পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত
Published: 1st, April 2025 GMT
পুরো রমজান মাসে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ছিল সুনসান নীরবতা। বিশ্বের দীর্ঘতম এ সমুদ্রসৈকত ছিল অনেকটা ফাঁকা। ছিল না কোনো কোলাহল, হৈ–হুল্লোড়। হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টগুলো কক্ষভাড়ায় ছাড় দিয়েও অতিথি পায়নি। বন্ধ ছিল পর্যটকনির্ভর রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য ব্যবসা।
সেই নীরবতা ভেঙেছে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে। ঈদের দ্বিতীয় দিনে বদলে গেছে সেই দৃশ্য। সাগরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। প্রচণ্ড গরমে শরীর জুড়িয়ে নিতে অনেকেই নেমে পড়েছেন সাগরের পানিতে।
ঈদের দ্বিতীয় দিন আজ মঙ্গলবার সৈকতে এসেছেন অন্তত ৬০ হাজার পর্যটক। সাগরে স্থানীয় আরও ৪০-৪৫ হাজার মানুষ নামেন। সব মিলিয়ে আজ সাগরের লোনাজলে নেমে গোসল করেন প্রায় এক লাখ মানুষ।
সৈকতে ঘোরাঘুরি শেষে বিপুলসংখ্যক পর্যটক ছুটছেন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর, হিমছড়ির ঝরণা, পাথুরে সৈকত ইনানী ও পাটোয়ারটেক, টেকনাফ সৈকত, মাথিনকূপ, রামুর বৌদ্ধপল্লি, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ও মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির। ঈদের তৃতীয় দিন আগামীকাল বুধবার সৈকত ভ্রমণে আরও অন্তত এক লাখ পর্যটক আসবেন বলে আশা করছেন কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলের মালিকেরা।
আজ সকাল সাড়ে ৯টায় সৈকতে সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচ থেকে ছয় হাজার পর্যটক সমুদ্রের কোমরসমান লোনাজলে নেমে শরীর ভেজাচ্ছেন। কেউ দ্রুতগতির জলযান জেডক্সিতে চড়ে গভীর সমুদ্রে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ টিউবে গা ভাসিয়ে সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টা করছেন।
স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সৈকতে গোসলে নামেন ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম। তারপর বালুচরে উঠে এসে কিটকটে (চেয়ার-ছাতা) বসে সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। আব্দুল আলীম বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে সমুদ্রের লোনাজলে শরীর ভেজানোর মজাই আলাদা। পানিতে ভেসে ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালি দারুণ আনন্দের।’ সকালে উড়োজাহাজে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছে সৈকত তীরের একটি তারকা হোটেলে ওঠেন আব্দুল আলীম। তারপর দ্রুত সৈকতে নেমে পড়েন। আগামীকাল সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে ঘুরে বেড়াবেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে উড়োজাহাজে ঢাকায় ফিরে যাবেন।
একইভাবে সুগন্ধা পয়েন্টের পাশাপাশি উত্তর দিকের সিগাল, লাবণী এবং দক্ষিণ দিকের কলাতলীর চার কিলোমিটারের সৈকতেও মানুষ গিজ গিজ করছে। সমুদ্রে গোসলের পাশাপাশি পর্যটকেরা বালুচরে ঘোড়ার পিঠে চড়ে কিংবা বিচবাইকে উঠে সৈকতের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মুঠোফোনে ছবি তুলছেন ইচ্ছেমতো। অনেকে ভিডিওচিত্র ধারণ করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিকমাধ্যমে।
হোটেল-মোটেল মালিকেরা জানান, রমজান মাসের আগের চার মাসে বিপুলসংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার ঘুরতে এসেছেন। প্রতি সপ্তাহে গড়ে আড়াই থেকে তিন লাখ পর্যটক এসেছিলেন। আর গত বছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে অন্তত ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছিল। এবার অনেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনলাইন বা ফোনে যোগাযোগ করে কক্ষ বুকিং দিয়েছেন। ১ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। কক্সবাজার শহর ও মেরিন ড্রাইভের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘বাইরের পর্যটকেরা ঈদের পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। পর্যটকেরা ভ্রমণে এসে যাতে সমস্যার সম্মুখীন না হন; এজন্য অনলাইনে হোটেল বুকিং দিয়ে এলেই সবচেয়ে ভালো।’
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, মঙ্গলবার দুপুরের আগেই রোজার মাসে বন্ধ থাকা পাঁচ শতাধিক রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে। হাজার হাজার পর্যটক রেস্তোরাঁয় সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার সেরেছেন। সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে খাবারের অতিরিক্ত মূল্য আদায় হচ্ছে কি না, তা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। খাবার টেবিলে মূল্যতালিকা রাখা থাকে। পর্যটকেরা তালিকা দেখেই যেন খাবারের অর্ডার দেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের অতিরিক্ত চাপ বাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সমুদ্রসৈকত ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকেরা এসে যাতে ভালো সেবা পান এর জন্য পর্যটনসংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ, অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানিরোধ এবং নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সৈকতে ও আশপাশের বিনোদনকেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে। কোনো অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে ডুবে গেছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু। দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যটকদের সেতুটিতে উঠতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাঙামাটি পর্যটক কমপ্লেক্স।
পর্যটক কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে গত সোমবার সেতুর কিছু অংশে পাটাতনের ওপর পানি ওঠে। তবে আজ বুধবার সকাল ছয়টার দিকে পানি বেড়ে সেতুটি তলিয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে সকাল ১০টার দিকে সেতুতে উঠতে পর্যটকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেতুর পাটাতনের ওপর এখন চার ইঞ্চির মতো পানি রয়েছে। পর্যটকদের জন্য সেতুতে উঠতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও নিকটবর্তী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা সেতু দিয়ে পারাপার করতে পারবেন।’