সবাই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন চান। গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের সময় মানুষের মূল চাহিদা ছিল ‘রাষ্ট্র মেরামত করা’। এই আকাঙ্ক্ষাই ছাত্রদের আলাদা শক্তি জোগান দিয়েছিল। এই শক্তি রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘ ১৫ বছর সংগ্রাম করেও অর্জন করতে পারেনি। কারণ তাদের সংস্কার বা রাষ্ট্র মেরামতের সাহসী কোনো কর্মসূচি ছিল না। অবশ্য বিএনপি শেষ প্রান্তিকে এসে ৩১ দফার একটি সংস্কার প্রস্তাবের কথা বলেছিল। সেখানে ইতিবাচক অনেক কথা ছিল, যদিও সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ ও আরও কিছু বিষয় নিয়ে সাহসের ঘাটতি ছিল।

আমাদের ইতিহাসের বড় বাঁকগুলোতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব অনেকাংশেই যথেষ্ট সাহস দেখাতে পারেনি। সে কারণেই এই দেশে বারবার জনতা এগিয়েছে, নেতৃত্ব থেকেছে পেছনে। দেশের স্বাধীনতাটা যুদ্ধ করেই এসেছে। তাই তার একটা চেতনা জনমনে ছিলই। তা না হরে যুদ্ধ করার সাহস ও প্রেরণা জনতা পেল কোথা থেকে? 
এখন যারা ‘নির্বাচন কোনো অজুহাতে দীর্ঘায়িত করা যাবে না’ বলছেন, তারা কি সংস্কারের আগেই নির্বাচন চান? রাষ্ট্র মেরামতের আগেই নির্বাচন চান? কেন চান? নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর তিন জোটের রূপরেখার দলিল অপ্রয়োজনীয় কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এ কারণেই পরের জেনারেশনকে আবারও রক্ত দিতে হলো। মাঝখানের এই ৩৪ বছর জাতির বেঘোরে কাটল। এর মধ্য থেকেই আমরা শিখেছি– গণতন্ত্র মানে শুধুই এক দিনের নির্বাচন নয়; সারাবছর চর্চার পরিবেশ তৈরি করার বিষয়। রাষ্ট্র মেরামত বা সংস্কার না করা গেলে ওই পরিবেশ তৈরি হবে না।

আমরা এ দেশেই নির্বাচিত কিন্তু অগণতান্ত্রিক সরকারও অনেক দেখেছি। দেশের সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন এলেই অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। ওই অনির্বাচিত সরকারই ভালো নির্বাচন করতে পারবে বলে মানুষ মনে করেছে। মানুষের এই আস্থার নামই গণতন্ত্র। শুধু ভোটের দিন ভোটের আগে ‘ফোঁস করা পানি’ খাওয়ার নাম গণতন্ত্র নয়। এ দেশে বড় দলের বড় দায়িত্বশীলতা থাকতেই হবে। 
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথাবার্তা ইতোমধ্যে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনি দলকে ভালোভাবে গোছাতে চান বলেই মনে হয়েছে। কিন্তু সবকিছু চাইলেই পারা যায় না। রাজনীতিতে আমাদের মতো গরিব ও তস্য বেকারদের দেশে গণ-আয়তনে কাজ আছে, এমন সব দলেই ‘খাই খাই’ কালচার থাকে। সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টাতে চাইলেও কিছু সময় দিতে এবং নিতে হবে। 
আমি কিন্তু নির্বাচনবিরোধী নই। আমিও নির্বাচিত সরকার চাই, তবে অসময়ে নয়। নিজেরা কতটা গণতন্ত্রী; তা প্রমাণ দেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার এবং জাতীয় সংসদ– দুই নির্বাচনের কোনটা আগে হবে, নাকি একসঙ্গে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে বাদ দিয়েই একটা মতৈক্য তৈরি করে দেখাতে পারে। গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মতৈক্য তৈরি করার চেষ্টা চলতে পারে। তাতেই বোঝা যাবে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব কতটা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি অর্জন করতে পারল। পুরোনো রাজনৈতিক বড় দলগুলো ক্ষমতায় গেলে কতটা ফ্যাসিবাদী হতে পারে, তা আমরা জানি; দেখেছি।
নতুন দলের ক্ষেত্রেও নির্ভরতার সংকট আছে। তাদেরই কারও না কারও মদদে ৩২ নম্বরে এবং বাড়িঘরে হামলা হয়েছে। সেটা মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। আবার হুট করে সেকেন্ড রিপাবলিক বলে দিলেন– এসব অস্থিরতা। যখন কিনা আপনাদের দায় বিতর্ক নিষ্পত্তি করে মতৈক্য তৈরি, তখন নিজেরাই মতবিরোধ তৈরি করলে চলবে কেন? এসব কারণে ‘তারুণ্যের অস্থিরতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
বর্তমান সরকার ভোটে পাস করে আসেনি, তবুও গণতান্ত্রিক সরকারই বটে। কেননা, মানুষ এই সরকার চেয়েছিল। অস্ত্র উঁচিয়ে বা ভেল্কিবাজি করে এই সরকার ক্ষমতায় আসেনি। মানুষের চাওয়াটাই তো গণতন্ত্র। কারবারিদের কোটি কোটি টাকার খেলা দেখিয়ে নামকাওয়াস্তে এমপি হয়ে আখের গোছানোর নিরবচ্ছিন্ন লুটপাট-চাঁদাবাজি মানে গণতন্ত্র নয়। ফলে সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার আগ পর্যন্ত যতই ক্লান্ত হোক সরকার; জনতা ছাড়বে না।

যারা দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর চায়, সরকারের কাছে তাদের আশাবাদ অনেক, যা সরকার পূরণ করতে পারছে না বলে মনে হচ্ছে। সরকারের ভেতরে আরেক সরকার বিরাজ করছে বলেই আমরা ভাস্কর্য, স্থাপনা, মাজার ভাঙা দেখেছি; প্রতিকার দেখিনি। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ দেখেছি; প্রতিকার দেখিনি। নানা ক্ষেত্রে তৌহিদি জনতার নামে মব ভায়োলেন্স উস্কে দেওয়া চলছে; তারও শক্ত হাতে নিবারণ দেখছি না। এটা যদি চলতে থাকে, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজচিন্তা মার খাবে। চারদিকে বৈষম্যের বিষবৃক্ষ শিকড় বিস্তার করবে এবং দিন শেষে রাষ্ট্র মেরামত জলে গেলে জনতা কিন্তু এ সরকারকেও ছাড়বে না।

জহিরুল ইসলাম: সভাপতি, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত র ষ ট র ম র মত গণতন ত র র জন ত ক ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমির খসরু

কোনও মহামানবকে বাংলাদেশের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দেশের মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সোমবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, কোনও মহামানব কোনও দেশের গণতন্ত্রের সমাধান দেবে তার জন্য দেশের জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে, এটা বিশ্বাস করার কারণ নেই।

এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় ন্যাপ ভাসানীর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন।

পরে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে আমজনতার দলের সঙ্গে বৈঠকে করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। আমজনতার দলের আহ্বায়ক কর্নেল অব. মিয়া মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা।

বিএনপির পক্ষে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।

আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু বলেন, মানুষ বলতে কারা? আমার বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, যারা জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করছে। যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় লড়াই করেছে, আমাদের সঙ্গে যারা রাস্তায় ছিল, ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি দল, পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের জন্য।

তিনি আরও বলেন, সংস্কারের জন্য যে কথাগুলো বলা হয়, সংস্কারের ব্যাপারে যেখানে ঐকমত্য হবে- সেই সংস্কারগুলো দ্রুত করে নির্বাচন কমিশনকে বলা হোক, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে রোডম্যাপ দিয়ে ভোটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তো জনগণ বলতে কারা? 

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখন জনগণ বলতে যদি কোনও একটি বিশেষ গোষ্ঠী, সুবিধাভোগী- যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে, জনগণের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে গণতন্ত্রকে সংস্কারের মুখোমুখি করছে! এটা তো কারও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কারণ নেই। ১৬ বছরের যুদ্ধটা ছিল গণতন্ত্রের জন্য, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনার জন্য। যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। সেটা যে সরকারই হোক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মিয়ানমারকে মানবিক করিডোর দেওয়া স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকট’
  • মিয়ানমারকে মানবিক করিডর দেওয়ার অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই: সিপিবি
  • সাবেক বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ 
  • কোনো মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমীর খসরু
  • কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমীর খসরু
  • কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমির খসরু
  • জনগণ গণতন্ত্রের জন‍্য রক্ত দিয়েছে, কোনো মহামানবের প্রতিষ্ঠার জন্য নয়: আমীর খসরু
  • নতুন কর্মসূচি দিল যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদল