যোগী আদিত্য সরকারের বুলডোজার–কাণ্ড, ক্ষতিপূরণের নির্দেশ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের
Published: 2nd, April 2025 GMT
ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের যোগী আদিত্য সরকারের বুলডোজার–কাণ্ড ‘অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে’ দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিলেন। উত্তর প্রদেশে যে ছয়জনের বাড়ি রাতারাতি বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের প্রত্যেককে ঘর তৈরির জন্য ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারপতিরা বলেছেন, এই কাজ তাঁদের বিবেকে প্রবল ধাক্কা দিয়েছে। অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছে। তাঁরা বলেছেন, আশ্রয় ও বাসস্থানের অধিকার সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অভিন্ন অঙ্গ। উন্নয়নের কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্তৃপক্ষকে সেটা জানতে হবে।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ দুষ্কৃতকারী দমনে বুলডোজার–নীতি প্রথম চালু করেন। পরে বিজেপি–শাসিত অন্য রাজ্যেও এই নীতির যথেচ্ছ ব্যবহার হতে থাকে। দাঙ্গা বা অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ধৃত অথবা পলাতকদের ঘরবাড়ি দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগেই বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে দেওয়া হতে থাকে। এ নিয়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হতে থাকে রাজ্যে রাজ্যে। সুপ্রিম কোর্ট এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্যও করেন। বলেন, কেউ অবৈধভাবে কিছু নির্মাণ করলেও নিয়ম মেনে নোটিশ না দিয়ে রাতারাতি তা ভেঙে দেওয়া যায় না। যা কিছু করতে হবে নিয়মমাফিক। কিন্তু বহু রাজ্য সেই নির্দেশ না মেনে বুলডোজারের ব্যবহার করে চলেছে।
গত মঙ্গলবার যে ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়া ও এ এস ওক উত্তর প্রদেশ সরকারকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন, সেটি ঘটেছিল ২০২৩ সালে। সরকারের চোখে গ্যাংস্টার বলে পরিচিত ধৃত আতিক আহমেদ সেই বছর খুন হন। আতিকের সম্পত্তি ভেবে রাজ্য প্রশাসন প্রয়াগরাজ জেলায় ওই ছয় বাড়ি ভেঙে দেওয়ার নোটিশ আগের রাতে পাঠিয়ে পরদিন বুলডোজার চালিয়েছিল। কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, অবৈধভাবে ওই বাড়িগুলো তৈরি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা বিচারের জন্য এলাহাবাদ হাইকোর্টে গেলে সেখানে তাঁদের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তারপর তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
রায় দেওয়ার সময় বিচারপতি ভুঁইয়া একটি দৃশ্যের অবতারণা করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে, বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে দেওয়া বাড়ির মধ্য থেকে একটি ছোট্ট মেয়ে বুকে কয়েকটি বই আঁকড়ে বেরিয়ে আসছে। সেই ঘটনার বর্ণনা করে বিচারপতি ভুঁইয়া বলেন, ‘এই দৃশ্যগুলো আমাদের বিবেকে ঘা দেয়। এই ছবি দেখে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। এ জিনিস বন্ধ হওয়া দরকার।’
বিচারপতিরা বলেন, যাঁদের ঘর ভাঙা হয়েছে, তাঁদের কাউকে নিয়ম মেনে আগে থেকে নোটিশ দেওয়া হয়নি। আগের রাতে বাড়িতে নোটিশ লটকানো হয়েছিল। আবেদনকারীদের কারও নতুন করে ঘর তৈরির টাকা নেই। সে জন্য প্রত্যেককেই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল ক্ষতিপূরণের বিরুদ্ধাচরণ করলেও দুই বিচারপতি তা আমলে নেননি। তাঁরা বলেন, ক্ষতিপূরণ দিলে প্রশাসন আইন মেনে কাজ করতে বাধ্য হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।