আমাদের, ইসরায়েলিদের জীবন এখন নির্ভর করছে ফিলিস্তিনিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো থামানোর ওপর। এই সরল সমীকরণটা সম্প্রতি সপ্তাহগুলোতে আরও পরিষ্কার হয়েছে। আমরা যদি ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে থাকি, তাহলে ডেভিড কুনিও, মাতান জাঙ্গুকার, গ্যালি ও জিভ বারম্যান, অ্যালান ওহেল এবং গাজায় আটক অন্য সব জিম্মির জীবন এখনকার চেয়ে আরও বেশি বিপন্ন হয়ে পড়বে। যেসব জিম্মি ইতিমধ্যে প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, তাঁরা কিন্তু এমনটাই সাক্ষ্য দিয়েছেন।

তবে উক্ত সমীকরণের প্রভাব আরও অনেক ব্যাপক ও গভীর—আমাদের জীবন এখন নির্ভর করছে ফিলিস্তিনিদের হত্যা থামানোর ওপর। আকাশ ও সমুদ্র থেকে উড়োজাহাজ ও মিসাইলের মাধ্যমে বোমা নিক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। পরিচয়, বয়স ও নিরপরাধের মাত্রার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের কথা ভাবতে হবে।

আমরা যদি হত্যাযজ্ঞ না থামাই,  এখানে, ইসরায়েলে, আমাদের শিশুদের জীবন বিপদের মুখে পড়বে। তাদের অনেককেই জীবন দিয়ে ৭ অক্টোবরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দেড় বছর পরেও  প্রতিশোধের এই অশেষ লিপ্সা ও হিংস্র ক্ষুধার মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

প্রতিশোধস্পৃহার এই উদগ্র বাসনা গোটা ইসরায়েল রাষ্ট্রকে গ্রাস করলেও তা থামানোর চেষ্টা করা যেতে পারে, যদিও তা অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমাদের বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে ও বিক্ষোভ-মিছিলে যোগ দিতে হবে। না। এবার আর শুধু জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে নয়, নয় প্রতিহিংসাপরায়ণ ও সীমাহীন সহিংসতার এই সরকারের পতনের দাবিতে, বরং ফিলিস্তিনিদের এভাবে জবাই করা যাবে না—এই দাবিতে।

ইসরায়েলে আমাদের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাও নির্ভর করছে ফিলিস্তিনিদের হত্যা বন্ধ করার ওপর। এটি বন্ধ না হলে হাইকোর্ট বা অ্যাটর্নি জেনারেল এবং নিশ্চিতভাবে শিন বেতের [অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা বিভাগের] প্রধান আমাদের সহায়তা করতে পারবেন না।
যে রাষ্ট্র এক রাতে বাছবিচারহীনভাব ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে পারে এবং হামলার জন্য এখন আর কোনো ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে না, সে রাষ্ট্র এখানেই থামবে না।
কিন্তু আমরা যে দেশে এখন বসবাস করি, সে দেশের ভাষা এখন এমন হয়ে গেছে যে এখানে এখন আর কোনো মানুষের বাস নেই, আছে শুধু নামহীন শত্রু। এ যেন এক লজ্জাহীন দেশ, যার বৈধতার লজ্জাও নেই, নেই নৈতিক লজ্জা।

আরও পড়ুনআমরা গাজাবাসী নিজেদের আর কত মিথ্যা বলব২১ মার্চ ২০২৫

বহিঃশত্রুকে নির্মূল করার জন্য হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে আর মরছে হাজারে হাজারে। হামলাকারী আর নিরীহ জনসাধারণের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হচ্ছে না। আমরা হয়তো ধরে নিতে পারি যে এটা নিরন্তর চলবে না। তবে যে শাসকগোষ্ঠীর গাজা যুদ্ধে আত্মসচেতনতার প্রবল ঘাটতি, সে শাসকগোষ্ঠী এখন না হলেও অদূর ভবিষ্যতে ক্ষমতা প্রয়োগে একই রকম আচরণ করবে। যে দেশ গাজার লাখ লাখ নিরীহ বাসিন্দাকে বিমানবিকীকরণ (ডিহিউম্যানাইজড) করতে পারে, সে দেশ নিজের নাগরিকদেরও সামনে তাই করবে।

এক জায়গায় ক্ষমতার সীমাহীন প্রয়োগের বিরোধিতা করে আরেক জায়গায় তা ঠান্ডা মাথায় মেনে নেওয়া হলে প্রকৃতপক্ষে এই বিরোধিতা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

ফিলিস্তিনি জনগণকে আমরা বিমানবিকীকরণ করেছি, তাঁদেরকে মানুষ মনে করছি না। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি যুদ্ধের শুরু থেকে প্রাণ দিয়ে আর লাখ লাখ ফিলিস্তিনি আহত ও নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত হয়ে এখন পর্যন্ত এই বিমানবিকীকরণের মূল্য চুকাচ্ছে।

কিন্তু এখন এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে আমরা নিজেরাও নিজেদের জীবন দিয়ে এর মূল্য পরিশোধ করতে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে চড়া মূল্য দেব। অল্প কিছু মানুষ আমাদের বছরের পর বছর এ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। আমরা তো রাষ্ট্রীয় সহিংসতার সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিয়েছি। ৭ অক্টোবরের পর অনেকে একে উৎসাহিত করেছেন ও উসকানি দিয়েছেন। আর এখন তো এই সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। নিয়ন্ত্রণহীন এই ক্ষোভের আগুন তো পথে যা পাচ্ছে তাই পুড়িয়ে দিচ্ছে।
তবে এখন সম্ভব অনুশোচনা করার ও আমাদের মানসিকতা পরিবর্তনের।

প্রতিশোধস্পৃহার এই উদগ্র বাসনা গোটা ইসরায়েল রাষ্ট্রকে গ্রাস করলেও তা থামানোর চেষ্টা করা যেতে পারে, যদিও তা অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমাদের বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে ও বিক্ষোভ-মিছিলে যোগ দিতে হবে। না। এবার আর শুধু জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে নয়, নয় প্রতিহিংসাপরায়ণ ও সীমাহীন সহিংসতার এই সরকারের পতনের দাবিতে, বরং ফিলিস্তিনিদের এভাবে জবাই করা যাবে না—এই দাবিতে।

আমরা যদি শুধু এই দাবিতেই সবাই রাস্তায় নেমে আসি, সবার আগে শুধু গাজা উপত্যকায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার দাবিতে—তাহলে হয়তো আমরা জিম্মিদের জীবন বাঁচাতে ও ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারব।

এখনো এ দেশে যে অল্প আশা আছে, যা নিয়ে আমরা বেঁচে আছি, তাতে এমন কোনো শাসকগোষ্ঠীর সুযোগ নেই, যার একমাত্র ভাষা হলো সহিংসতা এবং যে মানব অস্তিত্ব স্বীকার না করে শুধু হামলার লক্ষ্যবস্তু খুঁজে ফেরে।

দ্রোর মিশানি ইসরায়েলি সাহিত্যিক। হারেৎজ–এ প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তর করেছেন তানিম আসজাদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র জ বন ইসর য় ল আম দ র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে: তারেক রহমান

সংবাদপত্রের কালো দিবস ছিল আজ। সোমবার এ উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বাণীতে বলেছেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বহুদলীয় গণতন্ত্রের মৌলিক উপাদান। গণতন্ত্রের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব দিতে হলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

রোববার মধ্যরাতে পাঠানো এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো দিবস। এদিন তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী সব দল বাতিল করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। তাদের অনুগত চারটি সংবাদপত্র রেখে জাতিকে নির্বাক করে দিয়েছিল। বিভিন্ন সংবাদপত্রে কর্মরত অসংখ্য সংবাদকর্মী বেকার হয়ে পড়েন। তাদের রুজি-রোজগার ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘একাত্তরের যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। গণতন্ত্রে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় এবং এর মূল শর্ত হলো বাক, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ থাকায় রাষ্ট্র ও সমাজ জবাবদিহির আওতায় আসে এবং দেশের সরকার গঠনে নাগরিকের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলাকে স্তব্ধ করে দিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। পরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ দেশের কাঙ্ক্ষিত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন। বাকশাল সরকারের সব ধরনের অগণতান্ত্রিক কালাকানুন বাতিল করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।’

তারেক রহমান উল্লেখ করেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ মূলত চিন্তা ও বিবেককে বন্দি রাখা। শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তার মেয়ে শেখ হাসিনাও একই পথ ধরে তাদের প্রকৃত দর্শন একদলীয় ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করেছিল নতুন আঙ্গিকে। নানা কালাকানুন প্রণয়ন করে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের ওপর অব্যাহত জুলুম চালিয়েছে তারা।’

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের সই করা বাণীতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। সত্য উচ্চারণ করলেই নেমে আসত নির্যাতনের খড়্গ। বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীসহ সব পর্যায়ের মানুষকে সার্বক্ষণিক শঙ্কিত থাকতে হয়েছে।

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো একের পর এক ড্রাকোনিয়ান (কঠোর) আইন প্রণয়ন করে সংবাদপত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভয়াল দুর্গে বন্দি করা হয়েছিল। বিগত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর গণমাধ্যম কিছুটা স্বাধীনতা ভোগ করলেও এখনও ফ্যাসিবাদী শক্তির হাত থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থান চান আলী রীয়াজ
  • গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য তিন ধরনের সংস্কারের কথা বললেন বদিউল আলম মজুমদার
  • সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে: তারেক রহমান
  • দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু
  • রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়