গণ-অভ্যুত্থানোত্তর বাংলাদেশে সংস্কার কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিচার বিভাগ: প্রধান বিচারপতি
Published: 5th, April 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানোত্তর বাংলাদেশে সংস্কার কার্যক্রমে বিচার বিভাগ নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। আজ শনিবার সকালে রংপুরের একটি হোটেলে ‘জুডিশিয়াল ইনডিপেনডেন্স অ্যান্ড এফিশিয়েন্সি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপি যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ। সেমিনারে বক্তব্য দেন ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
প্রধান বিচারপতি তাঁর বক্তব্যে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিতকরণে বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রসঙ্গ এবং বিচারপ্রক্রিয়াকে আরও জনমুখী করতে তাঁর ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিবরণ তুলে ধরেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় ভবিষ্যতের সংস্কারপ্রক্রিয়ার গতিপথ নির্ধারণ করবে। এখন সময় এসেছে, এই রোডম্যাপ থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়ার। বিচারিক সংস্কার শুধু বিভিন্ন খাতভিত্তিক সংস্কারের স্থায়িত্বের মূল চাবিকাঠি নয়। বরং এটি এখন নিজেই সংস্কার শব্দের প্রতীক হয়ে উঠেছে। জেলা বিচার বিভাগ ও ম্যাজিস্ট্রেসি সংস্কারের অগ্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বলে আশা করি।’
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘গত আট মাসে এ প্রচেষ্টা অভূতপূর্ব গতি অর্জন করেছে। এখন লক্ষ্য হলো সেই উদ্দেশ্য পূরণ করা—যেন ভবিষ্যতেও টিকে থাকে তা নিশ্চিত করা। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা কখনো ক্ষমতার পূর্ণ পৃথকীকরণের লক্ষ্যে এতটা কাছাকাছি আসিনি। যদি এই সুযোগ কোনোভাবে নষ্ট হয়, তবে তা বিচার বিভাগের মর্যাদা, অখণ্ডতা ও প্রাসঙ্গিকতায় জন্য চরম ক্ষতিকর হবে।’
সেমিনারে রংপুর জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, শ্রম আদালতে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, রংপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সরকারি কৌঁসুলিরা (পিপি) অংশ নেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।