‘বাবার দোকান’ দাবি করে ১০ দোকানে তালা বিএনপি সভাপতির ছেলের
Published: 28th, March 2025 GMT
জমির মালিকানা নিজের বাবার দাবি করে ১০টি দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতির দুই ছেলে। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকালে সৈকত সংলগ্ন শুটকি মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে।
বর্তমানে ওই ১০ দোকানীর জীবিকা বন্ধ হয়ে গেছে। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। দোকান বুঝে পেতে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন পৌর বিএনপির অন্যান্য নেতারা।
ওই ১০ দোকানী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৬ বছর আগে বেল্লাল মোল্লা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে তারা দোকানগুলো ভাড়া নেন। এসময় এক এক দোকানী ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা করে বেল্লাল মোল্লাকে অগ্রিম প্রদান করেন। কিন্তু ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ওই জমি তিন ব্যক্তি নিজেদের বলে দাবি করেন।
এর মধ্যে কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মুসুল্লী, রাশেদুল-আফতাব ও বেল্লাল মোল্লা। দোকানীরা এ তিন ব্যক্তিকে বসে বিষয়টি সমাধানের জন্য বার বার অনুরোধ জানান। কিন্তু দীর্ঘদিনেও বিষয়টি সমাধান না করে পৌর বিএনপির সভাপতির ছেলে লতাচাপলী ইউনিয়ন যু্বদলের সহ সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মুসুল্লী তাদের সঙ্গে দোকানীদের নতুন করে ভাড়ার চুক্তিপত্র করার চাপ প্রয়োগ করেন।
জমির মালিকানার বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় দোকানীরা রিয়াজ মুসুল্লির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ করতে রাজি না হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে রিয়াজ মুসুল্লী ও তার ভাই মহিপুর থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন মু্সুল্লীসহ তাদের অনুসারীরা দোকানগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দোকানী বলেন, “আমরা সবাই বেল্লাল মোল্লার সঙ্গে চুক্তিপত্র করেছি। তাকে আমাদের লাখ লাখ টাকা অগ্রিম দেওয়া রয়েছে। আমরা রাজনীতি বুঝি না। আমাদের সামান্য শুটকি বিক্রি করে পেট চলে। কিন্তু গতকাল রিয়াজ মুসুল্লী ও তার ভাইসহ ৮ থেকে ১০ জন এসে আমাদের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে সে আমাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে। তার সঙ্গে আমাদের ডিট করতে বলেছে। দুইদিন পর ঈদ। রোজার একমাস কোন বিক্রি ছিল না, লোকসানে দিন কেটেছে। ঈদে দোকান খুলতে না পারলে আমাদের পেটে লাথি পড়বে।”
এ বিষয়ে বেল্লাল মোল্লা বলেন, “১৯৯৬ সালে পটুয়াখালী পৌরসভার কমিশনার মিলন মিয়ার স্ত্রী উম্মে সালমার কাছ থেকে আমি এই জমি ক্রয় করেছি। সে আমাকে সাড়ে ১৬ শতাংশ জমির দলিল দিয়েছে। পরে সেখানে দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছি। দোকান তোলার সময় বা পরে ভাড়া দেওয়ার সময় অন্য কেউ এ জমির মালিকানা দাবি করেনি। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার হঠাৎ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা দোকানগুলো দখলে নিয়েছে। এর আগে মুসুল্লী বাড়ির ছেলেরা আমাকে মারধর করেছে। আমি দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম।”
জমির মালিকানা দাবি করা রাসেদুল ও আফতাব বলেন, “সাবেক লতাচাপলী মৌজার ১১২৭নং ক্ষতিয়ানে ৫১৭৮/১০০২ এবং ৫১৮০/১০০৩ দাগের মালিক ৭ জন। আরজআলী, ওয়াজেদ আলী, আবদুল আলী, সোমেদ আলী, সেকান্দার আলী, সুলতান শেখ ও চান মিয়া। এসব মালিকের কাছ থেকে ৫ একর ৯৯ শতাংশ জমি লাল মিয়া ১৯৭০ সালে ক্রয় করেন। লাল মিয়ার ওয়ারিশগন ৭ মাস আগে আমাদের নামে আমোক্তারনামা দেয়। জমি বুঝে পাওয়ার জন্য অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। বর্তমানে আমাদের জমি বুঝে পাওয়ার জন্য দেওয়ানি মামলা চলমান রয়েছে।”
কুয়াকাটা পৌর বিএনপির ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন ঘরামী বলেন, “সভাপতির দুই ছেলে জোরপূর্বক ক্ষমতা খাটিয়ে এ কাজটি করেছে। দোকানে তালা দেওয়ার পর আমি ওখানে গিয়ে রিয়াজের কাছে জানতে চাইলে সে উল্টা পাল্টা কথা বলে এবং দোকানীদের ভয়ভীতি দেখায়। এভাবে তাদের দোকানে তালা মারা কোনভাবেই ঠিক হয়নি। এটা আসলে দলের জন্য একটা বিপর্যয়।”
কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মুসুল্লী বলেন, “আমার ওই জমির বৈধ মালিকানার কাগজপত্র রয়েছে। যারা আমার সঙ্গে ডিট করেছে তাদের দোকান খুলে দেওয়া হয়েছে। বেল্লাল মোল্লা আওয়ামী লীগের ক্ষমতার জোরে ওই জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছিল। রাসেদুল-আফতাব ওই জমি দাবি করলেও তাদের দাগ অন্য যায়গায়। আমার দাগের মধ্যে তাদের জমি নেই।”
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মুসুল্লীর ছোট ছেলে লতাচাপলী ইউনিয়ন যুবদলের সহ সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মুসুল্লী বলেন, “এ যায়গা আমার বাবার। আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। পরে দোকানীদের আমাদের কাছ থেকে ডিট নিতে বলেছি। কিন্তু কোন সমাধান না পেয়ে বৃহস্পতিবার দোকানগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি।”
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/ইমরান/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য আম দ র ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ