Samakal:
2025-07-31@21:50:12 GMT

শাওয়ালের ছয় রোজা 

Published: 4th, April 2025 GMT

শাওয়ালের ছয় রোজা 

পবিত্র রমজান মাসের পরের মাস শাওয়াল। ইসলামে এ মাসের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। শাওয়াল মাসে রয়েছে বিশেষ ছয়টি রোজা। এ ছয়টি রোজা রাখা মহানবীর (সা.) সুন্নত। এই ছয়টি নফল রোজা রমজানের ফরজ রোজার সব ভুল-ত্রুটির ক্ষতিপূরণ। রমজানের সব রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখার মাধ্যমে সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়। নবী (সা.

) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখে, সে যেন সারাবছরই রোজা রাখল।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা সুরা আনআমের ১৬০ আয়াতে এরশাদ করেন, কেউ কোনো নেক আমল করলে তাকে তার ১০ গুণ সওয়াব প্রদান করা হয়। রমজানের এক মাসের ১০ গুণ হলো ১০ মাস, আর শাওয়াল মাসের ছয় দিনের ১০ গুণ হলো ৬০ দিন, অর্থাৎ দুই মাস। সুতরাং ৩৬টি রোজায় সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়। 

এ রকম শর্ত থাকলেও শরিয়তসম্মত কারণে রমজানের পূর্ণ মাস রোজা রাখেননি এমন লোকদের শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখাতে মানা নেই। বরং সে ক্ষেত্রে নফল রোজার সীমাহীন নেকি তিনি পাবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।    

কেননা, রাসুলুল্লাহ (সা.) বেশি বেশি নফল রোজা নিজে তো রাখতেনই, সাহাবিদেরও উৎসাহিত করতেন। নফল রোজার মধ্যে রয়েছে সাপ্তাহিক দুই রোজা সোমবার ও বৃহস্পতিবার, মাসিক তিন রোজা আইয়ামে বিজ তথা চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা, মহররম ও আশুরার রোজা, শাবান মাসের রোজা, শাওয়ালের ছয়টি রোজা, জিলহজ মাসের প্রথম দশকের রোজা, বিশেষ করে ৯ তারিখের রোজার বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করেছেন প্রিয় নবী (সা.)।   

হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি কি সারাবছর রোজা রাখতে পারব? তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারাবছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখো, তাহলেই তুমি সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে (তিরমিজি)।

হাদিসে বর্ণিত– প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা শাওয়াল মাসের ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এই মাসে ছয় দিন রোজা রাখবে, আল্লাহতায়ালা তাকে প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যার সমান নেকি দেবেন; সমপরিমাণ গুনাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন।

হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) শাওয়াল মাসের প্রথম দিকে, মধ্যভাগে বা শেষাংশে নির্দিষ্ট করে রোজা রাখার কথা বলেননি। আবার ছয়টি রোজা লাগাতার রাখার নির্দেশনাও হাদিসে নেই। তাই শাওয়াল মাসের প্রথম দিন অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের দিনটি বাদ দিয়ে মাসের যে কোনো ছয় দিন রোজা রাখলেই উল্লিখিত সওয়াব লাভ করা যাবে।

শাওয়াল মাসে বিরতি দিয়ে ছয়টি রোজা পূর্ণ করতে পারলে হাদিসে বর্ণিত সওয়াব পাওয়া যাবে। যাদের ভাংতি রোজা আছে; অসুস্থতা কিংবা নারীদের মাসিক তথা হায়েজ-নেফাসের কারণে রমজানের রোজা অপূর্ণ থাকে, তাদের জন্য নিয়ম ও করণীয় হলো, শাওয়াল মাসে তাদের ভাংতি রোজাগুলো আগে পূর্ণ করে নেবে। 

হাদিসমতে, শাওয়াল মাসে বিয়েশাদি সুন্নত, যেরূপ শুক্রবার এবং জামে মসজিদ ও বড় মজলিসে আক্দ অনুষ্ঠিত হওয়া সুন্নত। কারণ মা আয়েশার বিয়ে শাওয়াল মাসের শুক্রবারে মসজিদে নববিতেই হয়েছিল। (মুসলিম) 

নেক আমলের প্রতিদানের একটি রূপ হলো আবার আরও নেক আমল করার সৌভাগ্য অর্জন করা। তাই নামাজ, রোজা, তেলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি বাকি ১১ মাসও বজায় রাখতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজাসহ সারাবছর ইখলাসের সঙ্গে অন্যান্য ইবাদত করার তৌফিক দান করুন। 

ড. মো. শাহজাহান কবীর: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মত মত ইসল ম স র বছর র জ সওয় ব প রমজ ন র নফল র জ ছয় দ ন র ছয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ