুদের জীবন বিপদের মুখে পড়বে। তাদের অনেককেই জীবন দিয়ে ৭ অক্টোবরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দেড় বছর পরেও প্রতিশোধের এই অশেষ লিপ্সা ও হিংস্র ক্ষুধার মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
প্রতিশোধস্পৃহার এই উদগ্র বাসনা গোটা ইসরায়েল রাষ্ট্রকে গ্রাস করলেও তা থামানোর চেষ্টা করা যেতে পারে, যদিও তা অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমাদের বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে ও বিক্ষোভ-মিছিলে যোগ দিতে হবে। না। এবার আর শুধু জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে নয়, নয় প্রতিহিংসাপরায়ণ ও সীমাহীন সহিংসতার এই সরকারের পতনের দাবিতে, বরং ফিলিস্তিনিদের এভাবে জবাই করা যাবে না—এই দাবিতে।ইসরায়েলে আমাদের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাও নির্ভর করছে ফিলিস্তিনিদের হত্যা বন্ধ করার ওপর। এটি বন্ধ না হলে হাইকোর্ট বা অ্যাটর্নি জেনারেল এবং নিশ্চিতভাবে শিন বেতের [অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা বিভাগের] প্রধান আমাদের সহায়তা করতে পারবেন না।
যে রাষ্ট্র এক রাতে বাছবিচারহীনভাব ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে পারে এবং হামলার জন্য এখন আর কোনো ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে না, সে রাষ্ট্র এখানেই থামবে না।
কিন্তু আমরা যে দেশে এখন বসবাস করি, সে দেশের ভাষা এখন এমন হয়ে গেছে যে এখানে এখন আর কোনো মানুষের বাস নেই, আছে শুধু নামহীন শত্রু। এ যেন এক লজ্জাহীন দেশ, যার বৈধতার লজ্জাও নেই, নেই নৈতিক লজ্জা।
বহিঃশত্রুকে নির্মূল করার জন্য হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে আর মরছে হাজারে হাজারে। হামলাকারী আর নিরীহ জনসাধারণের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হচ্ছে না। আমরা হয়তো ধরে নিতে পারি যে এটা নিরন্তর চলবে না। তবে যে শাসকগোষ্ঠীর গাজা যুদ্ধে আত্মসচেতনতার প্রবল ঘাটতি, সে শাসকগোষ্ঠী এখন না হলেও অদূর ভবিষ্যতে ক্ষমতা প্রয়োগে একই রকম আচরণ করবে। যে দেশ গাজার লাখ লাখ নিরীহ বাসিন্দাকে বিমানবিকীকরণ (ডিহিউম্যানাইজড) করতে পারে, সে দেশ নিজের নাগরিকদেরও সামনে তাই করবে।
এক জায়গায় ক্ষমতার সীমাহীন প্রয়োগের বিরোধিতা করে আরেক জায়গায় তা ঠান্ডা মাথায় মেনে নেওয়া হলে প্রকৃতপক্ষে এই বিরোধিতা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ফিলিস্তিনি জনগণকে আমরা বিমানবিকীকরণ করেছি, তাঁদেরকে মানুষ মনে করছি না। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি যুদ্ধের শুরু থেকে প্রাণ দিয়ে আর লাখ লাখ ফিলিস্তিনি আহত ও নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত হয়ে এখন পর্যন্ত এই বিমানবিকীকরণের মূল্য চুকাচ্ছে।
কিন্তু এখন এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে আমরা নিজেরাও নিজেদের জীবন দিয়ে এর মূল্য পরিশোধ করতে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে চড়া মূল্য দেব। অল্প কিছু মানুষ আমাদের বছরের পর বছর এ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। আমরা তো রাষ্ট্রীয় সহিংসতার সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিয়েছি। ৭ অক্টোবরের পর অনেকে একে উৎসাহিত করেছেন ও উসকানি দিয়েছেন। আর এখন তো এই সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। নিয়ন্ত্রণহীন এই ক্ষোভের আগুন তো পথে যা পাচ্ছে তাই পুড়িয়ে দিচ্ছে।
তবে এখন সম্ভব অনুশোচনা করার ও আমাদের মানসিকতা পরিবর্তনের।
প্রতিশোধস্পৃহার এই উদগ্র বাসনা গোটা ইসরায়েল রাষ্ট্রকে গ্রাস করলেও তা থামানোর চেষ্টা করা যেতে পারে, যদিও তা অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমাদের বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে ও বিক্ষোভ-মিছিলে যোগ দিতে হবে। না। এবার আর শুধু জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে নয়, নয় প্রতিহিংসাপরায়ণ ও সীমাহীন সহিংসতার এই সরকারের পতনের দাবিতে, বরং ফিলিস্তিনিদের এভাবে জবাই করা যাবে না—এই দাবিতে।
আমরা যদি শুধু এই দাবিতেই সবাই রাস্তায় নেমে আসি, সবার আগে শুধু গাজা উপত্যকায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার দাবিতে—তাহলে হয়তো আমরা জিম্মিদের জীবন বাঁচাতে ও ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারব।
এখনো এ দেশে যে অল্প আশা আছে, যা নিয়ে আমরা বেঁচে আছি, তাতে এমন কোনো শাসকগোষ্ঠীর সুযোগ নেই, যার একমাত্র ভাষা হলো সহিংসতা এবং যে মানব অস্তিত্ব স্বীকার না করে শুধু হামলার লক্ষ্যবস্তু খুঁজে ফেরে।
দ্রোর মিশানি ইসরায়েলি সাহিত্যিক। হারেৎজ–এ প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তর করেছেন তানিম আসজাদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র জ বন ইসর য় ল আম দ র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
এমন তো হবার কথা ছিল না: তারেক রহমান
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শেষ পর্যন্ত কোনো অগণতান্ত্রিক কিংবা অপশক্তির কাছে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের পথে হাটতে হয় কি-না, এমন শঙ্কাও জানিয়েছেন তারেক রহমান। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে মাঠে থাকা সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এমন বিপদের কথাও স্মরণ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।’
বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।’
দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তবে তাঁর বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।
শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তাঁর দল।
তারেক রহমান বলেন, ‘দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।’
প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে