সৈয়দ এরশাদ আহমেদ আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচ্যাম) সভাপতি। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাকির হোসেন 

সমকাল: যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে পণ্য আমদানিতে শুল্কহার এত বাড়াল কেন? বাংলাদেশে এর প্রভাব কীভাবে দেখছেন? 

সৈয়দ এরশাদ আহমেদ: ট্রাম্প প্রশাসন চাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রপ্তানি বাড়ুক। কেননা, বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি। এ কারণে অনেক দেশের ওপর রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা প্রতিদানমূলক শুল্ক আরোপ করেছে। যে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্কহার যত বেশি, সেই দেশের পণ্য আমদানিতে ততবেশি হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। আমেরিকার নতুন ট্যারিফ নীতির ফলে বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে সে দেশের আমদানিকারকদের খরচ অনেকটাই বাড়বে। বাংলাদেশের জন্য ট্যারিফ হার বেড়ে হয়েছে ৩৭ শতাংশ। এত বেশি ট্যারিফ থাকায় বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি কমে যেতে পারে। বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগী দেশগুলোতেও কাছাকাছি হারে শুল্ক আরোপ হয়েছে। তবে ভিয়েতনাম ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্কহার কমাবে। ভারতও কয়েক দিন আগে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

সমকাল: বাংলাদেশ কি আগে থেকেই কোনো কিছু বুঝতে পেরেছিল? শুল্ক আরোপের আগে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল? 

সৈয়দ এরশাদ আহমেদ: আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার আসার পর কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের নীতিগত পরিবর্তন হবে, তার আভাস আগে থেকেই ছিল। তারা যে নতুন করে শুল্ক আরোপ করবে, তা বোঝা গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় শুল্ক কমানোর বিষয়টি আগে থেকেই এসেছে। তাই আগেই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারত। মনে রাখতে হবে, এখনকার দিনে শুধু রাজনৈতিক কূটনীতিই যথেষ্ট নয়, অর্থনৈতিক কূটনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমি মনে করি, অর্থনৈতিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের দুর্বলতা রয়েছে। 

সমকাল: বাংলাদেশ এখন কী করতে পারে? 

সৈয়দ এরশাদ আহমেদ: আমার মতে, বাংলাদেশের প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেওয়া। একই সঙ্গে সে দেশ থেকে আমদানি বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব পণ্য বাংলাদেশে আসে, তার অনেকটাতে কম শুল্ক রয়েছে। প্রসাধনসামগ্রী, চোখের লেন্স, মেডিকেল ইকুইপমেন্টসহ কিছু পণ্যে শুল্কহার অনেক বেশি। এনবিআরের কাছে তালিকা রয়েছে। এনবিআর তালিকা ধরে বসে কোথায় কতটুকু কমানো যায় এবং তার ফলে লাভ-ক্ষতি কী হবে, তা পর্যালোচনা করুক। আমার মনে হয়, শুল্ক কমালে বাংলাদেশের লাভ হবে। যুক্তরাষ্ট্র তখন আমাদের পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে দেবে। 

শুল্ক কমানোর পাশাপাশি অন্যান্য কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান আগ্রহকে আমরা কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে পারি। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ ট্যারিফ চাপিয়েছে, তাই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম কেনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ট্যারিফ কমানোর শর্ত বা গ্রেস পিরিয়ড আদায়ের চেষ্টা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার বিনিময়ে বাংলাদেশ তাদের কাছে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য পণ্যের ট্যারিফ হার কমানোর দাবি জানাতে পারে। 

মূল কথা, কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে আমাদের ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। বাংলাদেশকে বুঝতে হবে, তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। সে ক্ষেত্রে বেকারত্ব বেড়ে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। 

সমকাল: রপ্তানিকারক ও উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী? 

সৈয়দ এরশাদ আহমেদ: শুধু তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভর না করে রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলী দরকষাকষির মাধ্যমে ট্যারিফ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। কৌশল ও পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন হলে এখনকার কঠিন চ্যালেঞ্জই হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির সাফল্যের সূত্র। বর্তমান সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন সরকার, বেসরকারি উদ্যোক্তা ও অংশীজনের সমন্বিত প্রচেষ্টা। সবার ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগই পারে এই ঝুঁকিকে সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করতে।

সমকাল: অ্যামচ্যাম কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে? 

সৈয়দ এরশাদ আহমেদ: অ্যামচ্যামের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা অংশীজনের সঙ্গে বসব। বাংলাদেশ সরকারের করণীয় নির্ধারণে সুপারিশ করব। 

সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ। 

সৈয়দ এরশাদ আহমেদ: সমকালকেও ধন্যবাদ। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প শ ল ক আর প পদক ষ প ন শ ল ক কম ক টন ত কম ন র র ওপর সরক র সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে ট্রাক উল্টে ১ জন নিহত, আহত ৩

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় একটি ট্রাক উল্টে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ট্রাকটির চালকসহ তিনজন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার বড়াদম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম খোকন চন্দ্র দাস (৫০)। তিনি দীঘিনালা উপজেলার থানাপাড়া এলাকার সুকুমার দাসের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় থাকা নিজের বাগান থেকে ট্রাকটিতে কাঠ বোঝাই করে দীঘিনালা সদরে নিয়ে যাচ্ছিলেন খোকন চন্দ্র দাস। ট্রাকটিতে তিনি ছাড়াও চালক ও দুজন গাছ কাটার শ্রমিক ছিলেন। উপজেলার বড়াদম এলাকায় এলে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এ সময় ট্রাকে থাকা চারজনই আহত হন।

দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা আহত চারজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে গুরুতর আহত খোকন চন্দ্র দাসকে সেখান থেকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। একজনের অবস্থা শঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকারিয়া দুর্ঘটনায় হতাহত হওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ